মঞ্জুর মোর্শেদ রুমন

  ০৮ জুন, ২০১৯

নতুন জামা-কাপড়

খোকন ও খুকু দুই ভাইবোন। খোকন পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে আর খুকু পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে দুজনই লেখাপড়ায় ভালো। তাদের বাবা আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় ছোট একটা চাকরি করেন। আর মা সায়েরা বানু একজন গৃহিণী। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। মাসের প্রথমে নিজের খরচের জন্য কিছু রেখে অল্প কিছু টাকা খোকন-খুকুর মা সায়েরা বানুর হাতে তুলে দিতে পারে আলতাফ মাহমুদ। এই টাকার অর্ধেকই চলে যায় আলতাফ মাহমুদের প্যারালাইসড বাবার ওষুধ কিনতে। বাকি টাকা দিয়ে খোকন-খুকুর পড়ালেখা, প্রাইভেট খরচসহ পারিবারিক অন্যান্য খরচ মেটাতে হয় সায়েরা বানুকে। প্রতি বছরই খোকন-খুকু সম্পূর্ণ নতুন জামা-কাপড় পায় না। যেমন খোকন নতুন শার্ট পায় তো প্যান্ট পায় না। খুকু জামা পায় তো, জুতা পায় না। এ নিয়ে তাদের দুঃখের শেষ নেই। তাদের মা-বাবাও নীরবে চোখের পানি ফেলেন। কিন্তু উপায় নেই। খোকন-খুকু মায়ের কাছে বায়না ধরে। মা, এবার ঈদে কিন্তু আমাদের পুরো নতুন জামা-কাপড় চাই। মা বলেন, ঠিক আছে খোকন-খুকু। তোদের বাবাকে বলব যেন তোদের দু ভাইবোনের জন্য নতুন জামা কাপড় নিয়ে আসে, কিছু যেন বাদ না যায়। দেখিস, তোদের বাবা আসার সময় তোদের জন্য নতুন জামা-কাপড় নিয়েই ফিরবে। খোকন বলে, তাই যেন হয়। এখন রমজান মাস। খোকন-খুকুর স্কুল বন্ধ। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে কখন রোজা শেষ হবে, বাবা তাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরবে। সেগুলো পরে তারা ঈদগাহে যাবে। তাদের অপেক্ষার প্রহর যেন আর ফুরোয় না। এদিকে রোজার মাঝামাঝিতে খোকন-খুকু মোবাইলে তাদের বাবাকে নতুন জামা-কাপড় কেনার কথা বলে দিয়েছে। এর মধ্যে দেখতে দেখতে রোজা প্রায় শেষ। বাবাও ইতোমধ্যে কেনাকাটা শেষ করলেন। খোকনের জন্য জিন্স প্যান্ট, শার্ট, জুতা আর খুকুর জন্য টুকটুকে লাল জামা, জুতা। এবার বাড়ি ফেরার পালা।

আজ ২৬ রোজা। আজ অফিস শেষ করে আলতাফ মাহমুদ বাড়ির দিকে রওনা দেবেন। মানে বাড়ি আসতে আসতে পরদিন সকাল। খুব সকালে দুই ভাইবোন ঘুম থেকে ওঠে। কিছুক্ষণ পরই বাবা আসবে। তাই তারা তাদের বাবার পথের পানে চেয়ে রইল। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলল। কিন্তু তাদের বাবা এখনো বাড়ি এসে পৌঁছেনি। দুপুর থেকে আলতাফ সাহেবের মোবাইলে কল দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবারই বন্ধ বলে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা না। এদিকে খোকন ও খুকিও পায়চারি করছে কখন তাদের বাবা নাম ধরে ডাকবেÑ এই আশায়। এমন করতে করতে খোকন-খুকু একসময় বাড়ির উঠান পেরিয়ে একটু সামনে আগায়। রাস্তায় চোখ রাখতেই দেখে উঁচু কি যেন তাদের বাড়ির দিকে আনা হচ্ছে এবং সঙ্গে অনেক মানুষের জটলা। খোকন-খুকু দৌড়ে বাসায় গিয়ে বিষয়টা তাদের মাকে জানাল। সায়েরা বানু ছেলেমেয়ের কথায় বেরিয়ে আসতেই দেখে একটা খাটিয়া বাড়ির উঠানে রাখা। সায়েরা বানুর আর কোনো কিছু বুঝতে বাকি রইল না। চিৎকার দিয়ে বলল, ওরে খোকন-খুকি। এটা তো আর কেউ নয়। এটা তোদের বাবার লাশ। তিনজনের কান্নায় যেন আকাশ-পাতাল ভারী হয়ে গেল। লোকজনের মুখ থেকে শোনা গেল যে, গতকাল রাতে আলতাফ মাহমুদদের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। আলতাফ মাহমুদসহ ৫ জন ঘটনাস্থলে মারা যান। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সাদা কাপড় উল্টাতেই আলতাফ মাহমুদের নিষ্পাপ চেহারা দেখা গেল। উপস্থিত অনেকে চোখের পানি আটকাতে পারল না। খোকন, খুকু খাটিয়ার এক কোণে তাদের নতুন জামা-কাপড় দেখতে পেল। কি হবে এ নতুন জামা-কাপড় দিয়ে, যদি তাদের বাবাই না থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close