আসাদউজ্জামান খান

  ০২ জুন, ২০১৮

স্বপ্ন

শরীফ মিঞা ও শাহেলার সুখের সংসার। তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় তেরো বছর। নলছিটির কাপুরকাঠি গ্রামে তাদের বাড়ি। বাড়ির চারপাশে গাছ আর গাছ, মনে হয় বাড়িটি কোনো একটি বড় বনের ভেতরে। সকালে পাখির কলরব আর মোরগের ডাকে তাদের ঘুম ভাঙে। শরীফ মিঞা একজন কৃষক। তার স্ত্রী গৃহিণী। শরীফ বেশি লেখাপড়া করেনি আর শাহেলা মোটে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয়। শাহেলার অনেক লেখাপড়া করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বিয়ে হওয়ার পর আর লেখাপড়া হয়নি। তাই শাহেলার স্বপ্ন, সন্তানদের অনেক লেখাপড়া করাবে। সে বোঝে শিক্ষিত হতে হলে অনেক লেখাপড়া করতে হয়।

শরীফ মিঞা খেতখামারে কাজ করে, যা উপার্জন করে তা দিয়ে ভালোই তাদের সংসার চলে। বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। বিয়ে করার দুই বছর পর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখে রাত্রী। রাত্রীর জন্ম হওয়ার সময় শরীফের বাবা বেঁচে ছিল, সে অনেক খুশি হয়েছিল, নাতনি হয়েছে এই জন্য। শরীফ তার একমাত্র ছেলে। একটি মেয়ে ছিল তাও আবার ছোটবেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছে। রাত্রী জন্ম হওয়ার পর রাত্রীর মামা বাড়িতে সে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে সুসংবাদ দেয়, তার নাতনি হয়েছে। রাত্রীর বয়স যখন এক বছর, তখন তার দাদা মারা যান।

শরীফ শাহেলাকে বলে, আমার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে অনেক বড় ডাক্তার বানাব। ডাক্তার হয়ে সে গ্রামের অসহায়, দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা করবে। গ্রামের অসহায় মানুষগুলো চিকিৎসা করাতে পারে না টাকার অভাবে। তাই আমার যত কষ্ট হোক, যত টাকা লাগুক আমি ওকে ডাক্তার বানাব! শাহেলা বলে, তুমি ঠিক বলেছ, আমরা একটা কাজ করি, আমাদের সংসারে তো এখন বেশি টাকা লাগে না, তাই এখন থেকেই আমাদের টাকা জমাতে হবে, ডাক্তারি পড়াতে অনেক টাকা লাগে। শরীফকে দিয়ে রাত্রীর নামে একটা অ্যাকাউন্ট করায় শাহেলা, যখন যত টাকা পারে জমা রাখে তারা।

ইদানীং শাহেলার সঙ্গে শরীফের প্রায় ঝগড়া হয়। কিছু হলেই কথা-কাটাকাটি হয়। তবে তাদের ঝগড়ার রেশ বেশিক্ষণ থাকে না। কিছুক্ষণ যেতে না যেতে আবার তারা মিলিত হয়, কথা বলে। শরীফকে শাহেলা এক রাতে বলে, দেখ আমাদের মধ্যে আগে কোনো ঝগড়া হতো না, ইদানীং তুমিও আমার সঙ্গে ঝগড়া করো আর আমিও করি, ঝগড়া করে কী হয় বল? দুজনে শুধু কিছুক্ষণ কথা-কাটাকাটি করি, কিছুক্ষণ গেলে আবার আমরা এক হই। দেখো রাত্রী বড় হচ্ছে, আমরা যদি এ রকম ঝগড়া করি তাহলে রাত্রী তো এগুলো শিখবে! এখন যা আমরা শেখাব তা রাত্রী শিখবে। তাই আমরা কারণে-অকারণে আর ঝগড়া করব না, তুমি কি বল? শরীফ বলে, হ্যাঁ ঠিক বলছ, আমরা আর কখনো ঝগড়া করব না।

ক্রমে ক্রমে রাত্রী বড় হয়, তাদের স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। রাত্রীর বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন রাত্রীকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। নিয়মিত সে স্কুলে যায়। লেখাপড়া করে। এরই মধ্যে শরীফ ও শাহেলার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়। এবার তাদের পুত্রসন্তান হয়েছে। নাম রেখেছে রাহাত। এখন তাদের চারজনের সংসার। ভালোই কাটছে তাদের জীবন। লক্ষ্য এখন একটাই ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়া। টাকাও অনেক জমিয়েছে। তা ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচে লাগবে, এই ভেবে খরচ না করে আরো জমায়।

একদিন সন্ধ্যায় রাত্রীর ছোট মামা ফোন করে বলে, আমি জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ দেশে আসব। তোমরা আমাকে নিতে ঢাকায় আসবে। তিনি এখনো বিয়ে করেননি। বিদেশে থাকে। রাত্রীর বড় মামা ঢাকায় সপরিবারে থাকেন। রাত্রীকে তার বাবা বলেন, আমরা তোমার ছোট মামাকে ঢাকা থেকে আনতে যাব। তা শুনে রাত্রী আনন্দে আত্মহারা! সে কখনো ঢাকা যায়নি। ছোট মামা দেশে আসবেন, তার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন, সে কথা ভুলেনি রাত্রী। অনেক দিন আগে বলেছিলেন যখন দেশে আসবেন, তখন তার জন্য খেলনা নিয়ে আসবেন।

ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ তারা ঢাকায় যাবে। সেখানে থাকবে বড় মামার বাসায়। ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শাহেলা। রাত্রীর তো দিনই কাটে না কবে যে ঢাকা যাবে এই ভেবে! মামা আসবেন, মামাতো ভাই জনির সঙ্গে দেখা হবে। অনেক জায়গায় ঘুরবে। কত যে মজা হবে-এগুলোই শুধু ভাবে।

অবশেষে তারা ঢাকায় এলো। বড় মামার বাসা উঠল। মামি তাদের অনেক আদর করেন। যত্ন করেন, ভালো ভালো খাবার তাদের খেতে দেন। বড় মামা তাদের চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা, জাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ ঘুরতে নিয়ে যান। রাত্রী অনেক আনন্দ পেয়েছে এই জায়গাগুলোয় ঘুরে। সে ঘুরতে অনেক ভালোবাসে। পড়ালেখা করতেও ভালোবাসে।

গ্রামে এখন অনেক শীত কিন্তু ঢাকায় তেমন শীত নেই। এ ভেবে রাত্রী অবাক হয়! মামাকে জিজ্ঞাসা করে, মামা গ্রামে এখন তো অনেক শীত কিন্তু ঢাকাতে কম শীত কেন? মামা বলেন, গ্রামে মানুষের বসবাস কম। গাছপালা অনেক। খোলামেলা মাঠ রয়েছে আর শহরে দেখো না কত মানুষ। গাছপালা তেমন নেই। খোলামেলা মাঠ নেই। তাই শহরে শীত কম।

এরই মধ্যে রাত্রীর ছোট মামা দেশে এসেছেন। মামাকে আনতে এয়ারপোটে সবাই মিলে একটা গাড়ি রিজার্ভ করে গিয়েছিল। সেখানে রাত্রী দেখেছে কিছুক্ষণ পর পর ওপর থেকে প্লেন উড়ে আসে আর যায়। অনেক শব্দ করে প্লেনগুলো ওড়ে। আরো কিছুদিন তারা ঢাকায় থাকে এরপর সবাইকে নিয়ে আবার গ্রামে আসে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist