শফিকুল ইসলাম শফিক

  ০৫ অক্টোবর, ২০১৯

আদরের নাতি

নানা-নানির অতি আদরের নাতি রাশেদ। ছোটবেলা থেকেই সে নানির কাছে শহরেই থাকে। নানা-নানি তাকে খুব আদর-যতেœ বড় করে তোলেন। মা-বাবার সঙ্গে গ্রামে থাকে ছোট দুই ভাই। নানা রহমত আলী। পেশায় রংমিস্ত্রি। শহরে তার কাজের বেশ সুখ্যাতি আছে। নানির একমাত্র মেয়ে রাবেয়া। তার তিনটি ছেলে। নানির কোনো ছেলে নেই। নাতির মুখপানে চেয়ে নানা-নানির দিনটা ভালোভাবেই কেটে যায়।

কখনো কখনো নানার হাতে কাজ থাকে না। তখন বসে বসে দিন পার করতে হয়। তারা কষ্টে দিনাতিপাত করলেও রাশেদকে কোনো অভাব স্পর্শ করতে পারে না। নানা-নানি তার সব আবদার পূরণ করেন। রাশেদ মা-বাবার কাছে যেতেই চায় না। বছরে দুই ঈদে দুবার যায়। তখন দু-চার দিন বাড়িতে থাকে। ভাইদের সঙ্গে অনেক মজা করে।

রাশেদ মেধাবী ছাত্র বটে। আগের ক্লাসে বরাবরই ফার্স্ট-সেকেন্ড হতো। কিন্তু বড় হয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ নেই। দশম শ্রেণিতে পড়ছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। এখন পড়াশোনার জন্য তাকে প্রতিদিন বকাঝকা খেতে হয়। মাঝে মাঝে স্কুলেও যেতে চায় না। কিছুদিন আগে তাদের বাসায় এমএ পড়ুয়া ছাত্র একটি সাবলেট ভাড়া নিল। নানা-নানি তার কাছে প্রাইভেট দিলেন। মনে কিছুটা স্বস্তি পেলেন। নাতিকে নিয়ে আর বিপা?কে থাকতে হয় না।

রাশেদ ভালোয় ভালো দু-তিন মাস পড়ল। মাস্টার ভাবলেন, এবার হয়তো তার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। রাশেদ গণ কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেল। দীর্ঘ এক মাস পার হয়ে যায়। তবু শহরে আসতে চায় না। নাতিকে ছাড়া নানা-নানির এক মুহূর্তও কা?টে না। মাস্টারকে নানা-নানি ছেলের মতোই ভালোবাসেন। একই সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করেন। এক দিন নানি মাস্টারকে নিয়ে রাশেদদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলেন। নানি রাশেদকে নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু রাশেদের একই জিদ সে আসবে না। অবশেষে বলল, আমি কম্পিউটার পেলে পড়ব। নইলে কোনো দিন শহরে যাব না। নানি বাধ্য হয়ে রাজি হলেন। তবে এখন নয়, পরীক্ষার পর অবশ্যই কম্পিউটার কিনে দেব।

রাশেদ সেদিন এলো না। কয়েক দিন পর আসবে। নানি মাস্টারকে নিয়ে চলে এলেন। তার মেয়ে রাবেয়ার মুখে এক দিন রাশেদের অবনতির কথা জানতে পারলেন। রাশেদ পাড়ার দুষ্টু ছেলেদের সঙ্গে মিশল। স্কুলের আশপাশে সারা দিন ঘুরে বেড়ায়। কথাটা তার মা-বাবার কা?নেও পৌঁছে গেল। নানি রাশেদকে আবারও ডাকলেন। বললেন, তুই শিগগিরই শহরে আয়। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। মন দিয়ে পড়, পাস কর। সবাই?কে দেখিয়ে দে। আমার মুখটা উজ্জ্বল কর। তোর আবদার পূরণ করব। অনেক ভেবেচিন্তে রাশেদ শহরে এলো। এখন সে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। নানা-নানি তাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close