দিপংকর দাশ

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৯

অকৃতজ্ঞ

এক পুকুরে বাস করত এক বিশালাকার শোল মাছ। যেমন বিশাল তার দেহ, তেমনি রাক্ষুসে তার স্বভাব। পুকুরের কোনো ছোট মাছ এই বৃহদাকার শোলের অত্যাচার থেকে রেহাই পায় না। যতই দিন যাচ্ছিল পুকুরে রাক্ষুসে শোলের অত্যাচার বেড়েই চলছিল। খুদে মাছগুলোর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। অনেক মাছ এই পুকুর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ার চিন্তা করছিল। কিন্তু কীভাবে যাবে, তা ভেবে পাচ্ছিল না। শুধু বর্ষাকাল ছাড়া এই পুকুর থেকে বেরোনোর কোনো উপায় ছিল না। পুঁটি, টেংরা, শিং, কৈ সবাই মিলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিরাপদে অবস্থান করার চেষ্টা করে। কিন্তু রাবণের রাজত্বে কী নিরাপদ স্থান বলতে কিছু আছে? সব ওই রাক্ষুসে শোলের আয়ত্তে। যতই নিরাপদ থাকার চেষ্টা করে না কেন, শোলের পেটে যেতেই হবে।

এক দিন সব মাছ টের পেল যে, আজকে অত্যাচারী শোল পুকুরে হুলস্থূল করছে না। কী হলো? শোল মামা কী তাহলে আজ ঘুমিয়ে আছে? জেগে উঠেনি? এসব ভাবতে থাকে সবাই। তাই দীর্ঘক্ষণ এরূপ শান্ত পরিবেশ দেখে সব মাছই নিরাপদ স্থান থেকে বেরিয়ে আসে। অনেকেই ভাবছে, এটা অত্যাচারী শোলের কোনো ছল নয়তো? যাই হোক, দেখা যাক কী হয়? সবাই বাইরে এসে একটু শ্বাস নিচ্ছিল। হঠাৎ ট্যাংরা ও শিং দেখতে পেল পানিতে লাল কী যেন ভাসছে। রহস্য উদ্ঘাটন করতে খানিকটা এগিয়ে যায় দুজনই। ট্যাংরা বলছে, আরে ভাই শিং, এসব তো রক্ত। শোল আবার কাউকে ভোজন বানাচ্ছে না তো?

উত্তরে শিং বলে, নারে ভাই। কোনো ঝামেলা আছে। শোল কাউকে সাবাড় করলে পুকুরে হুলস্থূল হতো। কিন্তু এত শান্ত মনে হচ্ছে। চল্ নিচে গিয়ে দেখি।

পুকুরের তলদেশে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় ট্যাংরা আর শিং। দেখে শোলের সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। ব্যথায় কাতরাচ্ছে সে। ট্যাংরা তখন বলে ওঠে, ও এবার বুঝ রাক্ষুসে শোল। অপরের ওপর অত্যাচার করে তুমি যে পাপ করেছো এই তার ফল। আজ তুমিই অত্যাচারের শিকার। তা এ অবস্থা কী করে হয়েছে তোমার?

ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে শোল বলে, ভাই ট্যাংরা এভাবে উপহাস করো না। কোনো মানুষ আমাকে শিকার করার জন্য বড়শিতে পুঁটি মাছ দিয়ে ফাঁদ পেতেছিল। আমি যেই ওই বড়শিতে লাগানো পুঁটি মাছ সাবাড় করতে যাই, অমনি শিকারি তার বড়শিতে হ্যাঁচকা টান দেয়। আমি বড়শিতে আটকে যাই। ছটফট করতে থাকি। আমার গলার এদিকটায় বড়শি ঢুকে যায়। খুব ব্যথা করছিল। খুব কষ্ট করে গায়ের জোরে আমি বড়শি ছিঁড়ে পুকুরে ফেরত আসি। কিন্তু আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। এখন যেভাবে রক্ত বের হচ্ছে মনে হয় আর বাঁচব না। তোমরা আমাকে বাঁচাও ভাই। আমি আর কখনো তোমাদের ওপর অত্যাচার করব না। আমাকে ক্ষমা করো আর এবারের মতো বাঁচাও।

শোলের এমন কথা শুনে শিং মাছের খুব কষ্ট লাগে। সে শোলকে বাঁচানোর জন্য ট্যাংরার কাছে অনুরোধ করে। ট্যাংরা প্রথমে রাজি না হলেও পরে সে রাজি হয়ে যায়। সব মাছকে ডাকা হয়। প্রথমে তারা মানা করলেও পরে শোলকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে সমর্থ জানায়। অবশেষে সবাই কোনো না কোনোভাবে শোলকে সুস্থ করার কাজে লেগে যায়। দু-তিন দিন চেষ্টার পর অবশেষে শোল কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ হওয়ার পর সে বুঝতে পারে তার পেটে চোঁ-চোঁ গুঁতো দিচ্ছে। পেটের ক্ষুধায় শোল পাগল হয়ে যায়। সে সামনে যাকে পায় তাকেই খেয়ে ফেলে। অবশেষে সে ট্যাংরাকেও খেয়ে ফেলে। শিং খুব অবাক হয় আর নিরাপদ স্থানে ছুটে যায়। সে ভাবতে থাকে, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। যার যে স্বভাব, সে তাই করবে। এক অকৃতজ্ঞ শোলকে বাঁচিয়ে এবার আমরাই বিপদের মুখে। এই অকৃতজ্ঞ শোলকে মেরে ফেলাই উচিত ছিল।

পাগল হয়ে পুকুরের সব মাছকে আক্রমণ করে সে? একসময় এসে আবার সেই বড়শির ফাঁদে পড়ে যায় অকৃতজ্ঞ শোল। এবার আর রক্ষা হয়নি তার। এক হ্যাঁচকা টানেই একেবারে শিকারির হাতে। শোলের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেল পুকুর। আর সব মাছই চিৎকার করে বলতে থাকে, অকৃতজ্ঞরা কখনোই কারো বন্ধু হতে পারে না। তাদের পরিণতিও খারাপ হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close