ফখরুল হাসান

  ২৭ এপ্রিল, ২০১৯

জিলাপি

আকাশে তখন মেঘ করেছে, একটু একটু ঠান্ডা বাতাস এবং খুব বেশি বোঝা যায় না- এ রকম বৃষ্টি। কিন্তু কেউ পিছপা হলো না বৈশাখী মেলায় তারা যাবেই এবং তার মাঝে শুরু হলো চারদিক জুড়ে হইচই। গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে ছুটে চলেছে নানা রকম মানুষ। কালো-ফর্সা, শ্যামলা, লম্বা-বেঁটে, জোয়ান-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবার গন্তব্য বৈশাখী মেলা।

৯ বছরের শিশু পল্টু তার মাকে এসে বলছে,

‘মা মাগো মানুষগুলো দল বেঁধে কোথায় যাচ্ছে?’

‘ওরা মেলায় যাচ্ছে রে বাজান।’

‘আচ্ছা মা মেলায় কি জিলাপি পাওয়া যায়?’

‘কেন বাজান, জিলাপির কথা জিজ্ঞেস করোস কেন?’

‘মা আমার জিলাপি খাইতে মনে চায়!’

‘বাজান চল গোসলডা কইরা ভাত খাবি।’

‘মা মা আমি গরম জিলাপি খাবো।’

‘ভাত খা বাজান রাতে ভাত নেই!’

তোর বাপ বাড়িতে থাকলে তো আমাগোর অভাব থাকতো নারে বাপ। কত জিলাপি আনতো তোর জন্য।

‘মা আব্বাজান কই গেছে? হেরে কও গরম জিলাপি আনতে আমি গরম জিলাপি খাবো।’

‘তোর বাপজান শহরে গেছে কাম করতে। কাম শেষ অইলেই আইবো।’

‘মা আমি মাঠে খেলতে যাইতাছি। বাজান আইলে আমারে ডাইকো।’

‘আচ্ছা বাজান তুই খেলতে যা, আমি ডাইকয়া আনমু।’

পল্টু, বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে চলে গেল। সকাল গড়িয়ে দুপুরে হঠাৎ মনে হলো বাপজানের সঙ্গে বৈশাখী মেলায় যাওয়ার কথা। তাই মাঠ থেকে দৌড় হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরলো পল্টু। বাড়ি এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘মা বাজান আইছে?’

‘না রে বাপজান, তোর বাজান এখনো আসেনি!’

মায়ের কথা শুনে পল্টুর মুখ ফ্যাকাসে রঙের হয়ে গেলো। তবুও মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে,

‘মা মাগো বাজান কখন জিলাপি নিয়ে আইবে?’

‘আই বো বাপজান আইবো এহনি আইবো।’

বিকাল প্রায় শেষ। কিন্তু, পল্টুর বাজান এখনো বাড়িতে আসেনি! তাই মন খারাপ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো পল্টু। বাড়ির চারপাশে ছেলেকে কোথাও না পেয়ে পল্টুর মা চিন্তায় পড়ে গেলো। ছেলেকে মিছা কথা বলে বুঝাইছে। পল্টুর বাপ তো কামে গেছে ভোরবেলা। বাড়িতে আইবো হেই রাইতের বেলা। গরিবের জন্য যে বৈশাখী মেলা না, হেই কথা কেমনে কইবো পোলাডারে? হে গোর তো তিনবেলা ঠিকমতো ভাতই জোটে না। বড়লোকের পোলাপান কত কিছু কিন্না আনে মেলা থাইক্কা। আর ছেলেডা গরম জিলাপি খাইতে চাইলো তাও কিন্না দেওয়ার পয়সা নাই, হায়রে কপাল আমার! গরিব হয়া কেন যে এই দুনিয়ায় আইলাম! পল্টুর কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো গত বছরের কথা। পল্টুর গরম জিলাপি খুব পছন্দ। গত বছর বৈশাখী মেলায় গরম জিলাপির জন্য পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে একা একা মেলায় গিয়ে হারায়া গেছিলো। অনেক খোঁজাখুঁজি কইরা পাওয়া গেছে। আজও সেই ভয়টা পেয়ে বসেছে পল্টুর মাকে। দিনের আলো নিভে আরো অন্ধকার হয়ে এলো, চারদিকে মোটামুটি ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার মাঝে সবাই বৈশাখী মেলা থেকে হইচই করে বাড়ি ফিরছে; কিন্তু পল্টু এখনো ফিরে এলো না! তা হলে কি পল্টু বৈশাখের মেলায় যায়নি? কিছুক্ষণ পর কিছু দূরে একেবারে সাদাসিধা একটা ছেলের সঙ্গে পল্টুকে ফিরতে দেখে মনে শান্তি পেলো পল্টুর মার। পল্টুর হাতে একটা পোঁটলা। পল্টু কাছে এসে মাকে ডেকে বলে, মা

মা এই দেখ গরম জিলাপি। আমার বন্ধু রতন মেলা থেকে আমার জন্য গরম জিলাপি

নিয়ে এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close