নবাব আবদুর রহিম
পান্তা ইলিশ
স্কুল ছুটি হতেই বাড়ির পথে ছুটল রাসেল। হেটে চলল ধানখেতের আলপথ বেয়ে। এরপর মেঠোপথ পেরিয়ে বাড়ি। মা তখনো রান্না শেষ করতে পারেনি। তা দেখে যেন খিদে পেয়ে গেল বেশি! করুণ সুরে কি যেন বলল মাকে। খেয়াল করেননি তিনি! উপায় না দেখে উঠোনে খেলতে গেল তখন।
‘রা-সে-ল রে!’ বলে চিৎকার শোনা গেল। রাসেল বুঝল খাবার রেডি এখন। দৌড়ে বাড়ি গিয়ে হাত-পা না ধুয়েই পাটির ওপর বসে গেল। আব্বা আগে থেকেই বসে ছিলেন। মা ভাত বেড়ে দিলে খেতে খেতে রাসেল বলল, ‘মা কাইল পান্তা ইলিশ খাব। হাজার বছর থিকা বাঙালিরা পান্তা ইলিশ খায়।’
বাবা ইলিয়াস সাহেব হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে কইছে আব্বা?’
Ñ‘স্যারে!’
এই নতুন তথ্য পেয়ে অবাক হলেন নাসিমা বেগম। সাথে দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারে সোনার হরিণ ইলিশের কথা তোলায় একটু ক্ষুব্ধও হলেন বোধ হয়। পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, ‘আইজও তো পান্তা খেলি। কাইলও খাওয়াই লাগবে। মরিচ-পেঁয়াজ দিয়াই হামরা পান্তা খাই। পেঁয়াজের তো দাম এখন আকড়া! ইলশ্যার কথা
তোর বাপকে ক!’
বাবার ব্যাপারে নীরবই থাকে রাসেল। ইলিয়াসই নিজে থেকে বলল, ‘ইলশ্যা ক্যামনে খাওয়াই আব্বা! টাকা আছে কি?’
আর কিছু বলতে পারে না রাসেল। ক্লাস থ্রিতে পড়লেও বাবাকে দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করতে দেখছে সে। হঠাৎ চারদিক আঁধার হয়ে গেল! মৃদু বাতাসও শুরু হয়েছে। কালবৈশাখীর আভাস! ইলিয়াস সাহেব ওপর দিকে তাকালেন কিছুক্ষণ। এটুকু বাতাসেই টিনগুলো আওয়াজ করে। ইলিয়াস বললেন, ‘টিনগুলান ঠিক করন লাগবো। না হয় ভাত তো ভিজবোই! ঘরডাও ভিজবো পুরা!’
"