মোনোয়ার হোসেন
শিমুল ও মেঘ
শিমুল শুধু আকাশের দিকে তাকায়। মাকে খোঁজে। মা আছে আকাশে বসে। তারা হয়ে। তাকে এটাই বলে সবাই। বলে, শিমুল, তোমার মা আকাশে তারা হয়ে বসে আছে। মা আকাশে আছে তো! তাই শিমুল শুধু আকাশের দিকে তাকায়। রাতে তাকায়। দিনেও তাকায়। রাতে তারার মধ্যে মাকে খোঁজে। বড় আর উজ্জ্বল তারা দেখলে চেঁচিয়ে ওঠে। বলে, এটাই আমার মা। আমার মা তো খুব ভালো। তাই বড় তারা হয়েছে। মিটিমিটি জ্বলছে। দিনে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে যায় তার। আকাশে মেঘ ভাসে। মেঘে ঢাকা পড়ে তারাগুলো। আড়াল হয়ে যায়। আড়াল হয়ে যায় মা। সে আর মাকে দেখতে পায় না। মন খারাপ হয়। মেঘদের বকা দেয়।
একদিন বিকেলবেলা। ইশকুল বন্ধ। হোম টিচারেও আসেনি। ঘরে বসে আর্ট করছে শিমুল। আকাশ আঁকছে। মাকে আঁকছে। ভালো হচ্ছে না। মন খারাপ হয়ে যায় তার।
আঁকা বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকায়। যদি মাকে দেখা যায়। মা কত সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকত। ছবি এঁকে তাকে দিত। আকাশে মাকে দেখা যায় না। মেঘেরা সাদা ডানা দিয়ে আকাশ ঢেকে রেখেছে। রাগ উঠে শিমুলের। বলে, ও মেঘেরা, তোমরা এত দুষ্টু কেন রে?
মেঘরা তো অবাক। বলে, আমরা দুষ্টু কেন?
দুষ্টুই তো। তা না হলে তোমরা কী ডানা মেলে আমার মাকে ঢেকে রাখতে?
মেঘ বলল, আমরা তো তোমার মাকে ডানায় ঢেকে রাখিনি। এই দ্যাখো, বলে মেঘ সরে যায়। দূরে নীল আকাশ দেখা যায়। কিন্তু আকাশে কোনো তারা নেই! মা নেই!
শিমুলের বুক কেঁপে ওঠে। আর্তনাদ করে বলে, ও মেঘরা, আকাশের তারারা কোথায় গেল রে? মাকে কেন দেখতে পাচ্ছি না রে?
মেঘেরা বলল, দিনের আলোয় তারাগুলো লুকিয়ে থাকে।
কেন?
দৈত্য সূর্যটা তাতানো রাগি রাগি আলোয় তাদের পুরিয়ে দেয় বলে।
সূর্যটাও আমার শক্র। বলে গাল ফুলিয়ে ঠোঁট ঝুলায় শিমুল।
মেঘেরা বলে, তোমার মা ওই আকাশের তারা হয়ে গেছি বুঝি ?
শিমুল বলল, হুঁ। তারপর বলল, জানো মেঘেরা, আমার মা খুব ভালো। আমাকে কত কিছু আঁকিয়ে দিত। হাতি আঁকিয়ে দিত। ঘোড়া আঁকিয়ে দিত। নদী আঁকিয়ে দিত। নদীতে চলা সারি সারি নৌকা আঁকিয়ে দিত। আরো কত কিছু যে আঁকিয়ে দিত! এখন আর ওসব আমাকে কেউ এঁকে দেয় না। বলে হু হু করে কেঁদে উঠল শিমুল।
শিমুলের কান্না দেখে মেঘদের মন খারাপ হয়ে যায়। মেঘদের মন খারাপ হলে তারা কালো হয়ে যায়। সব মেঘে কালো হয়ে গেল। যেন এক্ষনি বৃষ্টি নামবে! কালো থমথমে মুখে বলল, তুমি কেঁদো না। একটুও মন খারাপ করো না। আমরা তোমাকে অনেক কিছু এঁকে দেব। হাতি, ঘোড়া, নদী সবকিছু এঁকে দেব। তুমি শুধু কেঁদো না।
সত্যি মেঘেরা? কাঁদতে কাঁদতে হি হি হি করে হেসে উঠল শিমুল। চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। সত্যি বলছ, মেঘেরা?
মেঘেরা বলল, হুঁ।
শিমুল হাসে।
মেঘদের মন ভালো হয়ে যায়। তারা আবার কাশফুলের মতো ধবধবে সাদা মেঘ হয়। নানা ধরনের প্রাণী হয়। এই হয় আস্ত একটা বড় মা হাতি। পেছনে পেছনে ছোট দুটো বাচ্চা হাতি। আবার হয় বিশাল ঘোড়া! ঘোড়া হয়ে দৌড়ায়। কিচ্ছুক্ষণ পর আবার হয় নদী। তারপর পাখি। এভাবে আরো অনেক কিছু সেজে পুরো বিকেলবেলা শিমুলকে খেলা দেখায়।
খেলা দেখে খলখলিয়ে হেসে উঠে শিমুল। সত্যিই মেঘদের আঁকা সব ছবিই যেন মায়ের আঁকা ছবিগুলোর মতো।
"