শাহেদ শুভ্র হোসেন
গল্প
চ্যাম্পিয়ন
স্কুলে দুষ্টুমিতে সেরা সামিন। পড়াশোনা করতে তার একদম ভালো লাগে না। ক্লাস পরীক্ষাতে একেবারে ডাব্বা, হোমওয়ার্কগুলোও ঠিকমতো জমা দেয় না। ক্লাস টিচার প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকেন সামিনের নামে একটার পর একটা কমপ্লিন নিয়ে। দুষ্টুমি করলেও সামিন কারো সঙ্গে মারামারি করে না। এদিক দিয়ে সে কিছুটা হলেও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সামিন শিক্ষকদের খুব সম্মান করে, তাদের শ্রদ্ধা করে। শুধু পড়তে বসলেই তার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। বাবা-মা খুব চিন্তিত ছেলেকে নিয়ে।
এরই মধ্যে এক দিন হেডস্যার একটা চকচকে নতুন ফুটবল কিনে এনে ঘোষণা দিলেন, তাদের স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলবে উপজেলা পর্যায়ে। সেখানে জিতলে তাদের দল জেলাপর্যায়ে খেলবে। কিন্তু সে তো অনেক দূর। স্বপ্নের মতো।
স্কুলের ছেলেদের তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল। দল গঠন করবেন হেডস্যার। সামিনও গিয়ে মাঠে দাঁড়াল। সামিনকে দেখে সবাই হাসাহাসি করল। এমনকি স্যার-ম্যাডামরাও অবাক হয়ে গেলেন। এই ছেলে আবার কী খেলবে। খেলতে গিয়ে তো এ লাল কার্ড খেয়ে বসে থাকবে। কিন্তু হেডস্যার সামিনকে দলে রাখলেন। কাউকে খাটো করে দেখতে নেই। ছেলেদের দুটি দলে ভাগ করে মাঠে নামালেন হেডস্যার। তিনি রেফারি। খেলা শুরু হয়ে গেল। সামিনের দল খেলায় ৫-১ গোলে জিতে গেল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য সামিন একাই করল চার গোল। কী তার খেলা, পাসিং ও ড্রিবলিং। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে খেলা দেখল সামিনের। সামিনের প্রশংসায় সব স্যার, ম্যাডাম, দর্শকরা পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন।
এবার কি তাহলে তাদের স্কুল জিততে পারবে খেলায়। দিন যতই যাচ্ছিল এ প্রশ্নটা ঘুরছিল সবার মধ্যে। সামিনকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা বাড়তেই থাকল। এদিকে ক্লাসে সামিনও তার দুষ্টুমি করা ছেড়ে দিল। সে সব বন্ধুর সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে শুরু করল।
এরপর একে একে গ্রুপ পর্বে জিতে উপজেলা পর্ব শেষ করে এলো সেই দিনটি। গ্রুপপর্বে সব দলকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে উঠল সামিনের স্কুল। আজ সেই ফাইনাল খেলা। মাঠ ভরে গেল দর্শকে। অনেক বড় বড় মানুষ এসেছে খেলা দেখতে। খেলা দেখতে এসেছে সামিনের বাবা-মাও। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে দিলেন। খেলা শুরু হয়ে গেল। প্রতিপক্ষ স্কুলের সবার টার্গেট যেন সামিন। চারজন সব সময় পাহাড়ায় রেখেছে সামিনকে। কিন্তু ওরা তো আর সামিনকে চেনে না। মাঝমাঠ থেকে রফিক একটি বল এগিয়ে দিল সামিনকে। সামিনকে তো কিছু একটা করতেই হবে। তার ডান পাশে যে ছিল ওই ছেলেটিকে বোকা বানিয়ে সে এগিয়ে গেল একটু সামনে। এরপর ড্রিবলিং করে আর একজনকে পেছনে ফেলল। সামনের জনকে কাটিয়ে নিয়ে আর একটু সামনে এগোল। এরপর শেষজন তার গতির কাছে ছিটকে গেল। এখন সামনে শুধুই গোলকিপার। তার পায়ের জাদুর কাছে গোলকিপার অসহায় আত্মসমর্পণ করল। বল গিয়ে জড়াল জালে। আর চারপাশে ‘গোল’ ‘গোল’ বলে সবাই চিৎকার করে উঠল। রেফারি শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলেন। খেলা শেষ হয়ে গেল। সামিনের স্কুল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। হেডস্যার সামিনকে ঘাড়ে তুলে সম্পূর্ণ মাঠ ঘুরে নিয়ে বেড়ালেন। আজকের দিনটি তাদের স্কুলের জন্য স্মরণীয় দিন। এ রকম দিন এর আগে আসেনি কখনো। প্রধান অতিথির কাছে থেকে পুরস্কার নেওয়ার সময় সাংবাদিকরা ঘিরে ধরল সামিনদের ফুটবল টিমকে। প্রচুর ছবি উঠল। কালকের পত্রিকায় বড় করে ছাপা হবে এসব ছবি। জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আর একটা দায়িত্ব বেড়ে গেল ওদের। এবার যে চ্যাম্পিয়ন হতে হবে সারা দেশের মধ্যে।
এ চ্যালেঞ্জটাও হয়তো পেরিয়ে যেতে পারবে সামিনদের ফুটবল টিম। কারণ অসম্ভব বলে মানুষের কাছে কিছুই নেই। পরিশ্রম করলে ফল অবশ্যই পাওয়া যাবে। যার প্রমাণ সামিনদের ফুটবল টিম আজকে সবাইকে দেখিয়ে দিল।
"