আহমেদ রউফ

  ০৪ মে, ২০১৯

সুপ্তি ও একটি বিজয়ের গল্প

সবুজ শ্যামল নদীঘেরা আর রাতে ঝিঁঝিঁপোকার ঝিলিমিলি আলোয় মায়াময় গ্রামে বেড়ে ওঠা সুপ্তির। সে ছবি আঁকে, যুদ্ধকথার ছবি। ভালোবাসে রাত-বিরাতে বাবার সাথে গল্প করা। বাবাও যেন মেয়ের সাথে গল্প করার জন্য মেয়ের আদর মাখা মুখটির দিকে চেয়ে থাকে। কখন মেয়ে এসে বলবে বাবা একটা গল্প শোনাও...

সুপ্তির পরীক্ষা শেষ হলো এই কিছুদিন হলো। এখন নানুবাড়ি বেড়াতে যাবার পালা। তাই তার মনে খুব আনন্দ হচ্ছে। কারণ নানুর বাড়ি যাবার ট্রেনের শব্দ তার প্রিয়। জানালার পাশে তাকে বসতেই হবে। কারণ সুপ্তি প্রকৃতি খুব ভালোবাসে। ট্রেনে বসে যতদূর চোখ যায় চেয়ে থাকবে আর দেখবে সবুজ মাঠ হলদে রঙের সরষে ফুল। ঘাসফড়িংয়ের ওড়াওড়ি। প্রজাপতিদের রঙিন পাখায় ওড়ে চলা। ভ্রমরের গুনগুন গান, পাখিদের কিচিমিচির শব্দে মনটা তখন ভরে উঠে সুপ্তির; এ যেন এক স্বপ্নপুরি। তাই এ সময়ে এসে নানুবাড়ি যাবার জন্য মনটা যেন আঁকু-বাঁকুই

করে সুপ্তির।

কিন্তু পরীক্ষা শেষ হবার পরও এবার সুপ্তির তেমন কোনো সাড়া শব্দ নেই। সেই আনন্দ নেই! তাই বাবা-মাও একটু চিন্তায় পড়ে যায়। মেয়েটির কী হলো! পরীক্ষা শেষে তো নানুবাড়ি নানুবাড়ি করে জ্বালিয়ে ফেলতো। মা আমার পরীক্ষা তো শেষ কবে; যাবে না নানুবাড়ি? বল না মা! কিন্তু এবার কী হলো। কিছুই

বুঝতে পাচ্ছি না।

বাবা রাতে অফিস থেকে আসতেই গলায় জড়িয়ে বলতে লাগলো সুপ্তি। বাবা এবার কিন্তু নানুবাড়ি যাবো না। তুমি অফিস থেকে এসেছো! হাতমুখ ধুয়ে আসো। আমি তোমার কাছে গল্প শুনবো আজ! কিন্তু; কেনরে মা। তোমার প্রিয় নানুর বাড়ি যাবে না! এখন তো পরীক্ষা শেষ। কোথাও ঘুরতে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। সেটা তো আমার বুড়িমা জানে! ঘুরতে যাবার মজা। তুমি না হয় কালই, তোমার আম্মুকে নিয়ে নানুবাড়ি চলে যাও। মামাদের সাথে এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া। সুন্দর সুন্দর হরেক রকম মজাদার শীতের পিঠা! মনে পড়লেই কেমন যেন জিবে জল এসে যায়। তাই না মামণি! না বাবা তুমি বুঝতে পারছো না। এবার আমি যাবো না! আমাদের স্কুলে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে। স্যার ক্লাসে বলেছে। সেই বিজয়ের গল্পই আজ তোমার কাছে শুনবো। এখন আমি চলে গেলে অনুষ্ঠানে যেতে পারবো না। স্কুলে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হবে। আমি নাম লেখিয়েছি। আমি যুদ্ধের ছবি আঁকবো বাবা। যেভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তাই আমাকে ছবি আঁকার জন্য গল্প শোনাতে হবে! যুদ্ধদিনের গল্প...

ছোট্ট একটি মেয়ে সুপ্তি। এবার টুতে পরীক্ষা দিয়েছে। আগামীতে থ্রিতে উঠবে। বাবা ভাবে এইটুকুন একটা মেয়ে। বিজয়ের গল্প শুনতে চায়! জানতে চায় কীভাবে

বিজয় এসেছে, তার ভেতর দেশের প্রতি মায়া জন্মেছেÑ

এটাই কম কিসে। আমি যে এমনটাই চেয়েছি। আমার সন্তান দেশকে ভালোবাসতে শিখুক, দেশের মানুষকে ভালোবাসুক। আজ আমি সত্যি গর্বিত। এই দেশে জন্ম আমার। এ

আমার মাতৃভূমি।

বাবার কাছে গল্প শুনে সুপ্তি ছবি আঁকে বিজয়ের। দেশের ছবি। সবুজ শ্যামল এই বাংলার ছবি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ৯ মাস যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটের দিকে ঢাকায় রমনা রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। আনন্দে মুখরিত হয় এই বাংলার আকাশ বাতাস! জয় হয় এই বাংলা ও বাংলার মানুষের! যুদ্ধকথার ছবি! আবার একটি বিজয়। সেটা সুপ্তির মতো ছেলেমেয়েরাই আনবে। লাল সবুজের পতাকায়...

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close