মোহাম্মদ অংকন
হাতির ফুটবল খেলা
গ্রাম পেরিয়েই গভীর এক জঙ্গল। সে জঙ্গলে অনেক পশুপাখি, জীবজন্তু বসবাস করে। এই পশুপাখিদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে ভরপুর। যেমন : মহিষ যখন হিংস্র সিংহের খপ্পরে পড়ে, তখন বনের সবাই দলবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করে। আবার সিংহ যখন কোনো শিকারির জালে আটকা পড়ে যায়, তখন সবাই বুদ্ধি করে তাকে মুক্তির ব্যবস্থা করে। এতসব বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে থাকে একমাত্র ধূর্ত শেয়াল। তার মাথায় যেমন বুদ্ধি, তেমনি সে অতি চালাক। এর জন্য জঙ্গলের সবাই শেয়ালকে সেনাপতি হিসেবে মান্য করে।
এক দিন জঙ্গলে এক মস্তবড় হাতি বেড়াতে এলো। জঙ্গলের সবাই হাতিকে দেখে ভীষণ খুশি হলো। তারপর তাকে সবাই মিলে সংবর্ধনা দিল। তার থাকার জন্য বিশাল ঘর করে দিল। খাওয়ার জন্য অনেক কলাগাছ দিল। হাতি জঙ্গলের সবার এত্ত এত্ত আতিথেয়তা দেখে ভীষণ মুগ্ধ হলো। ফলে সে অনেক দিন এ জঙ্গলে থাকার ইচ্ছা পোষণ করল। জঙ্গলে বেড়াতে এসে হাতির দিনগুলো ভালোই কাটছিল। জঙ্গলে দারুণ দারুণ সব খাবার আর বিকেলে খেলাধুলা করতে পারায় তার মজাই লাগছিল। তারও সুন্দর ব্যবহারে জঙ্গলের সবাই পুলকিত।
কয়েকদিন পর জঙ্গলে আরেকটি মস্তবড় হাতি বেড়াতে এলো। তাকে দেখেও সবাই ভীষণ খুশি হলো। তাকেও ওই হাতির মতো করেই সংবর্ধনা দেওয়া হলো। বিশাল ঘর তৈরি করে দেওয়া হলো। খাবার-দাবার দেওয়া হলো অনেক। কিন্তু এ হাতিটি ছিল একটু দুষ্টু প্রকৃতির। তাই খাবার পছন্দ না হওয়াতে সব দূরে ছুড়ে মারল। ঘরটাও চুড়মার করল। তার ফেলে দেওয়া খাবারগুলো ভদ্র হাতির কাছে গিয়ে পড়ল। সে ভাবল, এই হাতির স্বভাব ভালো না। এই হাতির সঙ্গে এই জঙ্গলে থাকলে আমাদের সমগ্র হাতি জাতির বড় দুর্নাম হবে। সবাই ভাববে, হাতিরা জঙ্গলের সবচেয়ে দুষ্টু প্রাণী। তাই এমন পরিস্থিতি দেখে ভদ্র হাতিটি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
এদিকে দুষ্টু হাতি জঙ্গলে থাকতে লাগল। পুরো জঙ্গল ঘুরে ফিরে দেখল। ঘুরতে ঘুরতে যাকে সামনে পায়, সে তাকেই লম্বা সুর দিয়ে আঘাত করতে লাগল। সবার বাড়িঘর ভাঙতে লাগল। হাতির এমন কা- দেখে সবাই তাকে অত্যাচারী হাতি বলে আখ্যায়িত করল। জঙ্গল থেকে চলে যেতে মিনতি করল; কিন্তু অত্যাচারিত হাতি কারো কথাই শুনল না। বরং সে গর্জন করতে লাগল। তার গর্জনে জঙ্গলের সবাই অতিষ্ঠ হয়ে গেল। তার বিকট শব্দের কারণে অনেকে ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল।
এমন দুর্যোগময় সময়ে অত্যাচারী হাতির সব অপকর্ম প্রতিহত করতে জঙ্গলের সবাই সভা ডাকল। কীভাবে এই হাতিকে জঙ্গল থেকে তাড়ানো যায়, এ নিয়ে সবাই আলোচনা করল। কিন্তু কারো মাথায় তেমন কোনো বুদ্ধি এলো না। মুশকিল হয়ে গেল তাকে তাড়ানোর উপায় বের করা। হঠাৎ বুদ্ধিমান শেয়াল বলে উঠল, ‘আমি একটি বুদ্ধি পেয়েছি। তোমরা শুধু আমার পাশে থাকো। দেখো, আমি হাতিকে কীভাবে জঙ্গল থেকে বিতাড়িত করি। শেয়ালের কথা শুনে সবার মুখে স্বস্তির ছাপ দেখা গেল।’
জঙ্গলের সবাই মিলে একদিন নদীর ওপারের খোলা মাঠে বিশাল ফুটবল খেলার আয়োজন করল। ফুটবল খেলা হাতির অনেক প্রিয়। তাই অত্যাচারিত হাতিকে ফুটবল খেলার জন্য নিমন্ত্রণ করা হলো। হাতি ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতেই যাচ্ছিল। কিন্তু সামনে নদী বাধা হয়ে পড়ল। তখন হাতি শেয়ালকে বলল, ‘আমি কীভাবে নদী পার হবো?’ বুদ্ধিমান শেয়াল বলল, ‘ভাই, তোমার পা তো অনেক লম্বা। তাই নদী দিয়ে হেঁটে আসতে পারবে। এ ছাড়া নদীতে তেমন কোনো পানি নাই।’ হাতি শেয়ালের কথা বিশ্বাস করে তার কথামতো নদীতে নামতে থাকল। কয়েক পা বাড়াতেই হাতি ক্রমেই ডুবে যেতে লাগল। তখন চিৎকার করতে লাগল, ‘আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও।’ হাতির এমন মরমর অবস্থা দেখে সবাই হাসতে লাগল। তখন শেয়াল বলল, ‘হাতি ভাই, তোমাকে একটি শর্তে আমরা বাঁচাতে পারি, তা হলো তোমাকে আজই এ জঙ্গল থেকে চলে যেতে হবে।’ বিপদগ্রস্ত হাতি শেয়ালের কথায় রাজি হয়ে গেল।
যেহেতু অত্যাচারিত ও দুষ্টু হাতি জঙ্গল ছেড়ে চলে যাবে, তাই শেয়ালের কথামতো সবাই তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো। বিরাট একটি রসি ফেলে হাতিকে নদীর কিনারায় টেনে আনল। হাতি মৃত্যু থেকে বেঁচে গেল। অতঃপর সবার কাছ থেকে তার অপকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে ফিরে গেল। তখন শেয়াল বলল, যেকোনো বিপদই হোক না কেন, সঠিক বুদ্ধি প্রয়োগ করে সবাই মিলে তা প্রতিহত করলে, তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। দুষ্টু হাতি চলে যাওয়ার পর এ জঙ্গলে আবারও শান্তি ফিরে এলো।
আগের মতো সবাই একত্রে বসবাস
করতে থাকল।
"