মাহাথির মোবারক

  ০৪ জানুয়ারি, ২০২০

কাকের বাসায় কোকিলের ডিম

বাগানের ওই লম্বা সেগুনগাছটিতে কোকিলের ছোট্ট একটি বাসা আছে। বাসাটিতে বাস করে দুটি কোকিল পাখি। তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী।তাদের মাঝে অনেক সুন্দর সম্পর্ক। একসঙ্গে খায়-দায় ঘুরাফেরা করে আবার একসঙ্গে বাসায় ফিরে আসে। একে অপরকে ছাড়া কোনো কিচ্ছু বুজে না। একসঙ্গেই তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী বাগানের ওই সেগুনগাছটির ওই মগডালটিতে থাকে। আর তার পাশেই কড়ই গাছে থাকে একটি অহংকারী কালো কাক। কাকটি কখনো কোকিল দুটির ভালো চায় না। সারাক্ষণ বাগানের মাঝে কোকিলের দোষচর্চা করে বেড়ায়। কিন্তু কোকিল তাতে মোটেও রাগ করে না, কারণ নিন্দুকের নিন্দায় কান দিতে নেই, এটা তারা খুব ভালো করেই জানে। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে এক দিন বাগানের সব পাখির মেলা বসে আর সেখানে পাখিরা মিলে গান গাওয়াসহ নানা আনন্দ করে। প্রতি মেলায় কোকিল গান গায়, ময়ূরপাখি নাচ ধরে আর বানর মিয়া বাঁশি হাতে নিয়ে লাফালাফিতে ব্যস্ত থাকে। কোকিলের গান শুনে কাকের মনে খুব হিংসা জাগে। তার দাবি আজ থেকে কোকিল কোনো গান গেতে পারবে না, সে নিজে গান গাবে। বনের পশুরা কাল কাককে বেশ কয়েকবার গান গেতে দিয়েছে কিন্তু তার গলার কণ্ঠস্বর ভালো না বলে সবাই গান শোনা বাদ দিয়ে চলে যায়। তাই কাককে আর কখনো গান গেতে দেওয়া হয় না। তাই কাকের মনে হিংসা প্রতি হিংসার আগুন জ্বলে। সে কখনো কোকিলের গান শুনতে ইচ্ছুক না। কাক বারবার সব পাখির কাছে কোকিলের নামে নানা অভিযোগ করে কিন্তু সব পাখি কোকিল দুটিকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু পাখি দুটোর মনে অনেক কষ্ট? আজ অনেক দিন হয়ে গেল তাদের কোনো বাচ্চা-গাচ্চা নেই। তারা কোনো ডিম দেয় না। এ নিয়ে বনের অনেক পাখিই বিভিন্ন সমালোচনা করে। তাদের আশা, যখন তাদের ডিম আসবে, তখন বনের সব পাখিকে তাদের ডিম দেখাবে। এ নিয়ে কাকের সঙ্গে প্রতিদিন সকালবেলায় ঝগড়া হয়। দেখতে দেখতে বৈশাখ মাস চলে এলো। এখন চতুরদিকেই খুব বৃষ্টি বাদল হচ্ছে। হঠাৎ এক দিন কালবৈশাখী এসে তাদের বাসাটা ভেঙে দিল, সঙ্গে সঙ্গে ছেলে কোকিল পাখিটা বাসা থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেল। একসময় ছেলে পাখিটা আর ভালো হয়ে উঠল না, দিন দিন তার অবস্থা খুব বেশি খারাপ হতে লাগল। হঠাৎ এক দিন ছেলে পাখিটির মৃত্যু হয়ে গেল। কোকিলের মৃত্যুতে বাগানের সব পাখিই শোক প্রকাশ করল এবং অনেক আফসোস করল। কিন্তু কালো কাকটি কোনো দুঃখ প্রকাশ না করে সে আরো আনন্দিত হলো। তারপর থেকে সে মেয়ে কোকিলটিকে আরো বেশি অত্যচার করতে লাগল।

কিন্তু মেয়ে পাখিটি কাককে কোনো কিছু বলতে পারে না।

ছেলে পাখিটির মৃত্যুর কয়েক দিন পর মেয়ে কোকিলটি দুটি ডিম পারল। কোকিলের ডিম পাড়ার কথা শুনে কাক তো রেগে আগুন হয়ে গেল। যদি কোকিল বাচ্চা ফুটিয়ে ফেলে, তখন তো কাক আর কোকিলের সঙ্গে কোনো দিন ঝগড়া করতে পারবে না। তাই কাক মনে মনে ঠিক করে নিল, আজকেই কোকিলের ডিমগুলো চুরি করে আমার বাসায় নিয়ে আসব। সকালবেলা কোকিল যখন বাসা থেকে খাবারের জন্য বের হলো, ঠিক তখনি সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ঘূর্ণিঝড় উঠে গেল। কোকিল পাখিটি জলদি বাসায় ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে তার ডিমগুলো বাসা থেকে বের করে অন্য জায়গায় রেখে দিল। আর এদিকে বাতাসে কোকিলের বাসাটি ভেঙে নিচে পড়ে গেল। তখন কাক এসে দেখতে পেল কোকিলের বাসাটি ভেঙে নিচে পরে আছে আর তার পাশেই একটি ছোট গর্ত আছে। এই গর্তটি হলো একটি সাপের, তখন কাক ওই গর্তের ভেতর ডুকে দেখতে পেল ওখানে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ডিম আছে। কাক তখন মহাখুশি হয়ে এগুলোকে কোকিলের ডিম মনে করে। সাপের ডিমগুলো নিয়ে তার বাসায় রেখে দিল। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাপ যখন তার গর্তের ভেতর ডুকে তার ডিমগুলো দেখতে পেল না; তখন সে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগল। ছোটাছুটি করতে করতে সে কাকের বাসায় গিয়ে দেখতে পেল কাক তার ডিমগুলো ভেঙে তার মাঝে মলত্যাগ করছে। সাপ তখন পেছন দিক দিয়ে এসে সঙ্গে সঙ্গেই কাকের মাথায় কামড় দিয়ে তার ঘাড় মটকে দিল। তখন বনের সব পশু বুজতে পারল হিংসুটে ব্যক্তিদের অবস্থা এ রকমই হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close