ইউনুস আহমেদ

  ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯

অরুণ কুমারের সাদা ঘোড়া

একছিল এক রাজ্য। রাজা প্রতাপ কুমারের রাজ্য। খুব কড়া শাসক রাজা প্রতাপ কুমার। তার কথায় বাঘে আর মহিষে এক ঘাটে জল খায়। রাজার একমাত্র পুত্র। নাম অরুণ কুমার। দেখতে যেমন অপরূপ, তেমনি অনেক সাহস তার। অরুণ কুমারে বয়স এখন ১৩ কী ১৪ বছর। এরই মধ্যে সে বিভিন্ন অস্ত্র চালনা শিখে ফেলেছে। সেনাপতির কাছে শিখেছে তলোয়ার চালনা। কুস্তিগিরের কাছে শিখেছে কুস্তি। সহিসের কাছে শিখেছে ঘোড়া চালনা। আর শিখেছে একটা ঘোড়াকে কীভাবে বশ মানানো যায়। রাজ্যের শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ কুষাণের কাছে আয়ত্ত করেছে তীর চালনার সব কলাকৌশল। রাজপুত্র অরুণ কুমারের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ধন্য ধন্য পড়ে গেছে সব জায়গায়। পুত্র অরুণ কুমারকে নিয়ে রাজা প্রতাপ কুমারের অনেক গর্ব।

এক দিন রাজপুত্র অরুণ কুমার তার পিতার নিকট এসে দাঁড়াল। রাজা প্রতাপ কুমার বললেন, কীহে আমার সাহসী পুত্র, কী চাই তোমার? অরুণ কুমার বললেন, পিতা, আমার সব প্রশিক্ষণ শেষ। আমি এখন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে চাই। দেখতে চাই নতুন নতুন রাজ্য, মানুষজন, পশুপাখি আর বন। রাজা প্রতাপ কুমার বললেন, বীরপুত্র, অবশ্যই যাবে তুমি। তুমি একজন সাহসী বীর। তবে তোমার সঙ্গে আমি একদল চৌকস সেনা দিয়ে দিচ্ছি। অরুণ কুমার বলল, না পিতা। আমি কোনো সেনাদল সঙ্গে নেব না। তবে উজিরপুত্র বরুণ কুমার আমার বন্ধু। ওকে সঙ্গে নিতে পারি। রাজা বললেন, তবে তাই হোক। রাজ্যে অরুণ কুমারের যাত্রার অনেক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। কিন্তু অরুণ কুমার সঙ্গে কিছুই নিল না। অরুণ কুমার সওয়ার হলো সাদা ঘোড়ায় আর উজিরপুত্র সওয়ার হলো কালো ঘোড়ার ওপর। টগবগিয়ে ঘোড়া চলল এগিয়ে। সত্তর ক্রোশ অতিক্রম করার পর সামনে পড়ল বিশাল এক বন। বড় বড় সব গাছ। বনের ভেতর আলো আঁধারির খেলা। কাছে পিঠে ঘোড়া বেঁধে রেখে সেই গাছের গুঁড়ির ওপর বিশ্রাম নিতে বসল দুই বন্ধু। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে খেয়াল নেই। কারো কথাবার্তা শুনে ওদের ঘুম গেল ভেঙে। কথা বলছে দুটি পাখি ব্যঙ্গমা আর ব্যঙ্গমি। ব্যঙ্গমি বলছে, রাজকুমার কী জানে, সামনে অনেক বিপদ। কী বিপদ? ব্যঙ্গমা জিজ্ঞাসা করল। আর ত্রিশ ক্রোশ এগোলেই ডাইনির বন। ভয়ংকর সব ডাইনিরা থাকে সেখানে। এখানে ভয়ের রাজ্য কায়েম করেছে তারা। কত পথিক যে মারা পড়েছে ওদের হাতে, তা বলে শেষ করা যাবে না। সে পথ পাড়ি দিতে অনেক বেগ পেতে হবে অরুণ কুমারকে। তবে ওর সাদা ঘোড়া অনেক সাহায্য করতে পারবে ওকে। সাদা ঘোড়ার অনেক ক্ষমতা আছে। অরুণ কুমার বন্ধু বরুণকে জাগিয়ে তুলল। তারপর সব ঘটনা খুলে বলল।

তারপর টগবগিয়ে এগিয়ে চলল অরুণ কুমারের সাদা ঘোড়া আর বরুণ কুমারের কালো ঘোড়া। সাদা ঘোড়ার কেশরে আলতো করে আদর করল অরুণ কুমার। তাতে সাদা ঘোড়ার গতি বেড়ে গেল তিন গুণ। খুরের আঘাতে ধুলো উড়িয়ে এগোতে লাগল সাদা ঘোড়া। সাদা ঘোড়ার দুপাশের সাদা কেশর বাতাসে ওড়ছে। হঠাৎ সামনে পড়ল ডাইনির বন। ভয়ংকর ডাইনিদের চিৎকার আর চেঁচামেচি ভেসে এল। ডাইনিদের একেবারে সামনে পড়ে গেল অরুণ কুমার। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ওদের আক্রমণ করল ডাইনিরা। অরুণ কুমার কটি থেকে তলোয়ার বের করল। সূর্যের আলো তলোয়ারের ওপর পড়ে চকচক করে উঠল। বিদ্যুৎ গতিতে তলোয়ার চালাল অরুণ কুমার। একে একে মারা পড়তে লাগল সব ডাইনি। সাদা ঘোড়াও কম যায় না। সাদা ঘোড়ার ধারালো খুরের আঘাতেও কয়েকটা ডাইনি ধরাশায়ী হলো। ভয়ংকর ডাইনিদের অত্যাচারের দিন শেষ হলো। এরপর আরো অনেক নতুন নতুন জায়গা ঘুরে, তবেই না বাড়ি ফিরল অরুণ কুমার। রাজা-রানী সব শুনে খুব খুশি হলো। আর প্রজারা সব ধন্য ধন্য করতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close