রুহুল আমিন রাকিব

  ১০ নভেম্বর, ২০১৮

শুভর কবুতর পালন

শুভর অনেক দিনের শখ কবুতর পালার। পাশের বাড়ির শাহিন কবুতর পালন করে।

শুভ বাবার কাছে আবদার করল বাজার থেকে কবুতর কিনে আনার জন্য।

কবুতর এনে না দিলে ভাত-পানি কিছুই খাবে না সে। এমনকি স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেবে বলে বাবার কাছে হুশিয়ারি সংকেত দিল।

শুভ বাবা-মায়ের বড় ছেলে, পড়ালেখায়ও অনেক ভালো ছাত্র। সবাই অনেক আদর করে।

শুভর কথা শুনে বাবা বলল, এই যে বাবু কালকে শুক্রবার।

তুমি কালকে আমার সঙ্গে বাজারে যাবে, দুর্গাপুর বাজারে গিয়ে তোমার পছন্দমতো তিন জোড়া কবুতর কিনে আনিও। বাবার কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল শুভ। রাতটা যেন কিছুতেই কাটছে না। দেখতে দেখতে রাত পেরিয়ে সকাল হলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলো, রোদের তেজ কমে এলো। শুভ বাবার সঙ্গে রিকশায় চড়ে বাজারে যাচ্ছে। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ঢেউ খেলছে!

মাঠঘাট পেরিয়ে একসময় শুভরা দুর্গাপুর বন্দরে এসে নামল। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে বাবার হাত ধরে সোজা কবুতর কিনতে গেল। রাস্তায় অনেক ভিড়। প্রতিটি দোকানে মানুষ আর মানুষ। শুভ বাবার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

একসময় ওরা কবুতর বিক্রির স্থানে গিয়ে দাঁড়ায়। শুভর মন খুশিতে নেচে উঠে! অনেক কবুতর এসেছে, সবগুলো কবুতর ভালো করে দেখল। শেষে ধূসর, কালো ও সাদা কালারের পাখনাওয়ালা তিন জোড়া কবুতর কিনল। শুভ কবুতর কিনে অনেক খুশি! বাড়িতে ফেরার পথে দোকান থেকে কবুতরকে খাওয়ানোর খাদ্য কিনল শুভর বাবা। দেখতে দেখতে একসময় বাড়িতে চলে এলো।

দুই দিন আগে কবুতর রাখার জন্য দাদুর কাছে একটা সুন্দর ঘর বানিয়ে নিয়েছে শুভ। রাতে ওই ঘরে রাখা হলো কবুতরগুলো। কয়েকদিন ওই ঘরের ভেতরে আটকিয়ে রেখে খাবার খাওয়ানো হলো। পাঁচ দিন পর ওদের মুক্ত করে দেওয়া হলো বন্দিঘর থেকে।

ছাড়া পেয়ে ডানা ঝাঁপটিয়ে বাড়ির পাশে আমগাছের শাখে উড়ে গিয়ে বসল। শুভর খুশি তখন দেখে কে! দেখতে দেখতে কয়েক দিনের মাঝে শুভর অনেক আপন হয়ে গেল কবুতরগুলো। খিদা লাগলে টিনের চালে উড়ে আসে।

শুভকে দেখলে বাক-বাকুম শব্দে ডাকাডাকি করে। হাত ইশারা করে ডাকলে ওমনি উড়ে এসে শুভর মাথায়-কাঁধে বসে। শুভর ভীষণ ভালোলাগে ওদের সঙ্গে খেলতে। স্কুল শেষে এখন বিকেলবেলা ওদের সঙ্গে হেসে-খেলে সময়গুলো কেটে যায়। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালবেলা স্কুলে গিয়েছিল শুভ। স্কুল শেষে বাড়িতে এসে দেখে, এক জোড়া কবুতর খড়কুটা খুঁজে ঠোঁটে করে নিয়ে বাসা বাঁধতেছে।

শুভ খুশিতে চিৎকার করে বাবা-মাকে ডাক দিয়ে দেখিয়ে বলে, ওর কবুতর ডিম পাড়বে।

দেখতে দেখতে অনেক দিন হয়ে গেল, পালা করে রোজ ডিমে তা দিয়ে এক দিন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটল। শুভর তিন জোড়া কবুতরের বাসায় এখন তিন জোড়া বাচ্চা কবুতর। আহা! কত আদর-যতœ না করে বাচ্চাগুলোর, ওদের বাবা-মা। নিজেরা না খাইয়ে ওদের ছানাগুলোর ঠোঁটে ঠোঁট ঢুকিয়ে পরম আদরে খাইয়ে দেয়। ছানাগুলোও ভীষণ ভালো, ওদের বাবা-মাকে দেখলে কিচিরমিচির শব্দ করে।

শুভর দিনগুলো এখন বেশ হাসিখুশিতে চলছে। পড়ালেখার পাশাপাশি এখন অনেকগুলো কবুতর পালন করে। পড়ালেখার খরচ এখন আর বাবা-মায়ের কাছে চেয়ে নিতে হয় না। কবুতর বিক্রির টাকায় এখন ওর পড়ালেখার খরচ বেশ চলে। শুভর বন্ধুরাও মাঝে মাঝে আসে ওদের বাসায় কবুতর দেখতে। শুভর কাছে অনুপ্রেরণা পেয়ে বাড়িতে গিয়ে নিজেরাও কবুতর পালন করে।

নিজের পড়ালেখার খরচ এখন আর ওদের বাবা-মায়ের কাছে আবদার করতে হয় না। কবুতর পালন করে, আয় করা টাকায় এখন দিব্বি চলে ওদের পড়ালেখার সব খরচ। ছোট্ট বন্ধুরা চাইলে তোমরাও শুভ ও তার বন্ধুদের মতো করে বাড়িতে কবুতর পালন করতে পারো। নিজের পড়ালেখার খরচ খুব সহজে নিজেরাই জোগাড় করতে পারো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close