হিমেল আহমেদ

  ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

রুদ্রের সাদা বিড়াল

কয়েক দিন হলো দেখছি রাত হলেই বাসার সবাই তাদের রুমে লাঠি ও ঝাড়ু নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করে! খাটের নিচে, সুটকেসের পিছে কিংবা স্টোররুমে। সব জায়গায় লাঠি ও ঝাড়ু দিয়ে আঘাত দিচ্ছে। বেশ শব্দ হয়, তাই বিরক্ত লাগে। সবেমাত্র রুদ্র পড়াশোনা শেষ করে টিভিতে খেলা দেখবে বলে টিভি চালু করেছে। তখনি আম্মু আর ভাইয়া লাঠি নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। রুদ্র তখনি টিভির ভলিউম বাড়ায় দেয়! সারা বাড়ি যখন বাড়াবাড়ি শেষ, তখন ভাইয়া রুদ্রের রুমে এলো। হাতে তার একটা লাঠি! এই লাঠিটা রুদ্রের বড় ভাইয়া কিনে এনেছিল। গতবার তার কলেজ থেকে পিকনিকে গিয়েছিল ময়মনসিংহ গারো পাহাড়। সেখানে নাকি লাঠি সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ে চলাফেরা করতে হয়। যদি বনদস্যুরা আক্রমণ করে বসে!! ভাইয়া এই লাঠিটা তার খাটের কাছেই রাখে। রাতবিরাতে যদি চোর আসে? তাহলে কাজে আসবে। ভাইয়া যেভাবে লাঠি হাতে তেড়ে আসল একটুও ভয়ই পেল রুদ্র! টিভির ভলিউম বাড়িয়েছে এজন্য রাগে মারতে এলো না তো! রুদ্র তখন খাটের ওপর বসে হাতে প্লেট নিয়ে ভাত খাচ্ছে আর টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছে।

ভাইয়া রুমে ঢুকেই আগে খাটের নিচে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারল। তারপর ড্রেসিং টেবিলের পিছে। অমনি ড্রেসিং টেবিলের পেছন থেকে একটা সাদা বিড়াল দৌড়ে রুমের বাহিরে পালাল! রুদ্র শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল! ভাইয়া বললেন, এই দেখ এই বিড়ালটা আজ তোর রুমে ঢুকেছে। সারা বাড়ি হন্ন হন্ন করে খুঁজলাম। আর এই বেটা তোর ড্রেসিং-এর পিছে লুকিয়েছে। বিড়াল দেখে মা এলেন এবং বলতে লাগলেন, কিরে কই ছিল বিড়ালটা? ভাইয়া উত্তর দিল এই রুমে। রুদ্র মা ও ভাইয়া উভয়কে প্রশ্ন করল যে, বিড়াল আমার রুমে ঢুকেছে তাতে কি হয়েছে? তোমরা এভাবে লাঠি, ঝাড়ু নিয়ে তাড়াচ্ছ কেন? মা বললেন আরে তাড়াব না তো কি করব? এই কয়েক দিন আগেই বিড়ালটা আস্ত একটা মাছের টুকরো খেয়ে ফেলেছিল। আর এখন তো জায়গা খুঁজছে বাচ্চা দেওয়ার জন্য। রুদ্র অবাক হয়েই জিজ্ঞাস করল তুমি কীভাবে বুঝলে বিড়াল বাচ্চা দিবে? মা বললেন, তার পেট মোটা। বাচ্চা দেওয়ার সময় এলেই নিরাপদ জায়গা খুঁজে বেড়ায়। আর আমাদের কারো রুমে যদি বাচ্চা দেয়, তাহলে বুঝ কত ঝামেলা হবে? সে মাকে বললÑ মা, বিড়ালের বাচ্চা আমার খুব ভালো লাগে। আমি পালব। বাচ্চা দিক বিড়ালটা। মা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন! পাগল হলি নাকি! কোনো বিড়ালটিড়ালের আস্তানা করতে দিব না আমি। মাছ খেয়ে নেয়, দুধ খেয়ে নেয়। তরকারির পাতিলে মুখ দেয়। ঘরের কোনায় পায়খানা করলে সারা ঘর গন্ধ করে। নাহ! বিড়াল একদমই পালতে দিব না আমি। এই বিড়ালের জন্য মাছ খাওয়া যায় না। কই থেকে গন্ধ পেয়ে চলে আসে বিড়ালটা! কত সুন্দর করে ইলিশ মাছটা ভেজে ছিলাম। সবটাই খেয়ে ফেলেছে সে। রুদ্র মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারে না। ভাইয়াও মায়ের পক্ষ নেয়! কি আর করা বাসায় রুদ্র ছোট। ক্লাস সিক্সের ছাত্র সে। কিছুদিন হলো সাদা বিড়ালটা বাসায় আসা-যাওয়া করে। রুদ্র অনেকবার খাবার দিয়েছে তাকে। তাই হয়তো রুদ্রের রুমেই আশ্রয় নিতে চেয়েছিল। মনে মনে ভাবতে লাগল রুদ্র এই বাসায় তাকে হয়তো কেউ ভালোবাসেই না। এই বিড়াল তার এত পছন্দের কিন্তু মা কিছুতেই এটা বুঝেন না। সেদিন রাতে বিছানায় গিয়ে সহজে ঘুম আসেনি তার। বারবার বিড়ালটার কথা ভাবছিল রুদ্র। মা বলেছেন বিড়ালটা বাচ্চা দিবে। এখন কোথায় যে আছে কি অবস্থায় আছে! বিড়ালের জন্য রুদ্রের খুব মায়া হতে লাগল। হটাৎ মধ্যরাতে বিড়ালের মিউ মিউ ডাক কানে এলো। রাতের নিস্তব্ধতায় বেশ ভালোই আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ঘড়িতে সময় ২ টা। বিড়ালের ডাকটা যেন তাকে ঘুমাতেই দিচ্ছে না। আর বিড়ালটাও কেমন! মিউ মিউ করে যাচ্ছে তো যাচ্ছে! চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে রুদ্র। আর ব্রেন তখন উল্টোপাল্টা ভাবতে শুরু করেছে। বিড়ালের তো পেটে বাচ্চা, হয়তো তার ক্ষুধা পেয়েছে। হয়তো বাচ্চা প্রসব করেছে আর বাচ্চাদের বাঁচানোর জন্য সাহায্য চাইছে। কোনো কুকুর বাচ্চাদের খেয়ে নেয়নি তো? এসব ভাবতে ভাবতে রুদ্র কখন যে ঘুমিয়ে গেল টেরই পেল না! সকালে মা এসে ঘুম ভাঙালেন। দেখি সকাল ৮টা! ঘুম ভাঙতেই রাতের কথা মনে পড়ে গেল। বিড়ালটা ডাকছিল। কি যে হলো তার। বেঁচে আছে, কী নেই? খুবই আফসোস হলো রুদ্রের। কিন্তু রুদ্রের গায়ে কাঁথা দিল কে? সে তো কাঁথা নিয়ে ঘুমায়নি। আর আজকের আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা। বেশ কয়েক দিন হলো প্রচন্ড গরম। মাকে জিজ্ঞাস করায় মা জানালেন ভোররাতে প্রচুর বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় তোর গায়ে কাঁথা আমি দিয়েছি। ঝড়বৃষ্টির কথা শুনে বিড়ালটাকে নিয়ে রুদ্রের টেনশন আরো বেড়ে গেল। ঝড়বৃষ্টির রাতে বিড়ালটা বাহিরে ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে মারা গেল কি না! আমরা মানুষরা কত ভালো। ঝড়বৃষ্টি হলেও নিজের ঘরে আশ্রয় নিতে পারি। কিন্তু বেচারা বিড়ালটা! তাড়াতাড়ি করে জানালা খুলে দেখল বিড়ালটা আছে কি না! নাহ নেই। ব্রাশ না করেই আগে বাসার বাহিরে এসে বিড়ালকে খুঁজতে লাগল সে। কিন্তু কোথাও পেল না। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল তার। গোমরা মুখ নিয়ে বাসায় ঢুকতেই রুদ্র দেখতে পায় বারান্দার কোনায় বড় কাগজের চারকোনা কাটুনে অই বিড়ালটার সঙ্গে ৩টা সাদা বিড়ালের ছানা। বিড়াল ও তার বাচ্চাদের দেখে মুখে হাসি ফুটল রুদ্রের। মা দেখি তাদের খাবার দিচ্ছেন। মাকে প্রশ্ন করায় মা বললেন। ভোররাতে বৃষ্টিতে বিড়ালটা বাচ্চা দিয়েছে। আমি যখন ফজরের নামাজ পড়তে উঠেছিলাম। তখন দেখি বারান্দার বাহিরে বিড়ালটা ডাকছে। আর বাচ্চাগুলো ঘাসফুলের টবে ছিল। বৃষ্টি দেখে আমি ফুলের টবসহ বাচ্চাগুলোকে বারান্দায় নিয়ে আসি। তোর বাবা বাচ্চাগুলোকে এই কার্টনে রাখেন। বিড়ালগুলোকে দেখে খুব ভালো লাগল। আমার মা অনেক ভালো। আসলে সবার মায়েরাই অনেক ভালো। সেটা মানুষের হোক অথবা পশু। রুদ্র কথাগুলো মনে মনে ভাবতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close