মোনোয়ার হোসেন

  ০৭ জুলাই, ২০১৮

পাকা কাঁঠাল ও বোকা গাধা

লোকালয় থেকে অনেক দূরে ছিল এক বিশাল বন। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে এক নদী। সেই নদীতে পানি পান করত বনে বাস করা পশু-পাখিরা। গাধা যে ঘাটে পানি পান করত সেখানে ছিল এক কাঁঠালগাছ। একদিন গাধা ঘাটে পানি পান করতে এসে দেখল ঘাটে সুঘ্রাণ ছড়িয়েছে। ম-ম গন্ধে চারপাশটা রি রি করছে। এত সুন্দর সুঘ্রাণ কোথা থেকে আসছে? গাধা চারপাশে তাকায়। তখন কাঁঠালগাছে বসে ছিল এক দুষ্টু বানর। গাধাকে চারপাশে তাকাতে দেখে বানর জিগ্যাস করল, গাধা ভাই, তুমি কি কাউকে খুঁজছ?

গাধা বলল, না।

তাহলে ওভাবে চারপাশে তাকিয়ে কী দেখছ? ভাবছি। কী? আজ ঘাটে এত সুন্দর সুঘ্রাণ আসছে কোথা থেকে? দুষ্টু বানর বুঝতে পারল গাধা আসলেই একটা গাধা। এখনো পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ বুঝে না। বলল, কি বলো গাধা ভাই, তুমি এখনো পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ বুঝতে পারো না? এটা হলো পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ। গাধা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, আহ! কী দারুণ সুঘ্রাণ! যার ঘ্রাণ এত সুন্দর না জানি খেতে আরো কত যে সুস্বাদু! বানর অবাক হয়ে বলল, কী বলো গাধা ভাই, তুমি কখনো কাঁঠাল খাওনি? গাধা বলল, না। ঠিক আছে আমি আজ তোমাকে কাঁঠাল খাওয়াব। বলে বানর গাছ থেকে একটা পাকা কাঁঠাল পেড়ে গাধাকে দিল। গাধা কাঁঠাল খেলো। সত্যিই কী সুমিষ্টি! তৃপ্তিভরে কাঁঠাল খেয়ে ঢেঁকুর তুলে বলল, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বানর ভাই। তুমি আজ আমাকে খুব মজাদার কাঁঠাল খাওয়ায়েছ।

বানর দাঁত বের করে হেসে বলল, সে আর এমন কী খাওয়ালাম, গাধা ভাই। তবে তোমাকে কাঁঠাল খাওয়াতে পেরে আমারও ভীষণ ভালো লাগছে। তারপর বলল, গাধা ভাই, তুমি খুব সহজ-সরল। কত কিছুই জানো না। তোমাকে দেখে আমার খুব মায়া হয়। কি জানি না বানর ভাই? অনেক কিছুই জানো না। এই যেমন, তুমি কি জানো আমি এই ভরদুপুরে তপ্ত রোদে কাঁঠালগাছে কেন বসে আছি? গাধা চোখ বড় বড় করে বলল, না তো। বানর বলল, এ জন্যই তো বলি তুমি কত কিছুই জান না। আমাকে এই কাঁঠালগাছে বসিয়ে রেখেছে আমাদের বনের রাজা।

কেন? এই কাঁঠালগুলো কেউ যেন চুরি করতে না পারে। কাঁঠাল চুরি করার জন্য বনের সব পশু হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

বলো কী! কেন?

হ্যাঁ গাধা ভাই। এই পাকা কাঁঠাল কেউ একবার যদি গায়ে মাখতে পারে তাহলে সারাজীবন তার শরীর থেকে ম-ম ঘ্রাণ বের হবে। সবাই তাকে সমীহ করবে। ভালোবাসবে। বানর একটু থেমে আবার বলল, গাধা ভাই, তুমি তো আমার ভালো বন্ধু। তুমি কত সুন্দর। তোমার গায়ের রঙ কী সুন্দর! সাদা। কিন্তু তুমি সহজ-সরল বলে সবাই তোমাকে বোকা বলে। কেউ তোমাকে ভালোবাসে না। তোমার জন্য আমারও খুব খারাপ লাগে, দুঃখ হয়। তাই আমি চাই তোমাকে সবাই ভালোবাসুক। তুমি চাইলে আমি কাঁঠাল ভেঙে তোমার গায়ে মাখিয়ে দেই।

বোকা গাধা ভাবল, আরে বানর ভাই তো ঠিকই বলছে। আমাকে তো কেউ ভালোবাসে না। সবাই গাধা বলে তিরস্কার করে। কাঁঠাল গায়ে মেখে সবাই আমাকে যদি ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে তবে মন্দ হয় না। বানরের কথামতো বোকা গাধা অনেকগুলো পাকা কাঁঠাল ভেঙে গায়ে মাখল।

আহ! শরীর থেকে কী সুন্দর ম-ম ঘ্রাণ বেরুচ্ছে! গাধা খুব খুশি।

কিছুক্ষণ পর কাঁঠালের আঠায় শরীর টান পড়ে। টনটন করে। বলল, বানর ভাই, শরীরে তো টান পড়ছে। ব্যথায় টনটন করছে। দুষ্টু বানর একবস্তা তুলা দিয়ে বলল, এই তুলাগুলো ভালো করে গায়ে মেখে নাও, আঠাগুলো উঠে যাবে। শরীর আর টনটন করবে না। বোকা গাধা শরীরে ভালো করে তুলাগুলো মেখে নিলো। কিন্তু এ কী! শরীর থেকে তুলা যে আর উঠছে না। সে তাকাল বানরের দিকে। বানর আর নেই। দুষ্টু বানর পালিয়েছে। গাধা বুঝতে পারল বানর তাকে বোকা বানিয়ে ঠকিয়েছে। বোকা গাধা নিজের বোকামির জন্য অনেক কাঁদল। কিন্তু এখন আর কেঁদে কী লাভ? সে নদীর তীর থেকে উঠে বনের দিকে রওনা হলো। বনে পৌঁছাতেই বনের সব পশু-পাখি হাঁ করে তার দিকে তাকাল। এটা আবার কোন আজব প্রাণী আমাদের বনে এলো রে বাবা! তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো রাজার কাছে। রাজা বলল, কে তুমি?

গাধা বলল, আমি গাধা।

তুমি গাধা? আমি গাধা চিনি না? তুমি আমাকে বোকা বানাতে চাচ্ছ? বলে হুঙ্কার দিয়ে উঠল বনের রাজা। তারপর সেনাপতিকে বলল, একে গ্রেফতার করে জেলে ভরে রেখো। দুদিন পর গাধার শরীর থেকে বের হতে লাগল কাঁঠালের পচা ভঁটকা গন্ধ। রাজবাড়ি পচা গন্ধে ভরে গেল।

রাজা হুকুম দিল এই পচা ভঁটকা গন্ধের অদ্ভুত জানোয়ারটাকে বনের বাইরে রেখে এসো। রাজার হুকুমে গাধাকে বন থেকে বিতাড়িত করা হলো। না জেনে অন্যের বুদ্ধি শুনে কাজ করে গাধার দুঃখের আর সীমা রইল না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist