স্বপন শর্মা
ভূতের বাঁশি
অনেক আগের কথা। গ্রামের নাম খামার বজরা। বজরা মানে নৌকা, এখানে এক সময় নৌকা তৈরির কারখানা বা খামার ছিল বলে খামার বজরা নাম হয়েছে। এই গ্রামেই জন্ম এক গরিব কাঠমিস্ত্রী পরিবারের ছেলে রাজু। রাজুর বাবা একজন ভালো এবং স্বনামধন্য নৌকার মিস্ত্রী ছিল। নদীগুলো চর ফেলায়, সমাজে আধুনিক ছোঁয়া লাগায় নৌকা আর কেউ ব্যবহার করে না। সংসার চালানোর বিকল্প পথ হিসেবে কয়েকটা গরু কিনল রাজুর বাবা। অল্প বয়সেই রাখাল রাজুর বাবা মারা যায়। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে রাজু। বাবা মারা যাওয়ার পর রাজুকেই গরু নিয়ে মাঠে যেতে হয়। গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করে, তাদের সংসার চলতে থাকে। রাখাল রাজু প্রতিদিন প্রভাতে গরু নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে সাঁতরিয়ে যেত। খাওয়ার জন্য সঙ্গে নিত মায়ের হাতের তৈরি শুকনো রুটি। তার মাথায় থাকতো একটা লাল গামছা, আর হাতে ছিল একটি বাঁশের লাঠি। রাজু মাঠে গরু ছেড়ে দিয়ে, মাঠে থাকা বটগাছের নিচে বসে আরাম করত। বেশ ভালোই লাগত সেখানকার বাতাস। শিরশির বাতাসে ঘুমিয়ে পড়ত কোনো কোনো দিন। সেদিন ঠিক দুপুর বেলায় রাজু, বটগাছের নিচে বসে ঘুমোচ্ছিল। এমন সময় বটগাছ থেকে দুটি ভূত নেমে আসল মানুষের রূপে। ওরা হলো কালো ভূত আর সাদা ভূত। রাজু ভয় পেলো, তবুও জিজ্ঞেস করল, আপনারা কে? কালো ভূত বলল, আমি কালো আর ও সাদা। আমার ছোট্ট বোন। এই বটগাছই আমাদের বাড়ি। রাজু ভূতের কথা শুনে কাঁপতে লাগল, কালো ভূত বলল, তুমি ভয়ে কাঁপছো কেন? ভয় পেও না, আমরা তোমার ক্ষতি করতে আসিনি। এবার বল তোমার নাম কী? রাজু বলল, আমার নাম রাজু। আমি একজন রাখাল, এই মাঠে গরু চড়াই। কালো ভূত বলল, রাজু আমরা তোমার বন্ধু হতে চাই, আমি জানি রাখালরা ভালো বাঁশি বাজাতে জানে তুমি আমাদেরকে বাঁশি বাজিয়ে শোনাও একটু। কিন্তু আমার যে বাঁশি নেই বন্ধু। আমি কিভাবে বাঁশি বাজাব? রাজু বলল। সাদা ভূত সঙ্গে সঙ্গে জাদু দিয়ে চোখের পলকে রাজুর হাতের বাঁশের লাঠিকে একটা লাল রঙের বাঁশি বানিয়ে দিল। আর বলল, রাজু তুমি এই বাঁশিটি দুটো কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এক লাঠি হিসেবে, দুই বাঁশি হিসেবে। কালো ভূত বলল, রাজু বাঁশি বাজাও। রাজু কোনো কথা না বাড়িয়ে বাঁশি বাজাতে শুরু করল। রাজু এত সুন্দরভাবে বাঁশি বাজাচ্ছে যে সুরের টানে নদীর ওপারে থাকা মানুষগুলো ছুটে আসলো নদীর এপারে রাজুর কাছে। গ্রামবাসী একে অন্যকে বলে এ তো রাখাল রাজু। এত সুন্দর বাঁশি রাজু কোথায় পেল? গ্রামবাসী রাজুকে ঘিরে নিয়েছে, রাজু বুঝতেই পারে না। অনেকক্ষণ বাঁশি বাজানোর পর বুঝতে পারে, গ্রামবাসী তাকে ঘিরে নিয়েছে। রাজু চোখ দুটো খুলে বলে, কালো, সাদা বন্ধু তোমরা কোথায়? গ্রামবাসী বলল, রাজু তোমার বাঁশির সুর শুনে, আমরা নদীর ওপার থেকে ছুটে এসেছি। তাছাড়া এত সুন্দর বাঁশি কোথায় পেয়েছ তুমি? রাজু সব খুলে বলল। তারপর বলল তারা দুজন তো এখানেই ছিল? গ্রামের মুরুব্বিরা বলল, আমরা আসার কারণেই হয়তো ভূত দুটি চলে গেছে। তুমি বাঁশি বাজিয়ে যাও, ওরাও শুনবে আমরাও শুনি। সন্ধ্যা পযন্ত বাঁশি বাজায় রাখাল রাজু। তারপর গরু, নিয়ে বাড়ি যায় রাজু। তবে কালো, সাদা ভূতকে আর দেখা পায় না। প্রতিদিন ঠিক সময়ই গরু, নিয়ে রাজু মাঠে যায়, বাঁশি বাজায়।
ভূত দুটিকে রাজু প্রতিদিন খোঁজে, কিন্তু ভালো ভূত দুটিকে খুঁজে পায় না। হয়তোবা ছায়া হয়ে রাজুর বাঁশির সুর শোনে। তবে গ্রামবাসী ঠিকই রাজুর বাঁশি শুনে মুগ্ধ হয়। তাই গ্রামবাসীর মুখে রাজুকে নিয়ে অনেক গল্প, কাহিনী প্রায়ই শোনা যায়। সেই রাজুর ভালো ভূতের ভালো কাজের ঘটনাগুলো।
"