সাইফুল ইসলাম জুয়েল

  ১০ মার্চ, ২০১৮

আমার বন্ধু প্রিন্স

প্রিন্স আমার স্কুলজীবনের বন্ধু। আমার বিশ্বাস তোমাদের প্রত্যেকেরই ওর মতো অন্তত একটা করে বন্ধু আছে! তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, এই প্রিন্সটা আমার ঠিক কোন টাইপের বন্ধু ছিল? বেশ তো, আমি কিছু ঘটনা বলছি, ধরনটা তোমরা নিজেরাই বুঝে নিও ক্লাস ওয়ানের ঘটনা। আমি সবার শেষে ভর্তি হয়েছি বলে আমার রোল ছিল ৮০। প্রিন্সের রোল ঠিক আমার আগেরটাই, ৭৯। কিন্তু বেচারা এই অল্প বয়সেই বেশ টাকা চিনে গেছে। বেশি টাকা থাকার মানে যে ভালো, তা ও জানতো! তাই, আমার রোল নাম্বার শোনা মাত্রই ও গটগট করে স্যারের কাছে গিয়ে আবদার করে বসল, ‘স্যার, আমার ওর চেয়ে বেশি রোল চাই। ৮১, ৮২, ৮৩, ... কিছু একটা দিন।’ স্যার প্রথমে টাস্কি খেলেও পরে নতুন ভর্তি হতে আসা একজনকে ৭৯ দিয়ে ওকে ৮১ দিয়ে দিলেন! প্রিন্স অবশ্য এই ‘রোল টাকা’ দিয়ে কিছুমিছু কিনে খেতে পারেনি!

বাজারে কোমল পানীয় মোজো কেবল বাজারে এসেছে। প্রিন্স তখনও জিনিসটা চেখে দেখেনি। আমি একদিন বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হাতে ছিল একটা মোজোর বোতল। প্রিন্স জানি কোত্থেকে এসে জিনিসটা ছিনিয়ে নিল। আমি যতই ওর কাছোকাছি গিয়ে বলি, ‘প্রিন্স, বোতলটা দে’, ও ততবারই একধাপ করে পিছিয়ে যায়। বোতলটা পেয়ে মুখে রাজ্যের হাসি ওর। হঠাৎ দেখি ও বোতলের মুখটা খুলতে শুরু করে দিয়েছে। আমি শুকনো গলায় বললাম, ‘প্রিন্স ওটা দিয়ে দে, মা বকবে।’ ওর মুখের হাসি আরো চওড়া হয়। বলল, ‘এই জিনিসটা আমার এখনো টেষ্ট করা হয়নি। এই সুযোগ কেন হেলায় হারাব!’ ততক্ষণে বোতলের ছিপিটা খোলা হয়ে গেছে। ওর মুখের কাছে নিয়ে গেল। আমি চিৎকার করে উঠলাম, ‘ প্রিন্স, খাস না ওটা।’ ও আমার অবস্থা দেখে কেন জানি বেশ মজা পাচ্ছিল। ঢোক ঢোক করে গিলে ফেলল তরল পানীয়টা। একটু পরেই অবশ্য ‘ওয়াক ওয়াক’ করে উঠলো। ‘মোজোর স্বাদ এমন ক্যারে?’ প্রিন্স কাশতে কাশতে শেষ! ‘ওতে মোজো আছেÑএ কথা তোকে কে বলেছে?’ ‘মোজের বোতলে তো মোজেই থাকে, তাই না?’ ‘হুম, থাকে। কিন্তু তা খেয়ে ফেললে তখন কী থাকে? গতকাল রাতে আমি বোতলটা সাবাড় করেছি। আজ সকালে মা বোতলটা আমার হাতে দিয়ে বাজারে পাঠিয়ে ছিলেন, ওটাকে করে খোলা সয়াবিন তেল নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার কথা শুনে এবার প্রিন্স বমিই করে ফেলল। প্রিন্স একটা নতুন ঘড়ি কিনেছে। সেটা নিয়ে তার বড়াইয়ের কমতি নেই। প্রাইমারির কী জানি এক পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষক ম্যাম ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্রটির কাছে জানতে চাইলেন, ‘কয়টা বাজে?’ প্রিন্স হলরুমের মাঝখানের একটি বেঞ্চে বসেছিল। কিন্তু ওর কান ছিল খাড়া। ওই ছেলেটি সময় বলার আগেই ও বলে উঠল, ‘ম্যাম, সাড়ে আড়াইটা!’ ‘এটা আবার কেমন সময়?’ ম্যাম অবাক। ‘দুইটা বেজে আরো আধাঘণ্টা! আমার ঘড়ি ভুল সময় দেয় না ম্যাম।’ হাতঘড়ি দেখিয়ে প্রিন্সের চটপটে জবাব। ম্যাম মুচকি করে হেসে বললেন, ‘ঘড়ি ব্যবহারের আগে ঘড়ি চিনে নিয়ো।’ মুহুর্তেই হলরুম হাসিতে ভরে উঠলো। আমার বন্ধু প্রিন্স তখনো ওর সুন্দর ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। বোধহয় ভেবে পাচ্ছে না-এত সুন্দর ঘড়িটা ওকে ভুল সময় দিলো কী করে!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist