আবদুস সালাম

  ০৩ মার্চ, ২০১৮

গল্প

হাতি ও বানর

হাতি ও বানর দুজনা খুব ভালো বন্ধু। তারা প্রায়ই একসঙ্গে চলাফেরা করে। বানর গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। যদি কখনো হাতির কোনো শত্রæ তার চোখে পড়ে তাহলে সে দ্রæত গাছ থেকে নেমে হাতিকে শত্রæর অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে, যাতে সে হাতির কোনো ক্ষতি করতে না পারে। বানরের সাবধান বাণী শোনার পর হাতি সতর্ক হয়ে যায়। সে তার বাচ্চাদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গমন করে। এর জন্য হাতি বানরের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ। বানর হাতিকে যেমন ভালোবাসে, হাতিও তেমনি বানরকে ভালোবাসে। হাতি তৃণভোজী প্রাণী। ঘাস, লতাপাতা, গাছের বাকল, বাঁশ, ফলমূল, কলাগাছ ইত্যাদি তার প্রিয় খাবার। আর বানরের প্রিয় খাবার চীনাবাদাম, কলা, পেয়ারাও বিভিন্ন গাছের ফলমূল। হাতির খাবার থেকে সামান্য পরিমাণ খাবার বানরকে দিলে তার জন্য যথেষ্ট হয়। হাতি খাবারের সন্ধানে বনের বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করে। খাবার খেয়ে ফিরে আসার সময় সে বানরের জন্য কিছু খাবার সঙ্গে করে নিয়ে আসে। হাতি জানে কলা বানরের খুব প্রিয় খাবার। তাই হাতির চোখে কোনো কলাগাছ পড়লে কলার কাঁদি থেকে পাকা পাকা দু-একটা কলার ছড়া বানরের জন্য রেখে দেয়। তারপর কলাগাছের বাকল, থোড় ও কাঁদির অবশিষ্ট কলা সে খেয়ে ফেলে। পাকা কলা পেয়ে বানর খুব মজা করে খায়। তার বিশ্বাস হাতি তাকে সব সময় বিপদ-আপদে এভাবেই সাহায্য করবে।

প্রাকৃতিক বন ও তৃণভ‚মি হাতির আবাসস্থল। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে হলে প্রাকৃতিক বন তাদের জন্য অপরিহার্য। হঠাৎ বনের মধ্যে হাতির খাবারের খুব সংকট দেখা দিল। পানির জন্য গর্ত খুঁড়েও সে পানি পেল না। তার বিশালাকার দেহের কারণে প্রতিদিন প্রচুর খাবার-পানির প্রয়োজন হয়। প্রাণ বাঁচাতে হাতি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে বিষয়টি নিয়ে বানরের সঙ্গে আলোচনা করল। বানর বলল, এখানে আমার কোনো খাবারের সংকট নেই। তবে আমি সব সময় বন্ধুর পাশেই থাকতে চায়। তাই তুমি যেখানে যাবে আমি সেখানেই যাব। তারা সিদ্ধান্ত নিল, আগামীকালই এলাকাটি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে। পরের দিন বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দর একটা স্থান খুঁজে পায়। সেখানে বানর ও হাতির খাবারের কোনো সমস্যা নেই। সবার জন্য যথেষ্ট খাবারের সংস্থান রয়েছে। নতুন পরিবেশে তারা আবার মনের আনন্দে বসবাস করতে শুরু করল। হাতির ছেলেমেয়েরাও আস্তে আস্তে বড় হয়ে থাকে। নতুন জায়গায় হাতির কোনো শত্রæ ছিল না। তাই বানরের সাহায্য হাতির তেমন প্রয়োজন হয়নি। এর ফলে বানরের সঙ্গে হাতির দেখা-সাক্ষাৎ খুব কমই হতো।

বানর বনের মধ্যে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার ছেলেমেয়েরা ক্ষুধার জ্বালায় কান্নাকাটি করতে থাকে। তারা মায়ের কাছে খাবারের জন্য আবদার করে। মা বাচ্চাদের সান্ত¡না দিয়ে বলে, আমি তোমাদের হাতিমামার কাছে যাচ্ছি। উনি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দেবেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে সে হাতির সঙ্গে দেখা করল। সে বলল, ‘আমি অসুস্থ। আমার ছেলেমেয়েরাও না খেয়ে আছে। আমাকে একটু খাবারের ব্যবস্থা করে দাও না, ভাই’, ‘তোমাকে কীভাবে দেব? আমার ঘরে যা খাবার রয়েছে তা আমার সন্তানদের জন্যই যথেষ্ট নয়। তুমি ভাই একটু কষ্ট করে অন্য কোথাও খাবারের জন্য খোঁজ করো।’ হাতি উত্তর দিল। বানর মন খারাপ করে ফিরে গেল। বাধ্য হয়ে সে অসুস্থ শরীর নিয়ে খাবারের সন্ধানে বের হলো। বানর সুস্থ হওয়ার পর আরো কিছুদিন অতিবাহিত হয়। একদিন হাতি পাকা কলার কাঁদি মাথায় করে বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে বানরের সঙ্গে দেখা হলো। লোভে বানরের মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে। হাতি বানরের সঙ্গে দু-একটা কথা বলল ঠিকই কিন্তু বানরকে সে কলা দিল না। একদিন রাতে প্রচÐ ঝড় হয়। সেই ঝড়ে বানরের ঘরটা ভেঙে যায়। সেটি দ্রæত মেরামত করার জন্য বানর হাতির সাহায্য চাইল। সেবারও হাতি বানরকে সাহায্য করল না। সে বলল, আমার হাতে অনেক কাজ। সময় পেলে একসময় দেখে আসব। তুমি এখন যাও। বানর বুঝতে পারল হাতির কাছে তার গুরুত্ব কমে গেছে। তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। তাই বানর হাতিকে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে ভাবতে পারছে না।

ঠিক দুদিন পর বানর তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে অন্য কোথাও চলে গেল। আর কখনো ফিরে আসেনি। বানর চলে যাওয়ায় হাতি মনে মনে খুশিই হলো। সে ভাবলÑএখন বানর তার খাবারে আর ভাগ বসাতে আসবে না। এভাবে আরো কিছুদিন ভালোভাবে হাতির দিনগুলো কেটে গেল। একদিন হঠাৎ হাতি লক্ষ করল, একটা ভয়ংকর জন্তু হাতিকে পেছন থেকে তাড়া করেছে। সে কোনো রকমে প্রাণটা নিয়ে পালিয়ে গেল। অন্যদিন অবস্থাটা আরো ভয়ানক! সে দেখে তার একটা বাচ্চাকে কোনো এক জন্তু খেয়ে ফেলেছে। হাতি তার অবস্থান মোটেও টের পায়নি। সে উপলব্ধি করল, এই স্থানটি তাদের জন্য অভয়ারণ্য নয়, শ্বাপদসংকুল স্থান। এই অবস্থায় বানরের সাহায্য তার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। ওর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা তার মোটেও ঠিক হয়নি। বানরটি না থাকায় হাতি খুব সমস্যা হয়ে গেল। সে মনে মনে বলল, এলাকাটি ছেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পরের দিন নিরাপদ এলাকা খোঁজার লক্ষ্যে হাতি সপরিবারে বাহির হলো। পথিমধ্যে সেই ভয়ংকর জন্তুটা তার সামনে পড়ে গেল। প্রাণ বাঁচাতে তারা যে যার মতো এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করল। কিছুদূর যাওয়ার পর মা হাতিটা একটা গর্তের মধ্যে পড়ে গেল। শত চেষ্টা করেও সে উঠতে পারল না। বানরটার কথা স্মরণ করে সে অনুশোচনা করতে থাকল। সন্তানদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে হাতির কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। কয়েক দিন এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর হাতিটা অবশেষে না খেয়ে গর্তের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist