মো. জাহাঙ্গীর আলম

  ২৪ আগস্ট, ২০১৯

তিন বন্ধুর ভাবনা

যায়েদ, মামুন, রুবেল প্রায় সমবয়সি। তারা পড়াশোনা করে এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করে। কোনো সমস্যা না থাকলে বা ব্যস্ততা না থাকলে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করে। ওদের মসজিদের নাম গছিডাঙ্গা হাজীপাড়া জামে মসজিদ। হাজীপাড়া যুবসমাজ খুবই ভালো। গত বছর মসজিদ উন্নয়নকল্পে এক বিশাল তাফসির মাহফিলের আয়োজন করে। সেই মাহফিলে যায়েদ, মামুন ও রুবেলের অনেক অবদান রয়েছে। মাহফিলের যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ টাকা জমা থাকে। সেই টাকা দিয়ে গছিডাঙ্গা হাজীপাড়া জামে মসজিদ দোতলা ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করে। মোটামুটি মসজিদের কাজ ভালোই চলছে এবং আগের চেয়ে মসজিদের মুসল্লিও বাড়ছে। নতুন মুসল্লির মধ্যে রুবেল অন্যতম। ছেলেটা খুব ভালো। মামুন ভাই শান্ত মনের মানুষ। বাইরে পড়াশোনা করে। পড়াশোনা শেষ করে বাসায় এসেছে। আর যায়েদ মাদরাসার ছাত্র। গছিডাঙ্গা হাজীপাড়া জামে মসজিদ চারদিকে ওয়াল করা আছে। মোটামুটি ভালোই এরিয়া আছে। সামনে অনেক জঙ্গলঝাড়ে ছেয়ে নিয়েছে। যায়েদ প্রায়ই মামুন ও রুবেলকে বলে চলেন আমরা তিনজন মিলে মসজিদের সামনের জায়গাটা পরিষ্কার করি। একাজ করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ রাসুল সা. বলেছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। এই কথা শুনে মামুন ভাই ও রুবেল বলল, আচ্ছা ঠিক আছে আমরা আগামীকাল সকালবেলা পরিষ্কার করব, ইনশাআল্লাহ। পরদিন ফজরের নামাজ পড়ে কথা হলো আমরা বাসায় গিয়ে কিছু খেয়ে এসে কাজ শুরু করব, ইনশাআল্লাহ। সকাল ৮টায় যায়েদ, রুবেল ও মামুন ভাই মিলে মসজিদের সামনের জঙ্গলঝাড় পরিষ্কার করে। জঙ্গল পরিষ্কার শেষে মসজিদের পাশেই শাহ আলম ব্যাপারীর বাড়ি। শাহ আলম ভাই তিনিও নতুন মুসল্লি। তিনিও মসজিদের যেকোনো কাজে সহযোগিতা করেন। যায়েদ, মামুন, রুবেল পরামর্শ করে মসজিদের সামনে তো অনেক জায়গা পরে আছে আমরা যদি কিছু ফলের গাছ লাগাই তাতে অনেক ভালো হবে। বলতে বলতেই যায়েদ একটা হাদিস শুনিয়ে দিলÑ রাসুল সা. বলেছেন, মুসলমান যদি কোনো ফলফলান্তির গাছ লাগায়, সেই গাছ থেকে পশুপাখি বা মানুষ চুরি করে খেলেও যে গাছ লাগাবে তার আমলনামায় সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব পেতেই থাকবেন। যায়েদের কথা শোনার পর মামুন ভাই ও রুবেলের মনে আরো আগ্রহ জাগে। তাইতো প্রয়োজনে আমাদের টাকা দিয়েই কিছু ফলের গাছ লাগাই। কিন্তু কীভাবে কোন সাইটে লাগাব তার পরামর্শ নিতে শাহ আলম ভাইয়ের কাছে পরামর্শ চাই। তিনি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর বললেন, তোমরা তো খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছো। আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা গাছ লাগাও, আমিও সঙ্গে আছি। মসজিদের সামনের জঙ্গলঝাড় পরিষ্কার করার পর এত সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে, আমাদের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে আর আমাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করছে। আজ যেন মনে হচ্ছে, আমাদের এই মসজিদটা নতুন করে সাজানো হয়েছে।

তার পরদিন সকালবেলা মামুন ভাই আর আমি চলে যাই নার্সারিতে। সেখানে গিয়ে আমরা নার্সারির মালিককে মিষ্টি সুরে সালাম দেইÑ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আঙ্কেল? ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। তোমরা কেমন আছ? আলহামদুলিল্লাহ, আমরাও ভালো আছি। কী গাছের চারা লাগবে তোমাদের বলো? আসলে আঙ্কেল আমাদের ভালো মানের কিছু ফলের চারা দিতে হবে। আচ্ছা তোমরা কোথায় লাগাবে বাসায় নাকি? আঙ্কেল এগুলো বাসায় লাগাব না, আমাদের মসজিদের সামনে লাগাব। খুব ভালো হবে। আমিও তোমাদের সঙ্গে কিছু ফলের চারা দিয়ে তোমাদের মহৎ কাজে অংশ নিয়ে চাই। অবশ্যই আঙ্কেল। ওর্ডার দিয়ে আসি ভালো মানের কিছু আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পেঁপে, বরই ও ফুলের চারা। সেদিন রাতেই মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বৃষ্টি হয়েছে। চারাগাছ লাগানো আরো সুবিধা হয়।

মসজিদের সামনে বিভিন্ন আইটেমের ফুল ও ফলের চারা লাগানোর পরে এত সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে জান্নাতের বাগান। আমাদের এই কান্ড দেখে সবাই আমাদের স্বাগত জানায় এবং বলে তোমরা খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছো। তোমাদের ভাবনা দেখে সত্যি আমরা আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত। তোমরাই আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তোমরাই পারবে জাতির ভবিষ্যতে পরিবর্তিত পরিবর্ধিত করতে এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে। তোমরা হলে বর্তমান সমাজের উন্নত মডেল। গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই। দোয়া করি তোমরা অনেক বড় হও, আমিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close