শাহেদ জাফর

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পালিয়ে গেল ভূত

বাজার করতে করতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল শফিকের। মা যত বড় বাজারের লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিলেন হাতে। তাড়াহুড়ো করেও লাভ হলো না। শীতের দিন। সূর্যটা ডুবে গেছে আগে ভাগেই। অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশে। এখন এই অন্ধকারে একা একাই ফিরতে হবে বাড়িতে। কেন যে দেরি করে বাজার করতে এসেছিল সে! নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে তার। মা অবশ্য বারণ করেছিল কয়েকবার। শোনেনি শফিক। সাহস দেখাতে গিয়েছিল। এখন আফসোস হচ্ছে খুব! গ্রামের রাস্তা। তার ওপর শীতের রাত। অন্ধকার নামলে এমনিতেই রাস্তা নির্জন হয়ে যায়। বাজার থেকে বাড়ি দুই কিলোমিটারের মতো দূরের গ্রামে। বড় সমস্যাটা হচ্ছে ফেরার পথে একটা গহিন জঙ্গল পেরিয়ে যেতে হবে।

সেই জঙ্গলে নাকি ভূত থাকে। ভূতগুলো আবার বেরসিক! ভয় তো দেখায় আবার বাজারের ব্যাগ নিয়েও গায়েব হয়ে যায়। এরকম বহু গল্প শুনেছে সে আশপাশের গ্রামের মানুষের কাছে। আজকে কি তাহলে তার নিজের পালা! শফিক মনে মনে ভাবতেই তার গা শিউরে উঠল। শফিকের এখন রাগ হচ্ছে রাস্তাটা প্রথম যে বানিয়েছিল তার ওপর। কেন যে গাধাটা এই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাস্তাটা করতে গিয়েছিল ! আর কী জায়গা ছিল না এ অঞ্চলে!

এসব ভেবে তো আর বাজারে বসে থাকলে হবে না। যেতে হবে। বাড়িতে ফিরতে হবে একা একাই। আর সময় নষ্ট না করে শফিক এগোতে থাকল বাড়ির দিকে। ঠান্ডা বাতাস বইছে উত্তর দিক থেকে। সন্ধ্যার পর শীত পড়েছে খুব।

শফিক তার কালো রঙের চাদরটা সারা শরীর আর মাথায় পেঁচিয়ে শুধু চোখ দুটো বের করে হাঁটতে থাকল।

হাঁটতে হাঁটতে কখন যে সেই জঙ্গলের ভেতর এসে পৌঁছে গেছে, শফিক বুঝতে পারেনি। খেয়াল করতেই একগাদা ভয় এসে দানা বাঁধতে শুরু করল বুকের ভেতর।

কী হবে এখন?

যা হয় হবে।

হবে না কিছুই।

যদি হয় !

হলে হবে।

খুব সাহস দেখাচ্ছিস?

দেখাচ্ছি। তোর কী?

নিজের মনের ভেতর শফিকের এ রকম অসংখ্য প্রশ্ন আর উত্তর ঘুরপাক খাচ্ছে। এ জঙ্গলে যেহেতু কেউ আর সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না, তাই ভয় পেয়ে লাভ নেই। সাহস আনতে হবে বুকে। নিজেকেই নিজে বোঝাল সে। হাঁটতে হাঁটতে শফিকের মনে হলো রাস্তার ঠিক মাঝখানে একটা কালো ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। একটু একটু নড়াচড়াও করছে ছায়াটা। এই তাহলে ভূত। অবশেষে সত্যি সত্যিই সামনে ভূত এসে হাজির। শফিক ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। সারা শরীর কাঁপছে তার। কোথায় গেল এখন তার সাহস। বড় বড় সাহসের কথা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল তাহলে! এখন দৌড়ে পালাতে গেলেও বিপদ। ঘাড় যদি মটকে দেয় ভূতটা। তারচেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকাই ভালো।

একটু পরে শফিকের কানে অদ্ভুত একটা গোঙানির শব্দ ভেসে এলো। শব্দটা আসছে দূরে দাঁড়ানো ছায়ামূর্তিটার দিক থেকে। ছায়াটা আরো বেশি নড়াচড়া করতে করতে এবার চিৎকার করে বলে উঠল, বাবারে ভূত ! বাচ্চা ভূ-ভূ-ভূ-ভূত! শফিক বুঝল না কে ভূত। কেনইবা ছায়ামূর্তিটি ভূত ভূত বলে চিৎকার করছে। তাহলে ভূত কি অন্য কেউ! কোথায় সে? ছায়ামূর্তিটি এবার শফিকের দিকেই হাতজোড় করে বলল, আর এসব কাজ করব না ভূত মামা। মানুষকে ঠকাব না। ভূত সেজে মানুষকে অনেক ভয় দেখিয়েছি। তাদের বাজারের ব্যাগ কেড়ে নিয়েছি। এসব আর করব না। এই কানে ধরলাম। এবারের মতো ছেড়ে দেন ভূত মামা।

শফিক এবার বুঝতে পারল ছায়ামূর্তিটি তাকেই ভূত মনে করছে। মানুষই তাহলে ভূত সেজে এত দিন ভয় দেখাত। শফিক গলার স্বর একটু মোটা করে বলল, ঠিক বলছিস তো ? আর যদি ভয় দেখিয়ে মানুষ ঠকাতে দেখি তোকে তাহলে কিন্তু তোর আর রক্ষা নেই। যা এখান থেকে। আজ ক্ষমা করে দিলাম। আর যেন এখানে না দেখি। ছায়ামূর্তিটি যেন হাঁফ ছেড়ে নিমিষেই পালিয়ে গেল দৌড় দিয়ে। নকল ভূতকে তাড়িয়ে শফিক বাড়ি ফিরে এলো অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা নিয়ে। ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শফিক নিজেকে নিজেই দেখে অবাক হলো। তাকে সত্যিই ভূতের মতো লাগছে। কালো চাদর সারা গায়ে মাথায় জড়িয়ে সে যেন একটা বাচ্চা ভূত হয়ে গেছে ! তাকে দেখতে লাগছে চাদরে ঢাকা আসল ভূতের মতো ! যে ভূতের ভয়ে পালিয়ে গেছে জঙ্গলের

নকল ভূত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close