সোলায়মান আহমাদ

  ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুমনার টিয়া পাখি

সুখের ডাকে প্রতিদিন সকালে ঘুমভাঙে সুমনার! সুখ, কোনো মানুষের নাম নয়, সুখ হচ্ছে সুমনার সব থেকে কাছের বন্ধু হলুদ টিয়া পাখির নাম। এই হলুদ পাখিকে নিয়েই সুমনার সব আনন্দ, খেলাধুলা আর সময় কাটানো। প্রতিদিন সুখের ডাক না শুনলে যেন সুমনার ঘুমই ভাঙে না!

সকালে সুখের সুমনা, সুমনা ডাক শুনে ঘুম ভাঙবে তারপর ব্রাশের পাশে উড়ে এসে বলবেÑ সুমনা, ব্রাশ, ব্রাশ আর সুমনা ব্রাশ করবে, তারপর ফুড়ুৎ করে উড়ে তোয়ালের কাছে গিয়েÑ মুখ মোছো, মুখ মোছো বলবে সুমনা মুখ মুছবে তারপর সুমনার কাঁধে বসে দুজনে একসঙ্গে খাবার টেবিলে আর দুজনে একসাথে বলবে খাবার, খাবার এটা সকালের রুটিন।

সুমনা আর সুখের মধ্যে এতটা মিল যে, সুমনার যখন যা দরকার তা সুখ জানে আর সুমনার আগে আগে তাই করে। সারা দিন খাঁচা ছাড়া থাকে তাও কোথাও চলে যায় না, আর সন্ধ্যা হলে আপনা আপনি মাথা নিচু করে খাঁচায় গিয়ে ঘুম।

সুমনার বয়স যখন ছয় বছর ছিলÑ তখন একদিন ছোট চাচ্চুর সাথে বিকেলে বেড়াতে গিয়েছিল সুমনা, বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ সুমনা দেখে রাস্তার পাশে ছোট্ট হলুদ টিয়া পাখি পড়ে ডানা ঝাপটাচ্ছে। হয়তো কোনো দুষ্টু লোক এখানে ফাঁদ পেতেছিল আর অবুঝ ছা পাখিটা আটকে গেছে, সুমনা মিষ্টি কণ্ঠে চাচ্চুকে বলে চল আমরা এটাকে বাসায় নিয়ে যাই চাচ্চু? তারপর পাখির ছানাটাকে বাসায় নিয়ে আসে, কোনো আঘাতে ডান ডানাটা মনে হয় মচকে গেছে, ঠিকমতো নাড়াচাড়া করতে পারছে না। সুমনা আর ওর চাচ্চু পাখিটার ডানা সুতো দিয়ে বেঁধে কিছু খাবার খাওয়ায়। তারপর সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ঘরের ভেতর নিয়ে বসে থাকে দুজনে, যখন ছানাটি ঘুমিয়ে যায় তারপর দুজনে ঘুমায়।

পরদিন সকালে গিয়ে চাচ্চু ছানাটার জন্য খাবার আর সুন্দর একটা খাঁচা কিনে নিয়ে আসে, খাঁচাটার গায়ে রঙিন কাগজে লেখা ছিল সুখ! তারপর থেকে সুমনা ও সুমনার চাচ্চু দুজনেই ছানাটাকে সুখ বলে ডাকে। তারপর থেকে ছানাটাকে নিয়েই দুজনে সব সময় মেতে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে হাঁটতে শিখে তারপর, সুমনা ধরে ধরে উড়াল দেওয়া শেখায়, কথা বলতে শেখায় এবং ধীরে ধীরে ছানাটা বড় হয়ে আজ এই সুন্দর হলুদ টিয়া পাখি। এখন সে খুব সুন্দর করে সুমনা, সুমনা বলে ডাকে, আর এখন শুধু রাতে ঘুমানোর সময় হলে খাঁচায় থাকে আর সারা দিন সুমনার সাথে সাথে থাকে, সুমনার সাথে খেলতে যায়। এক দিন দেখে সুখের ডাক শুনে শুনে আরো একটা খুব সুন্দর লাল টকটকে টিয়া, খাঁচার সামনে এসেছে, তারপর দুটোই মিলে খুব কিচিরমিচির করতে থাকে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে সব সময় ওই টিয়া খাঁচায় আসতে থাকে। একদিন সকালবেলা সুখ আর ডাকছে না সুমনাকে! অনেক বেলা হলো তবু সুমনাকে ডাকছে না, সুমনার ঘুম ভাঙলে দৌড়ে খাঁচার কাছে গিয়ে দেখে সুখ খাঁচায় বসে আছে, আর নতুন অন্য পাখিটা নেই। সুমনাকে দেখে সুখÑ সুমনা সুমনা করে ডাকতে লাগে, তারপর চাচ্চু এসে দেখে সুখ ডিমে তা দিচ্ছে! তিনটা ডিম! সুমনা আর চাচ্চু দুজনে তো খুব খুশি, সুখের ডিম ফুটে বাচ্চা হবে, আরো তিনটা হলুদ পাখির ছানা হবে কি? মজা কি মজা করে নাচছে সুমনা।

ডিম পেড়েছে সুখ পাখিটা

দিচ্ছে তাতে তা

কদিন পরে ডিমফুটে যে

বের হবে তিন ছা

মা পাখিটা হলুদ রঙের

বাবার রঙটি লাল

দেখবো এবার ছাগুলো

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close