সাজ্জাক হোসেন শিহাব

  ২১ জুলাই, ২০১৮

ঘুঘু

এক গ্রামে ছিল এক বন। সেই বনে বাসা বেঁধেছিল এক ঘুঘু। বনের সবচেয়ে উঁচু গাছের উঁচু ডালে ছিল তার বাসা। মাঝেমধ্যে ওখানে বসেই সে সুরেলা গলায় গান গাইতো। ঘু ঘু ঘু ঘু করে। আবার কখনো কখনো মাঠেঘাটে উড়ে বেড়াতো। খুঁটে খুঁটে ধান, গম খেতো। আবার ডালও খেতো। নানান ধরনের বীজ, ফল আর পিঁপড়াও ছিল তার খাবার তালিকায়। ঘুঘুটির গায়ের রং ছিল ফ্যাকাসে ধূসর। আর গলার ওপরে ছিল সাদা-কালো দাগ। পা দুটো হালকা লাল। আর ঠোঁটটা অল্প বাদামি। একা থাকলেও তার জীবনটা খারাপ ছিল না। কারণ এ গ্রামের লোকজন তাকে কোনো ঝামেলা করত না। তাকে মারার ফন্দিও করত না। ঘুঘু পাখিটি আগে যেখানে থাকত, সেখানকার লোকজন ছিল খুবই দুষ্টু। তারা গ্রামের গাছপালা কেটে সাবাড় করে ফেলেছিল। আবার খেতে ব্যবহার করত কীটনাশক। ফলে ঘুঘুটির অনেক বন্ধু মারা গেছে। আর তাই মনের দুঃখে সে এখানে এসেছে। এখানে তার দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু একদিন এক চৈত্রের দুপুরে একটা ঘটনা ঘটল। আচমকা জঙ্গলে সে আরেকটা ঘুঘুর আওয়াজ শুনতে পেল। সে অবাক হয়ে গেল। আরে, এই বনে আবার ঘুঘু এলো কোত্থেকে! এই নতুন জায়গায়, আরেক ঘুঘুর ডাক শুনে সে খুব অস্থির হয়ে উঠল। এরপর নিজের বাসা থেকে এদিক-সেদিক উড়তে লাগল সে। খুঁজতে লাগল নতুন ঘুঘুকে। শেষমেশ সে নতুন ঘুঘুকে খুঁজে পেল এক ঝোপে। নতুন ঘুঘুকে সে যে জায়গায় দেখল, সেটা তার পছন্দ হলো না। কারণ ওটা তো একটা খাঁচা। ওখানে ঢুকে নতুন ঘুঘু কী করছে! বনের ঘুঘুকে দেখে নতুন ঘুঘু আরো ডাকে। তার ডাকে বনের ঘুঘুর খুব ভালো লাগে। সে আর দেরি না করে ঢুকে পড়ে ভেতরে। ভেতরে ঢুকে সে ডাকতে থাকে। ঘুঘু, ঘুঘু। দুই ঘুঘুর ডাক একসঙ্গে শুনে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক লোক বের হয়। বনের ঘুঘু তা খেয়াল করার আগেই, সে দৌড়ে খাঁচার দরজা বন্ধ করে দেয়। অমনি খাঁচার ঘুঘুও ডাক বন্ধ করে দেয়। বনের ঘুঘু ব্যাপারটা বুঝতে পারে। এটা দুষ্টু শিকারির কাজ। সে এখন খাঁচায় বন্দি। এদিকে ঘুঘু শিকারি মনের সুখে খাঁচাসহ হেলেদুলে হাঁটতে থাকে। এমন সময় তার সামনে এসে দাঁড়ায় কয়েকজন গ্রামের ছেলে। এরপর শিকারিকে বলে, আপনি জানেন পাখি ধরা আইনত দ-নীয় অপরাধ। আপনি যদি এখনই এই ঘুঘুকে না ছাড়েন, তবে আমরা পুলিশে খবর দেব। শিকারি ভয়ে তাড়াতাড়ি বনের ঘুঘুকে ছেড়ে দেয়। বনের ঘুঘু খাঁচা থেকে বের হয়েই ঘু ঘু করে ডাকতে থাকে। তার ডাকে গ্রামের ছেলেরাও হাসতে থাকে। আর খাঁচার ঘুঘু চুপ করে বসে থাকে। আর ভাবে, ইস আমিও যদি বনে যেতে পারতাম! কিন্তু আমার পাখা তো কাটা! এই ছেলেরা এটা কেনো খেয়াল করছে না! আর কত দিন আমাকে এই শিকারির খাঁচায় চড়ে এখানে-সেখানে ঘুরতে হবে! পোষা ঘুঘুটার দিকে তাকিয়ে গ্রামের ছেলেরা বলে, একে ছাড়ছেন না কেন? শিকারি বলে এটা আমার পোষা ঘুঘু। দেখছ না খাঁচার দরজা খোলা। কিন্তু ও যাচ্ছে না। গ্রামের ছেলেরা শিকারিকে বিশ্বাস করে না। তারা খাঁচার কাছে আসে। এটা দেখেই শিকারি খাঁচা রেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। এরপর গ্রামের ছেলেমেয়েরা ঘুঘুটিকে মুক্তি দেয়। বনের ঘুঘু দূর থেকে সব দেখে। ছেলেরা চলে যাওয়ার পর বনের ঘুঘু তার কাছে আসে। কিছুদিন তাকে পাহারা দিয়ে রাখে। তার জন্য খাবার আনে। কিছুদিন যেতে না যেতেই পোষা ঘুঘুর ডানা গজায়। এরপর দুই ঘুঘু মিলে আনন্দে দিন পার করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist