আবদুস সালাম

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

বাঘের গুহায় আশ্রয়

অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে দুই বন্ধু বাস করত। তারা যে গ্রামে বাস করত সেই গ্রাম থেকে খানিকটা দূরে ছিল একটা বন। বনটি ছোট-বড় গাছপালায় পরিপূর্ণ ছিল। দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারত না। বনটি ছিল শ্বাপদসংকুল। ভয়ংকর সব পশুপাখির বসবাস। ওই দুই বন্ধু খুব সাহসী ছিল। তাদের গভীর অরণ্যে প্রবেশ করার সাধ ছিল দীর্ঘদিনের। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল, ওই বনের মধ্যে তারা প্রবেশ করবে। তারা নিজের চোখে দেখতে চায় বনের ভেতরটা কেমন। সত্যি সত্যি এক দিন তারা বনের মধ্যে প্রবেশ করল। আত্মরক্ষার জন্য নিজেদের সঙ্গে একটা করে টর্চ আর একটা করে ধারাল ছুরি রাখল। বনের মধ্যে প্রবেশ করার পর তাদের চোখে পড়ল বানর, হরিণ, জেব্রা, হাতি এবং নানা ধরনের রং-বেরঙের পাখি। পাখির মিষ্টি গানে তাদের প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। বনটি গভীর হওয়ার কারণে তারা খুব বেশি দূর যাওয়ার আর সাহস পেল না। কারণ বনের মধ্যে ছিল বিষধর সাপ, বিচ্ছু ও পোকামাকড়। একটা যদি তাদের কামড় দেয়, তা হলে আর রক্ষা নেই। নির্ঘাত মৃত্যু!

দুই বন্ধু যখন বনের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছিল ঠিক তখন হঠাৎ করে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। তারা একটু আশ্রয় নেওয়ার জন্য একটা উপযুক্ত স্থান খুঁজতে থাকল। এমন সময় একটু দূরে তাদের চোখে পড়ল উঁচু একটা মাটির ঢিবি। ঢিবির দিকে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। নিকটে গিয়ে দেখে সেখানে সুন্দর একটা গুহা রয়েছে। কী আর করা তারা ওই গুহার মধ্যে আশ্রয় নিল। গুহার মধ্যে ঢোকার পর তাদের গা ছমছম করতে লাগল। তারা সিদ্ধান্ত নিল বৃষ্টি ছেড়ে গেলে দ্রুত বাড়ির উদ্দেশে হাঁটা দেবে। বনটি তাদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। বৃষ্টি ছেড়ে যাওয়ার আশায় দুই বন্ধু গুহার মধ্যে অপেক্ষা করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ তাদের চোখে পড়ল বড় একটি বাঘ তাদের গুহার দিকে এগিয়ে আসছে। তখন তারা বুঝতে পারল এই গুহাটিতে ওই বাঘটি বসবাস করে। ১ম বন্ধু দ্বিতীয় বন্ধুকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল, আমার না খুব ভয় করছে! আর বোধহয় বাঁচতে পারব না! এক্ষুনি ওই বাঘটির পেটে যেতে হবে। দ্বিতীয় বন্ধু ১ম বন্ধুকে সাহস দিয়ে বলল, ‘তুই একদম ভয় পাবি না। দেখ আমি কী করি। বাঘটি কাছাকাছি এলে তুই বলবি, ‘আশপাশ থেকে একটা বাঘের গন্ধ পাচ্ছি। এবার বোধহয় বাঘটা খেতে পারব। আর সহ্য হচ্ছে না। ক্ষিধেয় পেটটা চুঁচুঁ করছে। আর ঘুমিও না তো। এবার ওঠো। চোখটা খুলে দেখ বাইরে বাঘটা আছে কিনা?’

সত্যি সত্যি বাঘটি যখন গুহার মুখের কাছে এল তখন দ্বিতীয় বন্ধুর শেখান কথাগুলো ১ম বন্ধু বারবার বলতে থাকল। ওদিকে গুহার ভেতর থেকে কথার আওয়াজ শুনে বাঘটি থমকে দাঁড়ায়। আর ভাবতে থাকে এ আবার কোন ভয়ংকর জন্তু রে বাবা? আমার গুহায় আশ্রয় নিয়ে আমাকে খাওয়ার জন্য ফন্দি করছে। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চারদিকে কিছুটা অন্ধকার ছিল। তাই গুহার ভেতরটা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। তখন বাঘের বুকটা ভয়ে ধুঁক ধুঁক করতে থাকে। গুহার মধ্যে প্রবেশ করার সাহস হলো না তার। জন্তুটাকে একনজর দেখার জন্য বাঘটি গুহার প্রবেশমুখে অধীর আগ্রহে বসে থাকল। বাঘের হাবভাব দেখে তাকে মোকাবিলা করার জন্য দু?ই বন্ধু প্রস্তুত হলো। তারপর দ্বিতীয় বন্ধু তার কণ্ঠস্বরটা পরিবর্তন নাকি সুরে বলল, ‘তুই যখন এত করে বলছিস তাহলে দেখি আসি বাঘটি আছে কি না। তারপর না হয় দুজন মিলে বাঘটিকে মজা করে খাওয়া যাবে।’

এমন সময় দ্বিতীয় বন্ধু বাঘের দিকে তাক করে দুটি টর্চ একসঙ্গে অন করল। টর্চের আলো দেখে ভয়ংকরভাবে বাঘটি একটা লাফ দিল। আর উচ্চস্বরে বলে উঠল, ‘ওরে বাবা কী ভয়ংকর জন্তু এটা! চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে! এক মুহূর্ত আর এখানে থাকা যাবে না। প্রাণ থাকতে এক্ষুনি পালাই। নইলে আর রক্ষা নেই!’ এ কথা বলেই বাঘটি বনের গভীরে খুব জোরে একটা দৌড় দিল। গুহার ত্রিসীমানার মধ্যে আর তাকে দেখা গেল না। এই সুযোগে দুই বন্ধু আর দেরি না করে বাড়ির উদ্দেশে হাঁটা দিল। অবশেষে তারা সুস্থ সুন্দরভাবে আপন আপন বাড়িতে ফিরে এল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close