হামিদুর রহমান

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

চালাক শিয়াল ও বোকা মুরগি

মুরগি পালন করা অনেকের সখ আবার অনেকে ডিম ও মাংসের জন্য মুরগি পালন করে থাকে। সবার মতো রিফাতের বাড়িতে তার মা একটা মুরগি পালত। মুরগিটা দেখতে লাল রঙের। দেহ পরিপুষ্ট। মুরগিটাকে রিফাতের মা অনেক পুষ্টিকর খাবার দিত। খাবার দিলেই টুপটুপ করে সব খাবার গিলে ফেলত। মুরগিটা সব সময় রিফাতের মায়ের কথা শুনত। রিফাতদের বাড়ি ছাড়া মুরগিটা অন্য কোনো বাড়িতে যেত না। রিফাত ও তার মা খাবার দিলে খাবার খেত কিন্তু অন্য কেউ খাবার দিলে খেত না। মুরগিটার স্বভাব ছিল ভদ্র ও সাদাসিদে প্রকৃতির। মুরগিটা কখনো কারো কোনো প্রকার ক্ষতি করত না। রিফাত ক্লাস ফাইভে পড়ে। যখন রিফাতের দুই বছর তখন তার বাবা মারা যায়। রিফাতের মা বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ আর মুরগিটার ডিম বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাত। সংসারে খুব অভাব ছিল। রিফাত পড়ালেখায় খুব ভালো। ক্লাসে সে প্রথম, মানে তার রোল নম্বর এক। এ জন্য তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে খুব ভালোবাসত। রিফাত তার মাকে সব সময় মানত এবং ভালোবাসত। তার মা যখন যা তৈরি করত সেটুকু খেয়েই রিফাত স্কুলে যেত। কখনো আবার না খেয়েই রিফাত স্কুলে চলে যেত। রিফাত তার মাকে বাড়ির কাজে সহযোগিতা করত। রিফাতদের মুরগিরটার গায়ের রং ছিল লাল। তাদের বাড়িতে চার পরিবারের বসবাস। রিফাতরা ছাড়া অন্য কেউ বাড়িতে মুরগি পালন করত না। রিফাতদের বাড়িটা ছিল বনজঙ্গলে ঘেরা। রিফাতের মামার বাড়ি তাদের পাশের গ্রাম। রিফাতের মা আর রিফাত কখনো মুরগিটাকে একা বাড়িতে রেখে কোথাও যেত না। কারণ, তাদের বাড়ির পাশে যে জঙ্গলটা আছে, সেটাতে একটা শিয়াল ছিল। সারাক্ষণ শেয়ালটার মুরগির ওপর নজর রাখত কখন মুরগিটাকে একলা পাবে আর আস্ত খেয়ে পেলবে। এ ভয়ে রিফাতের মা বেড়াতে যেত না। একদিন রিফাতের মামা তাদের বাড়িতে বেড়াতে এলো। রিফাত তার মামাকে দেখে ভীষণ খুশি হলো। রিফাতের মামা রিফাতের জন্য সঙ্গে করে অনেকগুলো চকলেট আনল। চকলেট পেয়ে রিফাত তার মামার গালে একটা চুমু দিল। তার মামাও তার কপালে একটা চুমু দিল। মামা, ভাগ্নে ও রিফাতের মা একসঙ্গে খাবার খেতে বসল। খেতে খেতে তারা সবাই বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রিফাতের মামা তার মাকে সাথে করে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল আর রিফাতকে বলল, তুই কোথাও যাবি না। আমি বিকালবেলায় চলে আসব। ওই দিন ছিল শুক্রবার। স্কুল বন্ধ ছিল। রিফাত অনেক্ষণ বাড়ি থাকার পর কিছুক্ষণের জন্য সে বাড়ির বাইরে গেছে। একটু সুযোগ পেয়ে শেয়াল পন্ডিত তাদের বাড়ির উঠোনে চলে এলো। শেয়ালটা এদিক-ওদিক তাকাল আর মুরগিটাকে ধরার জন্য সুযোগ ও বুদ্ধি পাকাতে লাগল। শেয়াল মুরগিটাকে বোকা বানানোর বানানোর জন্য সব পঁয়তারা করতে লাগল। হঠাৎ শেয়ালটার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। শেয়াল এটা জানত যে মুরগিটা শুধু রিফাত ও তার মায়ের ডাক শুনে বাসা থেকে বের হয় তাই শেয়ালটা রিফাতের মায়ের কণ্ঠস্বর নকল করে মুরগিটাকে ডাক দিল। শেয়ালটা যখন ডাক দিল মুরগিটা শেয়ালটার চালাকি ধরতে না পেরে সে বাসা থেকে বের হতে আরম্ভ করল। যেই না মুরগিটা বের হওয়ার জন্য মুখটা বের করল, অমনি শেয়ালটা মুরগির ঘাড়ে কামড় দিয়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে এলো। বের করার পর এক দৌড় দিয়ে মুরগিকে নিয়ে শেয়ালটা তার গৃহে চলে এলো। ওদিকে রিফাত বাড়িতে এসে দেখে মুরগিটা বাসায় নেই। মাটিতে রক্তের দাগ পড়ে রয়েছে। রিফাত এক দৌড়ে তার মামার বাড়িতে চলে গেল এবং তার মাকে নিয়ে এলো। মা রক্তের দাগ দেখে অজ্ঞান হয়ে গেল। আর বলতে লাগল মুরগি তুই এত বোকা আমার কণ্ঠস্বর চিনতে পারলি না। রিফাত মাটির ওপর হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর রিফাতের মায়ের জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরে পেয়ে আবার রিফাতের মা অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close