ফারুক হোসেন সজীব

  ২২ জুন, ২০১৯

ডিজনি ও মিকি মাউসের গল্প

ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা তো নিশ্চয় মিকি মাউসের নাম শুনেছ তাই না? একসময়ে ভীষণ সাড়া জাগিয়েছিল এই মিকি মাউস! এনিমেটেড শিশু চলচ্চিত্রের কথা যদি বলি, তাহলে কিন্তু ডিজনি আর মিকি মাউসের কথাই সবার আগে মনে পড়বে! এটা ঠিক, সেই সময়ের কথা বলছি, যখন কোনো এনিমেটেড ফিল্ম ছিল না, এখন যেমন বিভিন্ন কার্টুন সিরিজে মুভিগুলোতে বিভিন্ন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয়! কিন্তু তখন এসবেই কিছুই ছিল না! অর্থাৎ তখন চলচ্চিত্রে শুধু জীবন্ত মানুষ আর পশুপাখি জীবজন্তুদের ব্যবহার করা হতো! কিন্তু মানুষ যেন এর চেয়েও বেশি কিছু দেখতে চাচ্ছিল! শিশুরাও তাদের উপযোগী কিছু দেখতে না পেয়ে যেন বিরক্ত হয়ে উঠেছিল! তারা যেন কোনো কিছুতেই অবাক হতো না!

ঠিক অমন সময়েই এগিয়ে এলেন ওয়াল্টার ডিজনি! তিনি সেই সময়ের একজন জগদ্বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছিলেন! তিনি চিন্তা করলেন, কীভাবে ছবি এঁকে সেগুলোকে ক্যামেরার সাহায্যে এনে অনেকটা প্রজেক্টরের সাহায্যে ভালো কিছু তৈরি করা যায়! তাই তিনি এঁকে ফেললেন, মিকি মাউসের বিখ্যাত সিরিজ! একের পর এক তার সেই আঁকা ছবিগুলো জুড়ে জুড়ে তিনি তৈরি করে ফেললেন মিকি মাউস বা মিনি মাউস! সে অনেক দিন আগের কথা! তাও ধরো ১৯০১-১৯৬৬ সালের দিকের কথা বলছি তোমাদের।

তিনি কিন্তু বেশ কিছু তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। তার মধ্যে ¯েœা হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভন ডোয়ার্ফস, ফ্যান্টাসিয়া, সিলি সিমফনিজ! তবে সবগুলোই কিন্তু জগৎবিখ্যাত তথ্যচিত্র হয়েছিল!

ওয়াল্টার ডিজনি চিন্তা করলেন, অনেক তো হলো শুধু মানুষ আর জীবজন্তুদের নিয়ে কারবার! আর কত দিন? সেই ভাবনা থেকেই তিনি সত্যিকারের মানুষ আর জীবজন্তুদের বাদ দিয়ে তার আঁকা ছবির সাহায্য চলচ্চিত্রের গল্প সাজাতে বসলেন!

শুনে অবাক হবে, ডিজনি কিন্তু তার সেই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যতটা সম্ভব সেই সময়কার আধুনিক সব সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলেন। সেগুলো দেখলে মনে হবে যেন, ফিরে গেছি সেই আদিকালের জিট্টোপের যুগে! ভাবা যায়?

তেমনি সেই সৃষ্ট চরিত্রগুলোর একটি হলো-মিকি মাউস আর মিনি মাউস! তবে আগেভাগেই বলে রাখি ওগুলো কিন্তু সত্যিকারের ইঁদুর নয়! ওগুলো তো ছিল শুধু আঁকা ছবিমাত্র। কিন্তু ডিজনি তার সেই আঁকা ছবি দিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সমগ্র বিশ^বাসীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল!

মি. হর্নার জিট্রোপ যেমন একটা ঘোড়া ছুটে যাওয়ার ভঙ্গির স্টেপ বাই স্টেপ ছবি এঁকে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। মিকি মাইস ছবির এই সৃষ্টিকর্তা ডিজনিও ঠিক হর্নারের মতোই কাজ করেছিলেন। এক একটি ছবি এঁকে পুরো পৃথিবীকেই অবাক করে দিয়েছিলেন। ডিজনি মিকি মাউসের এমন লাখ লাখ ছবি এঁকেছিলেন। তারপর তিনি সেই ছবিগুলো ধাপে ধাপে সাজিয়ে ক্যামেরায় উঠিয়ে প্রজেক্টরের সাহায্যে অনেকটা চলমান আর দ্রুতগতির ছবি দেখালেন। মানুষের খালি চোখগুলো যেন তা ধরতেই পারল না! মিকি মাউস দেখে তাদের মনে হতে লাগল আরে! হাতের আঁকা ছবিগুলো দেখি সত্যিই চলাফেরা করছে?

শুনে অবাক হবে বৈকি! সেই সব ছবিগুলোর প্রত্যেকটি ভঙ্গির জন্য আলাদা আলাদা ছবি আঁকতে হয়। একটা সিনেমা উপযুক্ত চিত্র আঁকতে প্রায় ৩০০ চিত্রকরকে ৩ বছর ধরে একাধারে পরিশ্রম করতে হয়। ওয়াল্টার ডিজনি তো একবার এক সেমিনারে সবার সামনেই বলে দিলেন যে, যদি তাকে একাই এই ছবিগুলো আঁকতে হতো তাহলে তার সময় লেগে যেত প্রায় ২৩০ বছর।

ওসব ছবি আঁকা অনেক কঠিক ছিল, অনেক ধৈর্যের দরকার পড়ত। এক সিরিজ ছবি আঁকতে হলে সেলুলয়েডের শিটে তাদের ট্রেস করে নিয়ে রং লাগাতে হত। তারপর পরপর সাজাতে হয়। অমন একটি ফিল্ম বানাতে প্রায় ১ বছরের বেশি সময়ও লেগে যেত।

এখনকার আধুনিক যুগে যেমন এনিমেটেট মুভি কিংবা মোশান গ্রাফিকসের এনিমেশান বানানো হয়। ঠিক তেমনি ওয়াল্টার ডিজনি তিনি তৈরি করেছিলেন, জীবন্ত ছবি!

ডিজনি আরো একটি আশ্চর্য কাজ করেছিলেন, তা হলো ডিজনি ল্যান্ড নামের একটা প্রকান্ড রুপকথার বাগান তৈরি করেছিলেন! এই ডিজনি ল্যান্ড অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত।

প্রায় ১০৫ একর জমির ওপর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেই রুপকথার আশ্চর্য বাগানটি তিনি তৈরি করেছিলেন। জেনে অবাক হবে কী নেই সেই বাগানে! বাগানের মধ্যে আছে কেল্লা, মাঠ, নদী পুকুর, বন, বলতে পার রূপকথার অ্যাডভেঞ্চার গল্পের প্রায় সব চরিত্রগুলোকে তিনি তাঁর বাগানে এনে বসিয়েছিলেন! পরী, জলদস্যু, কুমির, হিপ্পো বা হিপোপটেমাস, গন্ডার ইত্যাদি!

তবে কেউ যদি আফসোস করে বলে, ইস! এই বাগানের পুরোটাই যদি একটু ঘুরে ঘুরে দেখতে পারতাম?

তা হলে বেশ হতো! তোমাদের বলে রাখি অমন আফসোস করার কিচ্ছু নেই! সে ব্যবস্থাও ঢের আছে! যেমন ক্ষুদে রেললাইনের ব্যবস্থা আছে, আরো আছে পানিতে চলা নৌকার, আর নৌকোগুলোও কিন্তু সেকালে অনেকটা এস্কিমোদের পরের জাতিদের মতো বলা যায়! নৌকাগুলোতে চাকা লাগানো আছে! চাকা ঘুরে ঘুরে পানিতে নৌকা চলতে থাকে! আর সেকালের নাবিকদের মতো অ্যাডভেঞ্চার যত জাহাজ! আরো কত্ত কী যে আছে, তার কী কোনো ইয়েত্তা আছে?

এই রূপকথার বাগানটি কিন্তু ১৯৫৫ সালে খুলে দেওয়া হয়! শিশু, বৃদ্ধা সবার জন্যই রুপকথার সেই ডিজনি ল্যান্ডটি অতি আশ্চর্য আর বিস্ময়কর একটি জায়গা বলা যায়!

তুমি যদি সেই বাগানে একবার ঢুকতে পার তোমার কেবলি মনে হবে যে, আরে! আমি তো সেই ১৮০০ সালে ফিরে গিয়েছি! অদৃশ্য কোনো টাইমমেশিনের পেছনে কাজ করেনি তো? আসলে কিন্তু এরজন্য ওয়াল্টার ডিজনির তৈরি ডিজনি ল্যান্ডের কারসাজিই মূলত দায়ী! ডিজনিকে আবার ভুল বোঝান যেন? তোমাদের আমি আগেভাগেই বলে দিলাম কিন্তু!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close