মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

  ০৮ জুন, ২০১৯

অহংকারী রেমেন্ড

প্রতিদিন পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে রেমেন্ডের ঘুম ভাঙে। বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে বলে কথা। এবার ক্লাস টেনে পড়ে। পড়ালেখায় এতটা ভালো না। স্কুলে গিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চ দখল করে। প্রতিদিনের মতো আজও ফার্স্ট বেঞ্চ দখল করে বসে আছে তাও একাই। স্যার ক্লাসে এসে দেখে এক প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে গেছে। কারণ রেমেন্ড নিজেকে নিয়ে সব সময় মগ্ন থাকে বাবার কোটি কোটি টাকা আছে। এই গরিমায় কাউকে মানুষ মনে করে না। কাউকে ধারে কাছে ঘেঁষতেও দেয় না। স্কুলের কোনো টিচারকে যথাযথভাবে সম্মান করে না। রেমেন্ডের এই ধরনের মনমানসিকতার জন্য গ্রামের কেউ পছন্দ করে না। সবাই রেমেন্ডকে নিয়ে সমালোচনা করে। এক দিন রেমেন্ডের বাবা রেমেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম পরিদর্শন করবে আর তাকে দেখাবে ওর বাবাকে গ্রামের মানুষ কতটা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসে। শুক্রবার রেমেন্ডের স্কুল বন্ধ তাই ভোরবেলা বাবা; ছেলে রাজমহল ত্যাগ করে। রাস্তায় বের হয়ে প্রথমে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল বাবা-ছেলে। প্রথমেই একজন দুধ বিক্রেতার সঙ্গে দেখা; দুধ বিক্রেতা দূর থেকে বাবার অহংকারী ছেলেকে দেখে সালাম না দিয়েই রাস্তা ক্রস করে চলে গেল। রেমেন্ড বাবাকে বলে আব্বা এই দুধ বিক্রেতা এত সাহস কোথায় পেল? যা আপনাকে কোনো কিছু না বলেই চলে গেল? বাবা বলল, রেমেন্ড হয়তো এই নগণ্য দুধ বিক্রেতা আমাকে দেখেনি। যাইহোক, এই দুধ বিক্রেতাকে পড়ে দেখে নেব, এখন চলো আরো অনেক কিছু দেখতে পারবে। এই বলে আবার হাঁটতে শুরু করে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একজন আম বিক্রেতার সঙ্গে দেখা। আম বিক্রেতা ওই দুধ বিক্রেতার মতো কিছু না বলে রাস্তা ক্রস করে চলে গেল। এই দৃশ্য দেখে বাবা-ছেলে দুজনই ক্ষেপে গেছে।

এই বলে আবার হাঁটতে আরম্ভ করল বাবা-ছেলে, তারপর দেখা হলো একজন শিক্ষকের সঙ্গে। তিনিও এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছেন। তখনই বাবা ও ছেলে জিজ্ঞাসা করতেছেন ওই শিক্ষককে, আমরা কারা জানেন? শিক্ষক; না একটু বলেন তো আপনারা কারা? বাবা উত্তর দিল আমি এই রাজ্যের বিত্তবান আর ও আমার একমাত্র ছেলে রেমেন্ড। তখন শিক্ষক বলেন, তো আমি কী করব, আমার পথ ছাড়েন। আপনাদের মতো বড়লোকদের সঙ্গে আমার কথা বলার কোনো যোগ্যতা নেই; সো আমাকে যেতে দিন। এই বলে ওই শিক্ষক চলে গেল। রেমেন্ডের বাবা এখন একপর্যায়ে হতাশায় ভুগছেন আর বলছেন, আগে তো গ্রামের মানুষ আমাকে খুব শ্রদ্ধা ও আমার আদেশ-উপদেশ পালন করত। এই কদিনে এই গ্রামের মানুষগুলার এমনকি হয়েছে, যা সবাই আমাকে এড়িয়ে চলছে। রেমেন্ড বলল, আব্বা আমিও বুঝতেছি না কিছু! তখন বেলা প্রায় শেষের দিকে। তাই বাবা বলে, চলো আরেকটু এগিয়ে দেখি। রেমেন্ড বলল, চলেন আব্বা। দু-চার মিনিট হাঁটার পরে একজন মুয়াজ্জিনের সঙ্গে দেখা হলো, তিনি তাদের এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করে। তারপর রেমেন্ডের বাবা বলেন মুয়াজ্জিনকে, আপনি আমাকে কোনো কারণে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। মুয়াজ্জিন বলে, আপনার সঙ্গে আমি কথা বলতে বাধ্য নই।

তখন সুরেলা কণ্ঠে বাবা বলেন, প্লিজ ভাই বলেন না, আমরা এমন কি করলাম, যা গ্রামের কেউ কথা বলছেন না বরং সবাই এড়িয়ে যাচ্ছেন। তখন মুয়াজ্জিন সবকিছু খুলে বলেন। দ্যাখেন ভাই, আপনার প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ আপনার এই অহংকারী ছেলের প্রতি; আপনার ধনদৌলত আছে বলে আপনার ছেলে আমাদের গ্রামের পোলাপানদের মানুষ মনে করে না। ভাই আপনি তো জানেন, এক কুড়ি আমের ঝুড়িতে যদি একটা আম নষ্ট হয়, তাইলে সব কটি আমকে নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে।

রেমেন্ডের বাবা বলল, হ্যাঁ তা তো ঠিক। মুয়াজ্জিন বলেন, ওই নষ্ট আমটা আপনার ছেলে। তাই আমরা ও আমাদের ছেলেপেলেরা আপনাদের থেকে দূরে থাকার প্রচেষ্টা করছি। তখন রেমেন্ড কেঁদে কেঁদে বলতেছে মুয়াজ্জিনের কাছে, চাচা আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। আমি আর এমন করব না, প্লিজ আপনি সবাইকে বলুন আমাকে ক্ষমা করে দিতে ও আমার সঙ্গে কথা বলতে। মুয়াজ্জিন তখন গ্রামের সবাইকে ডেকে এনে বলে রেমেন্ড ভুল বুঝতে পারছে, এখন সবাই ওকে ক্ষমা করে দাও এবং রেমেন্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুল। মুয়াজ্জিনের কথামতো গ্রামের ছেলেপেলেরা রেমেন্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং রেমেন্ডের সঙ্গে সবাই মিলেমিশে চলাফেরা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close