শরীফ সাথী

  ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

ডিগবাজি মারা কবুতর

বৈকালী হাওয়ায় পাটাচোরা তীরধরা দ্বীপে আমার প্রতিদিনই কাল্পনিক ও বাস্তবিক নদীতীরে বসা। প্রকৃতির মায়াময় নিদারুণ ছোঁয়ার শোভা বিস্তার করে আছে, সেই দেখে আসা অতীত থেকে আজ পর্যন্ত। সবুজ শ্যামলের বিচরণ ক্ষেত্রে পাখির কলরব, নদীর কলতানে জেলে মাঝির হাঁকডাক। দৈনন্দিন দৃশ্যে গড়া চারিপাশ। একঝাঁক কবুতর উড়ে যাওয়ার মুহূর্তে পাশে বসা কার্পাসডাঙ্গা বাজারের জিম ইলেকট্রনিকসের মালিক মনিরুল স্মৃতি মেমরি খুলে বলল, ছোট্ট থেকেই আমার কবুতর পোষা শখ। বিভিন্ন রকমের কবুতর। আমার শতেক কবুতরের একটি ডিগবাজি মারা কবুতর ছিল। ঠিক আমার আয়ত্তে কবুতরটি পোষ মেনেছিল। হাত বাড়ালে আমার হাতে, কাঁধে-ঘাড়ে এসে বসত। দুজনার বন্ধুসুলভ আচরণ ভালোলাগা ভালোবাসার অকৃত্রিম বন্ধন। কবুতরটির খুবই যতœ নিতাম। ব্যবসায়িক কারণে সময় অল্প হলেও রোজ দুপুরে বাসায় খেতে গিয়ে, কবুতরকে নিজ হাতে খাওয়াতাম। ওপর আকাশে উড়াতাম এবং হাত তালি দিলে অনবরত নানান ঢঙে কবুতরটি ডিগবাজি মারত। আবার হাত বাড়ালে নেমে এসে হাতে বসত। পোষ মানানো ডিগবাজি খাওয়া কবুতরটি দেখে অনেকেই খুব খুশি হতো এবং বলত বাহ্ পাড়ায় অমুকের একটা পোষমানা কবুতর আছে। আশপাশের গ্রামে ডিগবাজি মারা কবুতরের পাল্লা বা খেলার আয়োজন হলে আমার কবুতরটি সেরা বিবেচিত হতো।

কবুতরটি আমার বসত ঘরে, ঘুরে বেড়াত। সরিষা, চাল, চালের গুঁড়ো খেয়ে খেয়ে ঘুরত। মমতাময় মায়া জড়ানো কবুতরটি হঠাৎ করেই পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজি। কবুতর ঘরের সর্বদিক, বাড়ির আঙিনা, পাড়া-গ্রাম যারা কবুতর পোষে সবার বাড়ি খুঁজলাম। কোথাও পেলাম না। ভাবলাম তাহলে কি কোনো বিড়াল এসে কবুতরটি, না ভাবতেই পারছি না। বুকের স্পন্দন কেঁপে উঠছে। দিন-রাত চিন্তা কী হলো তার?

দিন চারেক পর ঘরের পিঁড়ির কোণে উপোড় হয়ে থাকা কাঠা তুলতেই কবুতরটি (আগেকার দিনে বেতের তৈরি কাঠা বা ধামায় চাল রাখা হতো এবং কাঠায় মেপে হাঁড়িতে ভাত আকায় (চুলোয়) দেওয়া হতো)। কবুতরটি হয়তো কাঠার কান্দায় বসতে কাঠার নিচে চাপা পড়েছে। কাঠার নিচে কত না ঝাপট মেরেছে। কীভাবে বেরুনোর জন্য কত না কষ্ট করেছে।

কবুতরটি কয়েক দিন কিছু না খেতে পেরে মাটিতে একেবারে চুপসে গেছে। কোনো রকম দিব দিব করছে জানটি। এমন দৃশ্য দেখে আমার চোখের কোণে জলের বান এলো। কবুতরটি হাতে নিয়ে মাথায় পানি মুখে পানি দিলাম। সে এতটায় দুর্বল হয়েছে, তাকে আর শত চেষ্টায়ও বাঁচাতে পারলাম না। উনিশ বছরের পোষ মানানো একান্ত ভালোবাসার প্রিয় কবুতরটি ধুঁকে ধুঁকে কয়েকদিন পর মারা গেল। খুব খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে মনে হলে বেদনার দাবানলে আজও জ্বলি। আমি সে রকম কবুতর আজ অবধী আর একটিও করতে পারিনি। এমন সময় মনিরুলের চোখের কোণে জল দেখে আমি বললাম, হাসি-কান্নার মাঝেই জীবন চলেরে। আজ ওঠা যাক আঁধার নেমে আসছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close