মোনোয়ার হোসেন
মামার বাড়ি ঈদের খুশি
রাত পোহালেই ঈদ। বড় মামা সাতসকালে বাসায় এসে হাজির। বড় মামাকে দেখে সেতু আর মিতুর চোখ পালে ওঠে। মুখ হাঁ করে মামার দিকে তাকায়। তাকাবে না?
তারা তো কোনো দিন ঈদে বড় মামাকে বাসায় আসতে দেখেনি। বড় মামা গম্ভীর রাশভারী মানুষ। কম কথা বলে। চেহারাটাও কেমন ভয়ংকর ভয়ংকর। দেখেই ভয় ভয় লাগে। সেতু আর মিতু প্রয়োজন ছাড়া বড় মামার সঙ্গে কথা বলে না। মা হেসে বলেন, তোমরা এখনো তোমার বড় মামাকে চিনতে পারোনি। তোমার বড় মামা দেখতে যতই ভয়ংকর মানুষ হোক না কেন, মনটা কিন্তু তার খুব নরম। খুব রশিক মানুষও।
সে যাই হোক। সেতু আর মিতু অন্তত আজও মায়ের কথার সত্যতা খুঁজে পায়নি। তারা মামাকে কোনো দিন হাসতে দেখেনি। বাসায় আসতেও দেখেনি।
আজ ছোট মামার পরিবর্তে বড় মামাকে বাসায় আসতে দেখে তারা খুব অবাক হয়। চোখ বড় বড় করে মামার দিকে তাকায়।
মামা হো হো করে হেসে ওঠেন। সেতু আর মিতু যে! এসো এসো মামণিরা, কাছে এসো।
সেতু আর মিতু ভয়ে ভয়ে গুটিসুটি হয়ে মামার কাছে যায়। মামা দুজনকে কোলে জড়িয়ে নেন। বলেন, এই নাও তোমাদের ঈদের শপিং। বলে মামা বড় একটা ব্যাগ তাদের দিকে এগিয়ে দেন। এই ব্যাগে তোমাদের জন্য তিনটি করে নতুন ড্রেস আছে। এখান থেকে তোমরা একটি ড্রেস বের করে পরে নাও।
সেতু আর মিতু তো অবাক। এখনি মামা?
হুম।
কিন্তু আজ তো ঈদ নয়। আজ পরবো কেন?
আজ তোমরা নতুন ড্রেস পরে আমার সঙ্গে যাবে ।
কোথায় ?
মামার বাড়ি।
কেন?
এবার মামার বাড়িতে ঈদ করবে।
বলো কী মামা!
হুম। তোমরা সবাই এবার মামার বাড়ি ঈদ করবে। ইতিমধ্যে তোমাদের সব খালাতো ভাইবোনেরা চলে এসেছে। তোমরা গেলেই ষোলোকলা পূর্ণ হবে। তারপর যব্বর আনন্দ হবে। খুব আনন্দ হবে,
তাই না?
বড় মামা যা বললেন, তার সহজ সরল কথা হলো, তিনি ফরমালিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন । তার পদক্ষেপ হিসেবে নিজেই একটি বাগান তৈরি করেছেন। সেই বাগানে দেশিয় সব ফলমূলের গাছ লাগিয়েছেন। কীটনাশক বিষ প্রয়োগ না করেই একশ পার্সেন্ট আধুনিক পদ্ধতিতে ফলবাগান চাষ করেছেন। এতে সফলও হয়েছেন। আমগাছে থোকা থোকা আম এসেছে। লিচুগাছে থোকা থোকা লিচু এসেছে। কাঁঠালগাছে অনেক অনেক কাঁঠাল এসেছে। এখন মধুমাস। বাগানের আম পেকেছে। কাঁঠাল পেকেছে। লিচু পেকেছে। বড় মামা চান সবাইকে ফরমালিন ও বিষমুক্ত ফলমূল খাওয়াতে। ফরমালিন ও বিষমুক্ত ফল খেয়ে সবাই যেন নতুন বাগান তৈরিতে আগ্রহী হয়। এবার যেহেতু মধুমাসে ঈদ এসেছে, তাই তিনি এই ঈদকেই পদক্ষেপের একটা অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
মামা বললেন, আমরা আজ কিন্তু কোনো গাড়িতে চড়ে যাবো না। যাবো ভ্যানগাড়িতে।
সেতু বলল, কেন মামা?
ভ্যানগাড়িতে গেলে অনেক গল্প করা যাবে।
বড় মামা গল্প বলবে!
নড়েচড়ে বসে সেতু আর মিতু। মিতু আবার গল্প পাগল। সে টুই করে বলে দিল, হ্যাঁ মামা, আমরা ভ্যানগাড়িতেই যাব।
বড় মামা যে এত সুন্দর করে গল্প বলতে পারেন আগে বুঝতেই পারেনি সেতু আর মিতু। এখন বুঝতে পারল মা ঠিকই বলত । বড় মামা খুব ভালো মানুষ। রসিক মানুষ। মজার মানুষ। সেতু আর মিতুর এখন আর বড় মামাকে ভয় লাগে না। নাদুসনুদুস মামাকে মনে হয় যেন গোপাল ভাঁড়! মামার গল্প শুনে তারা হি হি করে হাসে। মামার কোল ঘেঁষে বসে। বলে , তারপর কি হলো মামা?
মামা গল্পের ধরন অনুযায়ী গলার স্বর উঁচু-নিচু করেন। দুই বোন গোলপাতার মতো গোল গোল চোখ করে , মুখ হাঁ করে মামার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
গল্পের ফাঁকে ফাঁকে কখন যে ভ্যানগাড়ি মামার বাড়ি চলে এসেছে তারা টেরই পায়নি।
রাতে খালাতো ভাইবোনদের সঙ্গে গল্প করতে করতে অনেক রাত করে ঘুমাল তারা। ভোরে আর ঘুম ভাঙে না। বড় মামা এসে তাদের তাড়া দেয়। এই তোমরা সবাই উঠে পড়ো। ঈদের দিনে ভোরে উঠতে হয় । ভোরে উঠে গোসল করতে হয়। ভোরে উঠে গোসল করা সুন্নত।
সবার ঘুম কাতুরে চোখ খচখচ করে। শরীর ম্যাচমেচ করে। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না । বড় মামা ডেকেছে তো। চোখ যতই খচখচ করুক, শরীর যতই ম্যাচমেচ করুক, উঠতেই হবে। সবাই হুড়মুড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। গোসল করল। নতুন জামা পরল ।
মামি ফিরনি আর পায়েস রান্না করেছেন। মামা ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে বাগান থেকে দুইটা পাকা কাঁঠাল পেড়ে এনেছেন। পাকা কাঁঠালের ম ম গন্ধ বাড়িজুড়ে রি রি করছে। সবাই ফিরনি আর পায়েস ছেড়ে পাকা কাঁঠালের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। গপাগপ খেতে লাগল কাঁঠাল। মামা বললেন, বিকেলে আমরা যাবো বাগানে। গাছপাকা আম আর লিচু খাবো।
সবাই বলে উঠল, হুররে...!
বিকেলে আকস্মিক পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলো। একটু পরেই শুরু হলো ঝড়োবৃষ্টি ।
সেতু বলল, ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ। চলো সবাই আম কুড়াতে যাই।
চলো, চলো।
সবাই বৃষ্টিতে ভিজে হুড়মুড় করে আম কুড়ানোর জন্য বাগানের দিকে দৌড়াতে লাগল।
বড় মামা বললেন, এই তোমরা বৃষ্টিতে ভেজো না। জ্বর-সর্দি হবে তো। কে শোনে মামার কথা! সবাই দৌড়াল। বাগানে গিয়ে অনেক আম কুড়াল। সত্যিই মামার দেশে আম কুড়ানোর মজাই আলাদা। মধুমাসে মামার বাড়ি ঈদ করতে পেরে সবার খুব ভালো লাগল। অনেক আনন্দ পেলো ।
মিতু বলল, মামা।
মামা বললেন, কী?
আমি কিন্তু আবার আসবো।
কেন?
জাম খেতে। মামার বাড়ি জাম খেয়ে রঙিন করবো মুখ।
মিতুর কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
সঙ্গে সঙ্গে বড় মামাও।
"