সুজন সাজু

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

স্নিগ্ধার প্রভাতফেরিতে যাওয়া

স্নিগ্ধার স্কুল ছুটি কাল। স্কুল ছুটি দিলে স্নিগ্ধার আনন্দে বাঁধ ভাঙে। কারণ, ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয় না। ইচ্ছেমতো ঘুম যাওয়া যায়। খেলতে নেই বাধা। টিচারও আসবে না পড়াতে। স্নিগ্ধা পড়ে সবে মাত্র কেজি টুতে। নতুন বইয়ের নতুন পড়া, নতুন নতুন ছড়া পড়তে স্নিগ্ধার খুবই খুশি লাগে। ভাষার ছড়া, বিজয়ের ছড়া, শীতের ছড়াগুলো কত না মজার। ছড়াগুলো মুখস্থ করে খেলতে খেলতে আবৃত্তি করে নিজ আনন্দে। স্নিগ্ধার এমন আবৃত্তি করা শব্দের জন্যি দাদিটার গোস্সার কম নয়। স্নিগ্ধা আবৃত্তি করে আর খেলে আপন মনে। ছোট ভাই সুমিষ্টও পড়তে চায়, বলতে চায় ছড়া; কিন্তু এখনো পড়তে পারে না। স্নিগ্ধাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে সুমিষ্ট। ভাই-বোনের এমন আনন্দে, খুশি মা-বাবাও। স্নিগ্ধার বাবাও ছড়া লেখে। বাবার ছড়া কয়েকটা মুখস্থ করেছে স্নিগ্ধা। একবার বাবার লেখা ছড়া আবৃত্তি করে স্কুলে দ্বিতীয় পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছিল। মেয়ের এমন কাণ্ড-কারখানায় বাবার মনেও যেন খুশির ঢেউ খেলে। স্নিগ্ধার কাল স্কুল ছুটি হলেও ভোরে ভোরে যেতে বলেছে স্কুলের ম্যাডাম। স্কুলে কেন ভোরে ভোরে যেতে বলেছে, এ কথা জিগ্যেস করে মাকে। মা, কাল কেন ভোরে যেতে বলেছে ম্যাডাম? মা বলে, ম্যাডাম তোমাদের কিছু বলেনি? বলছে প্রভাতফেরিতে যেতে হবে সবাইকে। আচ্ছা মা, প্রভাতফেরি এটা কী? কাল গেলে দেখবে তুমি। দেখব ভালো কথা, তুমি একটু বলো না? মা বলে, প্রভাতফেরি হচ্ছে কোনো বিশেষ দিবস উপলক্ষে সবাই মিছিল করে সমস্বরে গান গেয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো প্রভাতে। কোথায় ফুল দিতে যাব? শহীদ মিনার। শহীদ মিনার হচ্ছে শহীদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। যারা আমাদের এই বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশে যেই স্মৃতির মিনার বানানো হয়েছে, এটাই শহীদ মিনার। তোমার মতো থাকতে আমরাও প্রভাতফেরিতে গিয়েছি শ্রদ্ধা জানাতে। শুধু তুমি না, দেশের প্রতিটা স্কুল, কলেজ, মাদরাসার সব ছাত্রছাত্রী ফুল দিতে আসবে শহীদ মিনার। দেশের ছোট-বড় সবাই পরম শ্রদ্ধা ভরে ফুল দিতে আসে শহীদের প্রতি। কারণ, বীর শহীদের রক্তে গাঁথা আমাদের এই মাতৃভাষার ঋণ। ঠিক আছে মা, কাল আমিও ভোরে ভোরে যাব শ্রদ্ধা জানাতে। কাল আমাকে ফুল কিনে দেবে, আমি একা একটা ফুলের মালা গাঁথব। মেয়ের কথায় মাও ভাবল ঠিকই তো, মেয়েকে একটা ফুলের মালা তৈরি করে দেব। স্নিগ্ধার কাকাকে ফোন করে দোকান থেকে ফুল কিনে আনল। খুব সুন্দর করে মালা গেঁথে রাখল। কাল সকালে সাথে করে নিয়ে যাবে স্নিগ্ধা। ঘুমিয়ে পড়ল সকলে, স্নিগ্ধার ঘুম আসছে না, কখন সকাল হবে। কখন প্রভাতফেরিতে যাবে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল। ভোর হতে না হতেই মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল স্নিগ্ধার। মুখ ধুয়ে দ্রæত নাশতা সেরে নিল। স্কুল ড্রেস পরে মায়ের সঙ্গে বের হলো স্কুলের উদ্দেশে। স্কুলে স্নিগ্ধার হাতে সুন্দর ফুলের মালা দেখে স্কুলের ম্যাডামরাও দারুণ খুশি। প্রভাতফেরির লাইনে একেবারে সামনের সারিতে স্নিগ্ধাকে রাখলেন ম্যাডামরা। সবাই একই সুরে গান ধরল, আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রæ গড়া একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি? গেয়ে গেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই। শহীদ মিনারের দূরত্ব স্কুল থেকে তেমন বেশি দূরে নয়। মিনিট বিশের মতো হেঁটে পৌঁছে গেল। দেখল, শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে গেছে আরো আগে থেকেই। ম্যাডামরা আগেই বলে দিয়েছেন, ক্যামনে কী করবে। স্নিগ্ধা প্রথমেই হাতের মালাটি শহীদ মিনারের সামনেই অন্য ফুলগুলোর ওপর আলতো করে সাজিয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা জানালো। ফুলের মালাটি দিয়ে কী যে খুশি হলো, বলার অপেক্ষা রাখে না। একে একে শ্রদ্ধা জানালো সবাই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সবাই সমস্বরে আবারও গেয়ে উঠলো, আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? আবার সেই নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরিটি স্কুলের উদ্দেশে রওনা দিল। স্কুলে এসে পরবর্তী নাচ, গান, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা চলল শহীদ দিবস উপলক্ষে। স্নিগ্ধা একটি ভাষা দিবসের ছড়া আবৃত্তি করল, উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাল। শহীদ মিনারে ফুল দিতে পেরে যেন মনানন্দে উৎফুল্ল স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মা বলে, আরো বড় হলে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে, আমাদের ভাষার ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস, বিজয়ের ইতিহাস। অনুষ্ঠান শেষ করে মা-মেয়ে আবারও গল্প করতে করতে রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist