ইউনুস আহমেদ

  ০৭ জুলাই, ২০১৮

বাদামি খেঁকশিয়াল এবং উড়ো হাঁসের ছানা

পাতা ঝরা এক বন। উঁচু উঁচু গাছের সারি। বুড়ো এক গাছের খোঁড়লে থাকে এক উড়ো হাঁস। সেই উড়ো হাঁস এক শীতে অতিথি হয়ে এসেছিল এই বনে। পাতা ঝরা বনটি তখন খুব ভালো লেগে গিয়েছিল উড়ো হাঁসের। তারপর থেকে এখানেই আছে সে। উড়ো হাঁস খোঁড়লে ডিমও পেড়েছে। পাঁচ পাঁচটা ডিম। উড়ো হাঁস ডিমের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর কদিন পরই ডিম থেকে বের হবে তার ছানারা। তখন কত্ত মজা হবে। ছানাদের সঙ্গে তার সময় ভালোই কাঁবে। উড়ো হাঁস ডিমে তা দেয় সারা দিন। তবে মাঝেমধ্যে ওড়ে যায় একটু দূরের ওই শান্ত এক বিলে। নির্জন বিলের চারদিকে গাছ। প্রচুর ছোট মাছ ওই বিলে। উড়ো হাঁস বিলের জলে সাঁতরায়, মাছ খায় আর ভাবে। ভাবে ছানাগুলো ডিম থেকে বের হয়ে একটু বড় হলে এখানে নিয়ে আসবে। মাছ খেয়ে খেয়ে ছানাগুলো দ্রুত বড় হয়ে উঠবে। ছানাগুলো যখন শক্ত-সামর্থ্য হয়ে উঠবে, তখন সে ছানাদের নিয়ে চলে যেতে পারবে নিজের দেশ সাইবেরিয়ায়। ছানারা নিজের দেশ সাইবেরিয়া দেখে নিশ্চয় অনেক অবাক হবে। এই পাতা ঝরা বনে উড়ো হাঁসের একমাত্র বন্ধু হলো সাতরঙা কাঠঠোকরা। কাঠঠোকরা তার ধারালো ঠোঁট দিয়ে গাছের বাকল থেকে পোকামাকড় খুঁটে খুঁটে খায় আর হাঁস বন্ধুর সঙ্গে গল্প করে। উড়ো হাঁস যখন শান্ত বিলে মাছ খেতে যায় তখন কাঠঠোকরা ডিমগুলো পাহারা দেয়। এক দিন অবাক করা এক কা- ঘটল। ছানারা ডিম থেকে বের হতে শুরু করল। উড়ো হাঁসের আনন্দ দেখে কে? কাছ দিয়ে ওড়ে যাচ্ছিল সাতরঙা কাঠঠোকরা। উড়ো হাঁস ডেকে বলল, ‘বন্ধু দেখে যাও, আমার লক্ষ্মী ছানারা বের হতে শুরু করেছে। ওরা এখন এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখবে।’ কাঠঠোকরা এসে খোঁড়লের কাছে বসল। এক এক করে ছানারা ডিমের খোসা ফাটিয়ে বের হচ্ছে। কাঠঠোকরা বলল, হাঁস বন্ধু, তোমার অপেক্ষার দিন শেষ হলো তাহলে। এখন থেকে ছানাদের নিয়ে তোমার সময় ভালোই কাঁবে। ‘যাই বন্ধু, ভালো থেকো’ বলে কাঠঠোকরা চলে গেল।

বেশ কয়েকদিন পরের কথা। উড়ো হাঁসের ছানারা বেশ বড় হয়ে উঠেছে। এখন তো ওদের বিলে মাছ শিকারের সময় হয়ে গেছে। উড়ো হাঁস তার পাঁচটা ছানাকে ডেকে বলল, বাচ্চারা শোন, তোমাদের এখন খোঁড়ল থেকে বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমি যেভাবে লাফ দিয়ে নিচে নামছি, তোমরাও সেভাবে নামবে। সাহস করতে হবে বাছারা ভয় পাবে না। এ কথা বলে উড়ো হাঁস লাফ দিয়ে নিচে নামল। দেখাদেখি সবচেয়ে বড় ছানাটা লাফ দিল। গাছের নিচে ঝরা পাতারা যেন নরম বিছানা পেতে রেখেছে। এভাবে একজনের পর একজন হাঁস ছানারা ওড়ে ওড়ে নিচে নামতে লাগল। উড়ো হাঁস মুগ্ধ হয়ে ছানাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। শেষ ছানাটি নিচে নামার সময় খেঁকশিয়ালের ডাক শুনতে পেল উড়ো হাঁস। ভয়ে তার বুকটা দুরু দুরু করতে লাগল। এমন সময় সাতরঙা কাঠঠোকরা ওড়ে এলো। ‘হাঁস বন্ধু, দ্রুত ছানাদের নিয়ে বিলের দিকে চলে যাও, হতচ্ছাড়া এক বাদামি খেঁকশিয়াল এদিকেই এগিয়ে আসছে। উড়ো হাঁস চেঁচিয়ে বলল, বাচ্চারা, দ্রুত দৌড়াও, বিলের দিকে। একটুও ভয় পাবে না। এদিকে গর্ত থেকে বাদামি খেঁকশিয়াল বের হয়ে ওদের দিকেই আসছে। ছানারা ছোট ছোট পায়ে দ্রুত বিলের দিকে দৌড়াতে লাগল। ওদিকে কাঠঠোকরা রাগে শরীর ফুলিয়ে বাদামি খেঁকশিয়ালের দিকে তেড়ে গেল। ছানারা ততক্ষণে বিলের পানিতে নেমে পড়েছে। ‘আহ্, বাঁচা গেল’-শান্ত ভঙ্গিতে বলল উড়ো হাঁস। কাঠঠোকরার ভীষণ ঠোকর খেয়ে লেজ গুটিয়ে খেঁকশিয়াল পালিয়ে গেল। উড়ো হাঁস তার কাঠঠোকরা বন্ধুকে অনেক ধন্যবাদ দিল। আর ওদিকে বিলের জলে নামতে পেরে ছানাদের আনন্দ দেখে কে! ছানারা আরেকটু বড় হলে সে চলে যেতে পারবে নিজের দেশ সাইবেরিয়ায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist