অলোক আচার্য্য

  ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

অপুর রূপকথার রাজ্য

অপু এখন যেখানে আছে, সে জায়গাটা তার কাছে অপরিচিত। কেমন যেন সবকিছু অদ্ভুত টাইপের। এখানকার মানুষগুলো অদ্ভুত, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সব অদ্ভুত। কিন্তু কিভাবে সে এই ভূতুড়ে জায়গায় এসে পড়ল, তা ঠিক বুঝতে পারছে না। তার এখন বিছানায় থাকার কথা ছিল। আসলে সে তো রাতের খাওয়া শেষে নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। তার এ কথা স্পষ্ট মনে আছে। কিন্তু হঠাৎ সে কিভাবে এরকম একটা জায়গায় আসল? তাছাড়া সে একা কেন এসেছে। সে কখনো একা বাড়ির বাইরে যায় না। আজ তার সঙ্গে কেউ নেই। এমনকি, অপুর মা-ও নেই। মা সঙ্গে না থাকার কারণেই অপুর বেশি ভয় ভয় করছে। মা সঙ্গে থাকলে অপুর কোনো ভয় করে না। এসব ভাবতে ভাবতেই অপু কেমন যেন ঘোরের মত হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে অপু একসময় একটা বড় বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। বাড়িতে ঢুকবে কি না, এসব ভাবতে ভাবতে সে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। বাড়িতে ঢুকে অপু এদিক-সেদিক তাকাতে লাগল। এই যে এতটা পথ হেঁটে এলো, সে কিন্তু কোনো মানুষ দেখতে পায়নি। এই বাড়িতে ঢুকেও কাউকে না দেখে সে আরো অবাক হলো। অপুর এতক্ষণ অল্প অল্প ভয় করলেও এখন ভয়টা আরো বেড়ে গেল। তার মনে হলো, সে আসলে বেঁচেই নেই। হয়তো মরে গেছে। সে শুনেছে মানুষ মরে গেলে এরকম একা একা ঘুরে বেড়াতে হয়। কেউ সঙ্গে থাকে না। এমনকি, মা-ও না। অপু যখন এসব ভাবছে তখন হঠাৎ বাড়িতে আলো জ্বলে উঠল। তীব্র আলো। এত তীব্র যে, অপুর চোখ ধাঁধিয়ে গেল। এতক্ষণ বাড়িতে হালকা আলো থাকায় ভালো করে কিছু দেখতে পায়নি। কিন্তু এখন সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। কতগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সারিবদ্ধভাবে। এদেরকে মানুষ বললে ঠিক হবে না। আবার মানুষও বলা চলে। এলিয়েনদের সঙ্গে মিলে যায়। অপু সায়েন্স ফিকশনে এসব ভিন গ্রহের প্রাণী সম্পর্কে পড়েছে। এসব প্রাণী হঠাৎ বলতে লাগল, ছেলেটা এসেছে, ছেলেটা এসেছে। এ কথা শুনে অপু আরো ভয় পেয়ে গেল। এরা নিজেদের মধ্যে বিচিত্র ভাষায় কথা বলছে। কিছুই অপু বুঝতে পারছে না। অপু স্কুলে কেবল ইংরেজি ভাষা শিখেছে। কিন্তু এরা পৃথিবীর কোন ভাষায় কথা বলছে? পৃথিবীর কথা মনে হতেই অপু নিজের বাড়ির কথা, স্কুলের কথা মনে করতে লাগল। অপু ভালো করে তাকিয়ে দেখল, সবার সামনে একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে পেটমোটা একজন বসে আছে। দেখে মনে হলো, এটাই এদের রাজা। লোকটি অপুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এখন আমাদের রাজ্যে।

অপু ভয়ে ভয়ে বলল, আমাদের রাজ্য মানে কী?

মানে রূপকথার রাজ্য। তুমি এখন রূপকথার রাজ্যে।

কিন্তু আমি এখানে কেন?

তুমি রাতে তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলে। ঘুমের মধ্যেই তুমি কাঁদছিলে। তোমার কান্না দেখে খুব মায়া হলো। তাই তোমাকে আমাদের রাজ্যে নিয়ে এলাম।

তোমাদেও রাজ্য খুব অ™ভুত।

এটা রূপকথার রাজ্য। তাই সবকিছু একটু আলাদা। আমরা যা ইচ্ছা তা করতে পারি। এই যে উড়তে পারি। বলেই পেটমোটা লোকটা উড়তে আরম্ভ করল।

লোকটার কথায় অপুর মনে হলো, সে কেন কাঁদছিল। রাতে সে হোমওয়ার্ক শেষ না করায় ওর বাবা ওকে গালে থাপ্পড় মেরেছিল। এত জোড়ে মেরেছিল যে, গালে পাঁচটা আঙুলের ছাপ বসে গিয়েছিল।

তুমি কি ভাবছো আমি জানি।

তুমি জানো?

তুমি তোমার বাবার মারের কথা ভাবছো তো?

হু।

এ কথা শুনে পেটমোটা রাজাটা খিক খিক করে হেসে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘরে হাসির রোল উঠল। অপু বুঝতে পারল না সবাই হাসছে কেন?

তুমি ভাবছ, আমরা হাসছি কেন?

হু।

আরে মা-বাবা মারলেই কি মন খারাপ করে থাকতে হবে? মা-বাবাই তো মারবে। তারা তো তোমাকে খুব ভালোবাসে। তোমাকে নিয়ে আসাতে দেখতে চাও, তোমার মা বাবা কী করছে?

হু।

সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে অপুর বাড়ির ছবি ভেসে উঠল। অপুর মা প্রচন্ড কান্নাকাটি করছে। অপুর বাবা উত্তেজিত হয়ে কাকে কাকে যেন ফোন করছে। মনে হয় পুলিশ-টুলিশকে হয়তো।

এসব ভেবে অপুর খুব মন খারাপ হলো।

কী, এখনো তোমার বাবার মারের কথা ভেবে মন খারাপ হচ্ছে?

না।

বাড়ি ফিরে যাবে?

হু।

তাহলে চোখ বন্ধ কর।

অপু চোখ বুজলো। তারপর তাকিয়ে দেখল, ওর বিছানায় মা ওর দিকে ঝুঁকে আছে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। পাশেই বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বাবার চোখ দিয়েও জল পড়ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist