সুজন সাজু

  ০৩ মার্চ, ২০১৮

নাক্ষস আর টাক্ষস

নাক্ষস আর টাক্ষস দুজন ভালো বন্ধু। প্রশ্ন জাগতে পারে, নাক্ষস-টাক্ষস এগুলো আবার কী? স্বাভাবিক, এমন নাম তো আগে শুনিনি। শোনার কথাও না। আসলে এরা হচ্ছে রাক্ষস প্রজাতির। এদের নামই হচ্ছে নাক্ষস আর টাক্ষস। নামগুলো হওয়ার পেছনে এদের আকৃতিগত কারণও আছে। নাক্ষসের নাকটা হচ্ছে একটা ছোটখাটো বালতির মতো। বালতির মতো এই নাক দিয়েই নাক্ষসের খাওয়া-দাওয়ার কাজটি চলে। এত বড় নাকটির সৌজন্যে নাক্ষসের মুখটিও দেখা যায় সামান্যই। নতুন কেউ দেখলে অই নাকটাই পুরোটা দেখবে নাক্ষসের। এত্তো বড় নাকটির জন্যই রাক্ষস কুলে এর নাম হয় নাক্ষস। নাক্ষস বললেই কারো চিনতে বেগ পেতে হয় না। এই তো গেল নাক্ষসের কাহিনি। আর নাক্ষসের বন্ধু টাক্ষস? টাক্ষসের শরীরটা কত বড় তা টাক্ষসও সঠিক জানে না।

কেন জানে না, তাও একটি কথা। এরা হচ্ছে রাক্ষস প্রজাতির। এরা অত কিছু ভাবার জো নেই। যখন যা মনে ওঠে তাই করে ফেলে। ভালো মন্দ বিচার করার মতো ওদের বিবেক কাজ করে না, যা কিছু পাই, যত বড় খাবারই হোক না কেন, গোগ্রাসেই গিলে ফেলে। আস্ত একটা মানুষকে ও গিলে ফেলা টাক্ষসের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়। এখন কথা হলো, এর নামটা টাক্ষস কেন? হ্যাঁ, টাক্ষসের যত বড় শরীর, তত বড় মাথা। মাথা কিন্তু এটা মাথাই! মাথাটা ছোট হলেও একটা ধানের ডোলের মতো হবে। আর পেটটার কথা নাই বললাম। আন্দাজ করে ধরে নাও কত বড় হতে পারে। টাক্ষসের এত শক্তি, কয়েকটা হাতিকে তার হাতের তালুতে রাখা কোনো সমস্যাই হবে না। ছোটখাটো পাহাড়কে আঁছড়ে ফেলা টাক্ষসের জন্য মামুলি ব্যাপার। আর এই কাজ করতে করতে তার মাথার চুলগুলোই সব ক্ষয় হয়ে গেল। টাক্ষসের মাথাটা ঠিক কমলা লেবুর মতো তেলতেলে। প্রথমে কেউ দেখলে ভরকে যাবে টাক্ষসের এমন রূপ। এই তেল তেলে টাকওয়ালা মাথার সৌজন্যে নাম হলো টাক্ষস। রাক্ষস কুলে নাক্ষস আর টাক্ষসে এমন কোনো কাজ নেই, তারা করতে পারে না। সবাই রাক্ষস হলেও এদের মতো পলোয়ান রাক্ষস কুলে দ্বিতীয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রয়োজনে নাক্ষস আর টাক্ষস আকাশের মেঘও ছিঁড়ে নিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে। কত শত জীবজন্তু ধরে মিনিটের মধ্যেই চালান করে দেয় উদরে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু তাদের খিদেটা কখনো কমেনা। এটাই হচ্ছে সমস্যা। যত পাই তত চাই। নাক্ষসদের সামনে কোনো প্রাণীই পড়তে চাই না। সামনে পড়লে যে আর রক্ষে নেই। নাক্ষস আর টাক্ষস যুক্তি করল, তারা রাক্ষস কুলের বাইরে ঘুরতে যাবে। কোথায়? ভিন্ন কোনো গ্রহে। ভেবে ভেবে সিদ্ধান্তে পৌঁছল, ওরা পৃথিবীতেই ঘুরতে আসবে। কেননা, এখানে মনুষ্যদের দেখার বড় শখ জেগেছে নাক্ষস আর টাক্ষসের মনে। কারণ, মনুষ্যকুলে তাদের খাবারের কোনো সমস্যা হবে না। যেখানেই যাবে সেখানেই জুটে যাবে খাবার। কিন্তু এমন কথা টাক্ষস বললেও নাক্ষসের মনে সন্দেহ জাগছে। মানুষরা হলো সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। সুযোগ পেলেই মনুষ্যরা আমাদেরও বন্দি করে রাখবে। তবে তা এত সহজ নয়। তবু ভেবে চিন্তে যাওয়ায় ভালো। টাক্ষস বলে, আমাদের শক্তির সামনে দশ-বিশজন মনুষ্য কোনো ব্যাপার? এক হাতের তালুতে পিসিয়ে মারব ক্ষণিকের মধ্যে।

নাক্ষস বলে, যা ভাবছ তা এত সহজ নয় রে টাক্ষস। আমাদের রাক্ষস কুলের পরিবেশ আর মনুষ্যকুলের পরিবেশ পুরো ভিন্ন। টাক্ষস বলে এত ভাবাভাবি করে যাওয়া যাবে না। আমাদের রাক্ষস পলোয়ান যদি অতি ক্ষুদ্রাকৃতির মনুষ্য নিয়ে চিন্তা করতে হয়, তাহলে আমরা রাক্ষস হলাম কী জন্য? এসব বাদ দাও, যা ভেবেছি তাই হবে। মানে মনুষ্যকুলে বেড়াতে যাবে। ঠিক আছে নাক্ষস সায় দেয়। পরের দিন রওনা হলো পৃথিবীর প্রান্তে। নাক্ষসদের বহনকারী উড়াল গাড়ি দুদিন পর এসে থামল পৃথিবীর মাটিতে। তবে জনমানবহীন একটি ঘোর অন্ধকার জঙ্গলের কাছে আপাতত নাক্ষসদের অবস্থান। পৃথিবীর পরিবেশ দেখে নাক্ষস আর টাক্ষসের মনটা ভরে গেল। দেখতে দেখতে সময় অনেক পার হয়ে এলো। টাক্ষস বলে নাক্ষস ভাই, খিদেটা ভীষণ পেল। খাবার তো কিছু জোগার করতে হবে। প্রবেশ করল পাশের জঙ্গলে, দেখল অনেকগুলো হরিণছানা খেলা করছে। দেখে টাক্ষসের মনটা লোভাতুর হয়ে গেল। কয়েকটি হরিণছানা ধরে দুজনেই আহারটা সেরে নিল। এখানে খাবারের কোনো সমস্যা হবে না বুঝল নাক্ষস আর টাক্ষস। বেশ কয়েক দিন অতিক্রান্ত করলেও এখনো কোনো মনুষ্য সমাগম এরিয়াতে যায়নি। ভাবতে ভাবতে একদিন পা বাড়াল জন সমাগমের দিকে। কিন্তু রাক্ষসের বেশে তো আর যাওয়া যাবে না। রূপটা মানুষের ন্যায় করে নিল নিজেদের। মানুষের মতো হলেও চলনে বলনে ব্যতিক্রম আছেই। নাক্ষস আর টাক্ষস তাদের মতো চলছে। কিন্তু কথাবার্তা কীভাবে রপ্ত করা যায়, দুজনেই ভাবছে। দেখল বিশাল এক বটগাছ। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিল দুজন। দেখল এক বৃদ্ধ বটগাছের নিচে কিছু একটা করছে। বৃদ্ধ দেখে টাক্ষসের লোভ হলো ওকে আক্রমণ করে ভোজনটা সেরে নিতে। বৃদ্ধ কিন্তু একসময় শক্তিমান জাদুকর ছিল। বৃদ্ধ হলেও মনোবল বেশ তুখোর। তন্ত্রমন্ত্র ভালোয় আয়ত্তে আছে। কত রাক্ষস-টাক্ষসকে শাস্তি দিয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। নাক্ষস আর টাক্ষস এসে বৃদ্ধর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। বৃদ্ধ প্রথমে বুঝতে না পারলেও ওদের কথাবার্তায় ঠিকই সন্দেহ হলো, এরা মানুষ নয়! ভিন্ন কোনো গ্রহের প্রাণী এবং তাকেই আক্রমণ করতে এসেছে। জাদুকর এবার নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করার ফন্দি আঁটছে।

রাক্ষসরাও চাচ্ছে কীভাবে বৃদ্ধকে কব্জা করা যায়। নিজেদের মধ্যে ছায়া লড়াই বেশ জমে উঠেছে। রাক্ষসরা কিন্তু আগুনকে বেশ ভয় পায়। জাদুকর এবার মন্ত্রগুণে নাক্ষস আর টাক্ষসকে এক ধরনের বন্দি করে ফেলল। নাক্ষস আর টাক্ষস বৃদ্ধকে আক্রমণ করার সুযোগ পাচ্ছে না এখন। এবার ভয় পেয়ে গেল নাক্ষস আর টাক্ষস! আর তো রক্ষে নেই। বৃদ্ধ জানতে চাইল, তোমরা রাক্ষসকুল থেকে কেন পৃথিবীতে এলে? বোঝাচ্ছি মজা, আগুনে পুড়িয়ে মারব। যখন আগুন নিয়ে সামনে গেল, আরো ভয় পেয়ে গেল নাক্ষস আর টাক্ষস। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে আমরা আসলে তোমাদের পৃথিবীটা দেখতে এসেছি, তবে কাউকে ক্ষতি করতে নয়। তবে জনমানবের সামনে কেন এলে? ভুল স্বীকার করে, নাক্ষস আর টাক্ষস। বলে, আমাদের ছেড়ে দাও, আমরা আমাদের রাক্ষসকুলে চলে যাব। আর কোনো দিন আসব না তোমাদের পৃথিবীতে। অনেক আকুতি-মিনতির পর বৃদ্ধ জাদুকর ছেড়ে দিল নাক্ষস আর টাক্ষসকে। ছাড়া পেয়ে দ্রæতই পৃথিবী ত্যাগ করল তারা। প্রতিজ্ঞা করল ভুলেও মনুষ্যকুলে আসবে না আর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist