তুষার কুমার সাহা
ভালোবাসা
বনের মাঝে একটি হরিণ ঘাস খাচ্ছিল। তখন হঠাৎ একটা শব্দ হয়। আশপাশের দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। সঙ্গে হরিণের মাও ছিল। কিন্তু তার মাকে দেখতে পেল না কোথাও। বাচ্চা হরিণটির বয়স মাত্র তিন মাস। যখন তার মাকে না দেখতে পায়, তখন-ই ডাকে। আর আজও তার মাকে দেখতে না পেয়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোনো শব্দ আসে না, আর মাও কোথায় খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর আবার ডাকে কিন্তু কোথাও মাকে দেখতে না পেয়ে, এবার সে কান্না করে। তার চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ে বেয়ে বেয়ে। এদিক-ওদিক ঘুরে আর ডাকে।
হঠাৎ করে দুজন মানুষকে দেখতে পেল। হাতে বন্দুক নিয়ে কাকে যেন খুঁজছে, আর একটি বস্তার মধ্যে কি যেন কাঁদে নিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা হরিণটি তখন একটি গাছের আবছা নিচে বসে দেখে যাচ্ছে দুজন মানুষ কী করছে। একজন বন্দুকটা নিয়ে ওই আগের মতো শব্দ করে গুলি করে, তখন কতগুলো হরিণ দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন বুঝতে পারে বাচ্চা হরিণটি যে ওই দুষ্টু দুটি মানুষ নিশ্চয় আমার মাকে বন্দি করেছে। তখন বাচ্চা হরিণটি চিন্তা করতে থাকে, তার মাকে কীভাবে মুক্ত করবে। কিছুক্ষণ পর যখন আবার শিকারের জন্য দুষ্টু দুটি মানুষ হরিণ খোঁজে। তখন একজন বলল, চল ভাই এই বনে তো অনেক ফলের গাছ আছে, তা কিছু পেড়ে খেয়ে নেওয়া যাক। সঙ্গের জন বলল, ঠিক বলেছিস ভাই, আমার মাথাতে তো এই কথাটা আসেনি। তখন ফল খাওয়ার জন্য গাছে উঠে দুজন। বন্দি হরিণটাকে মাটিতে রেখে যায়। বাচ্চা হরিণটা তখন বলল, এই তো সুযোগ মাকে মুক্ত করার। এই বলে আস্তে আস্তে বস্তাটার কাছে গিয়ে দেখে বাচ্চা হরিণটির মা। পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। গুলি লেগেছে একটি পায়ে। বাচ্চা হরিণটার চোখ দিয়ে টলটল করে অশ্রু পড়তে থাকে। তখন বাচ্চা হরিণটা কামড় দিয়ে আর একটা পা দিয়ে ছিঁড়তে থাকে বস্তাটা। বাচ্চা হরিণটার মা দেখতে পেল তার বাচ্চাকে। তার বাচ্চাকে দেখেই বলল, তুই এখান থেকে চলে যা, না হলে তারা তোকেও আমার মতো বন্দি করে ধরে নিয়ে যাবে। তুই এখান থেকে চলে যা। আমার যা হওয়ার হবে, তুই যায়। বাচ্চা হরিণটা বলল, না মা, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। হলে ওদের হাতে বন্দি হয়ে তোমার সঙ্গে মরব। আর না হয় তোমাকে মুক্ত করব। এসব কথা শুনে কিছুক্ষণ বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মা হরিণ। বাচ্চাটা মাকে মুক্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না। কিন্তু হঠাৎ করে একটি ইঁদুর এসে বস্তাটাকে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে। তখন বাচ্চা হরিণটি বলল ইঁদঁরকে, ভাই তুমি আমার মাকে কেন মুক্ত করলে? তোমাকে তো আমি বলিনি আমার মাকে মুক্ত করতে? তা কেন আমার মাকে মুক্ত করলে? তখন ইঁদুরটি বলল, তোমাদের এমন ভালোবাসা দেখে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। তাই তোমার মাকে আমি মুক্ত করেছি। এই বলে ইঁদর চলে গেল। আর বাচ্চা হরিণ তার মাকে পেয়ে যেন খুশিতে নেচে উঠল।
"