মোনোয়ার হোসেন

  ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯

ঘোড়ার ডিমে ফুটল ছানা

অনেক দিন আগের কথা। এক ছিল পাহাড়। সেই পাহাড়ে বাস করত এক ঘোড়া। ঘোড়া সারা দিন পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেত। ঘাস খাওয়া শেষ হলে পাহাড়ের ঢালু বেয়ে নিচে নামত। নিচে ছিল এক নদী। নদীতে পানি খেত। তারপর নদীর তীরে বালুর ওপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জাবর কাটত। নদীতে বাস করত এক হাঁস। সে প্রতিদিন পানির ওপর ডানা ভাসিয়ে দিয়ে ঘোড়াকে দেখত। ঘোড়ার বোকামি দেখে ঠোঁট টিপে টিপে হাসত। মনে মনে বলত, আহারে বোকা ঘোড়া, খাওয়ার পরে একটু শুয়ে পড়ে বিশ্রাম করবে, তা না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জাবর কাটে, ঝিমোয়, ঘুমায়, বোকা ঘোড়া!

প্রতিদিনের মতো আজও ঘোড়া পাহাড়ে ঘাস খেয়ে ঢালু বেয়ে নিচে নেমে এল। নদীর তীরে গেল। পানি খেল। তারপর বালুর ওপর দাঁড়িয়ে চোখবুজে জাবর কাটতে লাগল। তা দেখে হাঁস বলল, ওরে বোকা ঘোড়া, তুমি প্রতিদিন কেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জাবর কাটো? ঝিমোও? ঘুমাও? একটু শুয়ে পড়ে বিশ্রাম তো করতে পার।

ঘোড়া বলল, ভাই, আমাদের শরীর খুব ভারী। পিঠ একদম সোজা। একবার হাঁটু ভেঙে বসলে সহজে উঠে দাঁড়াতে পারি না। বসা অবস্থায় কেউ যদি আক্রমণ করে, তবে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে পারব না। দৌড়াতে পারব না। তাই নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই জাবর কাটি, ঝিমোয়, ঘুমায়। বিশ্রাম করি।

হাঁস আবার বলল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে তোমার কষ্ট হয় না?

না, আমাদের পায়ের বিশেষ ক্ষমতা আছে। আমরা ঘুমানোর সময় হাঁটু শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি। হাঁটু ভেঙে পড়ে না। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে কোনো কষ্ট হয় না। এত দিন ঘোড়াকে বোকা ভাবার কারণে হাঁস মনে মনে খুব লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলো। ভাবল কারো সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনে খারাপ ধারণা করা ঠিক নয়।

সে অনুতপ্ত হয়ে ঘোড়াকে বলল, ঘোড়া ভাই, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি না জেনে তোমাকে বোকা ভেবেছি। খারাপ খারাপ কথা বলেছি। ক্ষমা করা মহৎ গুণ। ঘোড়া হাঁসকে ক্ষমা করে দিল। তারপর হাঁস ও ঘোড়া বন্ধু হলো। এখন অবসরে তারা প্রতিদিন বিকেলে নদীর তীরে গল্প করে। নিজেদের সুখ-দুঃখগুলো শেয়ার করে। এক দিন ঘোড়া নদীর তীরে এসে দেখল, নদীতে হাঁস সাঁতার কাটছে না। হাঁসকে দেখতে না পেরে ঘোড়া ঘাবড়ে গেল। এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল। কোথাও হাঁস নেই। পেছন থেকে হাঁস এসে বলল, কী খুঁজছ বন্ধু? তোমাকে। কোথায় ছিলে এতক্ষণ? ঝোপের ভেতর ডিমে তা দিচ্ছিলাম। তাই বল। আমি তো একেবারে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

সত্যি আমারও খুব ভয় হয় বন্ধু। বেশ কয়েকদিন হলো একটা শিয়াল এদিকে খুব উৎপাত শুরু করেছে। না জানি কখন এসে আমাকে খেয়ে ফেলে। যদি কখনো আমার কিছু হয়ে যায়, তবে আমার সোনা মানিকগুলোকে তুমি একটু দেখে রাখবে, ডিমে তা দেবে, ছানা ফুটাবে।

ঠিক আছে বন্ধু। হাঁস ঘোড়াকে দেখিয়ে দিল কোথায় বসে সে ডিমে তা দেয়। সত্যি সত্যি এক দিন ঘোড়া নদীর তীরে এসে দেখল তীরে মধ্যে বন্ধু হাঁসের সাদা পালক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ঘোড়ার বুকটা ধক করে উঠল। তার আর কোনো কিছু বোঝার বাকি রইল না। দুষ্টু শিয়াল বন্ধুকে খেয়ে ফেলেছে। সে পালকগুলো বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। তারপর বন্ধুর ডিমগুলো নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় গেল। ডিমে বসে তা দিতে লাগল। এক দিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠল একদল শিকারি। উঠেই তারা ঘোড়াকে দেখতে পেল। দেখল একটা ঘোড়া ডিমে বসে তা দিচ্ছে।

তারা অবাক হয়ে ভাবল, ঘোড়া আবার ডিম পাড়ে নাকি! নিশ্চয় এ ঘোড়া সোনার ডিম পাড়ে। তাকে ধরে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। তা হলে আমাদের আর কোনো অভাব থাকবে না। তারা ঘোড়াটিকে ধরতে গেল। ঘোড়া অনেকক্ষণ হাঁটু ভেঙে বসে ডিমে তা দিচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াতে পারল না। দৌড়ে পালাতে পারল না। শিকারিরা এসে সহজেই তাকে ধরে ফেলল। ডিমসহ ঘোড়াকে বেঁধে নিয়ে গেল লোকালয়ে।

ঘোড়ার ডিম দেখে সবাই অবাক। তারা বলাবলি করতে লাগল, ডিম পেরেছে, ডিম পেরেছে। মোদের ঘোড়া ডিম পেরেছে। সেই থেকে লোকের মুখে মুখে ঘোড়ার ডিম প্রবাদটি শুরু হলো। লোকালয়ে আসার কয়েকদিন পরেই ডিম ফুটে বের হলো কয়েকটি ছানা। ফুটফুটে ছানা। চিঁচিঁ করে ডাকে ছানাগুলো। সবাই অবাক। এইগুলো কী ঘোড়ার ছানা? কেউ কেউ বলল, নিশ্চয় ঘোড়ার ছানা। এই দ্যাখো, ঘোড়ার মতো চিঁচিঁ করে ডাকে।

ঘোড়া বলল, না, না, এইগুলো হলো হাঁসছানা!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close