নূরনবী সোহাগ

  ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

চর্যার রন্টি

চর্যা ঘুমের মধ্যে রন্টি বলে চিৎকার করে উঠে বসল। রাত ২টা ২০ মিনিট। মূলত, দুঃস্বপ্ন দেখার পর মানুষের গলা শুকিয়ে যায়। এ সময় পর্যাপ্ত পানির পিপাসা লাগে কিন্তু চর্যা পানি না খেয়েই আবার শুয়ে পড়ল। চর্যার চোখ থেকে এখন পুরোপুরিভাবে ঘুম চলে গেছে। তবে কিছুতেই রন্টির স্মৃতি চর্যার চোখ থেকে যাচ্ছে না। রন্টি, কোনো প্রিয় মানুষের নাম নয় তবে একটি প্রিয় বিড়ালের নাম। চর্যা রন্টিকে কোনো দোকান থেকে শখ করে কিনে আনেনি। চর্যা রন্টিকে পেয়েছে স্কুল থেকে ফেরার পথে। রন্টি তখন ড্রেনের ভেতর পড়ে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। চর্যা তখন রন্টিকে ড্রেন থেকে তুলে সোজা বাসায় নিয়ে আসে। সেবা করে সুস্থ করে তোলে। চর্যা নিজ হাতে তাকে দুধ-ভাত খাওয়ায় এবং একটি সুন্দর নাম রেখে দেয় ‘রন্টি’। ধীরে ধীরে রন্টি, চর্যার সার্বক্ষণিকের সঙ্গী হয়ে ওঠে। একসঙ্গে ঘুম, একসঙ্গে খাওয়া ছাড়াও রন্টি ছায়ার মতো থাকে চর্যার চারপাশে। চর্যা ছবি আঁকার সময় রন্টি এসে সামনে বসে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখত কীভাবে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে হয়ে ওঠে দারুণ সব প্রকৃতির ছবি। এমনকি রন্টি চর্যার সঙ্গে বসে সিনেমাও দেখে। সিনেমা দেখার সময় রন্টির চোখদুটো বেশ বড় বড় হয়ে যায়। মাঝে মাঝে সিনেমার গান শুনে রন্টির কান দুটো খাড়া হয়ে উঠত। হয়তো চর্যার কাছেই শিখেছে সিনেমা দেখার সময় এভাবেই মুখভঙ্গি করতে হয়! চর্যা স্কুলে যাওয়ার সময় রন্টি তাকে গেট অবধি পৌঁছে দেয়। আবার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত বাইরের বেলকনিতে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। চর্যার সঙ্গে তার ভারী বন্ধুত্ব হয়ে যায় আর হবেই বা না কেন! পুরো ঘর সুদ্ধ চর্যার কথা বলার সঙ্গী কেবল রন্টিই ছিল। চর্যা ছোটবেলায় তার মাকে হারিয়েছে। বাবা বড় চিত্রশিল্পী তাই তার ব্যস্ততাও কম নয়। যাইহোক চর্যা আর রন্টির দিন বেশ ভালোই কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন কোথা থেকে একটা ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দিল। সেদিন বিকেলে চর্যা, রন্টিকে নিয়ে মাঠে বেড়াতে গিয়েছিল। হঠাৎ কোত্থেকে একটা দুষ্টু ছেলে এসে রন্টির মাথায় ব্যাট দিয়ে আঘাত করে বসে। রন্টির মাথা ফেটে মুহূর্তে রক্তক্ষরণ হলো। চর্যা তাকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যায়। রন্টির সমস্ত মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়। রন্টি আর হাঁটতে পারে না। টানা সাতদিন অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে রন্টি মারা গেল। চর্যা যেন অতি শোকে পাথর হয়ে গেল। চর্যা রন্টিকে কবর দিল ফুলের বাগানের কাছে। কিন্তু চর্যা কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারে না যে, রন্টি আর নেই। চর্যা ঘুমের ঘোরে এখনো খুঁজে বেড়ায় রন্টিকে। মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্নের ভেতর চিৎকার করে

ওঠে রন্টি! রন্টি...

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close