মোহাম্মদ অংকন

  ২১ এপ্রিল, ২০১৮

আম কুড়ানোর দিনগুলো

বৈশাখ মাস শুরু হলেই প্রকৃতিতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়-বৃষ্টিতে গাছের সবুজ কাঁচাকাঁচা আমগুলো ঝুমঝুম করে পড়ে। আর সেই সাথে শুরু হয় রিতু ও জিতুর আম কুড়ানো। গ্রামের কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিয়ে স্কুল থেকে ভিজতে ভিজতে দুজন বাড়ি ফেরে। বই-খাতা ঘরে ছুড়ে মেরে ঝড়ের বেগে ছুটে চলে আমবাগানের দিকে, আম কুড়াতে। ওদিকে মা ডাকে, ‘এই রিতু, এই জিতু, এই ঝড়ের ভেতর তোরা যাস নে কোথাও। মাথায় যে বাজ পড়বে।’ এভাবেই মা বারান্দায় বসে ডাকতে থাকে। বৃষ্টির টাপুরটুপুর আর বজ্রপাতের শব্দে মায়ের ডাক যেন ওদের কানে পৌঁছায় না। ওরা দুজন তুমুল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে চলে। মহল্লার আরো সব ছেলেমেয়ে হাজির হয়। সবাই দল বেঁধে মেঘের সাথে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে আম কুড়াতে বেরিয়ে পড়ে।

সামান্য ঝড়-বাতাস হলেই আমবাগানে যেন পাতার মতো আম পড়ে থাকে। ছেলেমেয়েরা ইচ্ছেমতো সেসব আম কুড়িয়ে নিয়ে যায়। বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বাগানের মালিক একটুকুও বুঝতে পারে না। কেউ কেউ আম কুড়িয়ে প্যান্টের পকেট ভর্তি করে। আবার কেউ কেউ ব্যাগ নিয়ে যায়। তবে রিতু ও জিতুর সাথে আম কুড়িয়ে কেউ পেরে ওঠে না। কেননা, রিতু ব্যাগ হাতে রাখে আর জিতু এক এক করে আম কুড়িয়ে ব্যাগে ভরে। ‘এই জিতু, তোর চোখ নেই নাকি রে ভাই? ওই যে কত্ত আম পড়ে আছে। নে না! সব তো যুথী, বীথি, সুমিরা নিয়ে গেল।’ ‘আরে, এত বক বক করিস কেন? আমি তোকুঁড়াচ্ছি। তুই চুপ করে ব্যাগ ধরে রাখ তো।’ ঝুমঝুম বৃষ্টির মধ্যে থরথর কাঁপে আর দুই ভাইবোন আম কুড়ানো নিয়ে কথা-কাটাকাটি করে।

ব্যাগ যখন ভর্তি হয়ে যায়, বৃষ্টি যখন থেমে যায়, তখন ওরা সবাই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। রিতু ও জিতু বাড়ি এসে দেখে, মা খাবার নিয়ে বসে আছে। ‘তোরা সেই কখন গেছিস, আর এলি কখন? যদি কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে আমি কি করতাম, বল তো?’ দুজনে সমস্বরে বলে, ‘মা, তুমি শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করো। দেখলে তো, আমাদের কিচ্ছুই হলো না।’ তারপর তারা আমের ব্যাগ রাখে। বাড়ির পাশের নদীতে ঝাঁপ দিয়ে দু-চারবার মাথা ডুবিয়ে গোসল করে। অতঃপর ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে খেতে বসে। আর মায়ের ওপর আরজি করে রিতু বলে, ‘মা, এবার কিন্তু আমের আচার বানিয়ে দিতেই হবে। তা ছাড়া আর স্কুলে যাব না।’ তার সাথে জিতু যোগ করে, ‘মা, রোজ রোজ স্কুল গিয়ে আচার কিনে খেতে ভালো লাগে না। আর দোকানের আচার তো ভালো না। মা, বলো না, আচার বানিয়ে দেবে কি না?’ অবুঝ ছেলেমেয়ের বায়না শুনে মা বলে, ‘আরে বাবা, বুঝলাম তো। সময় হোক আচার বানিয়ে দেব। আগে পেটটি ভরে ভাত খা দেখি। বৃষ্টিতে ভিজে দুটো যেন ভেজা কাক হয়েছিস। তোদের নিয়ে আর পারি না বাপু।’

গ্রীষ্মকালে প্রায় দিনই স্কুল থেকে ফেরার পথে ঝড়-বৃষ্টি আসে। রিতু-জিতু প্রতিদিনই আম কুড়াতে বাগানে ছুটে যায়। আম কুড়িয়ে এনেই মায়ের কাছে আমের আচার বানানোর বায়না করে। অতঃপর মা আমের আচার বানিয়ে দেয়। তাদের আমের আচার খাওয়ার শখ পূরণ হয়। আর এভাবেই আচার খেতে খেতে বৈশাখ চলে যায়। জ্যৈষ্ঠও চলে যায়। এমনকি বছরও চলে যায়। আবার বৈশাখ ফিরে এলে রিতু ও জিতু আম কুড়াতে ছুটে যায়। একটা সময় তাদের শৈশবটা হারিয়ে যায়। আর আম কুড়াতে যাওয়া হয় না। আমের আচার খাওয়া হয় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist