সাইফুল ইসলাম জুয়েল

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

গল্প

দুঃখী বিড়ালছানা

খুবই কষ্ট দুঃখীর। একটি পিচ্চি বিড়ালছানা সে। এমন বয়সে তার মতো বিড়ালছানারা মায়ের কত্ত কত্ত আদর-ভালোবাসা পায়। আর দুঃখীর জীবনটাই কি-না দুঃখে ভরে উঠতে লাগলো। দুঃখীর ঘটনাটা তাহলে তোমাদের খুলেই বলি। দুঃখীর জন্মের সময় ওর আরো কয়েক ভাই-বোন পৃথিবীতে আসে। কিন্তু পাড়ার ডগিটার (কুকুর) অত্যাচারে তারা সবাই ধুঁকে ধুঁকে মারা পড়ে। দুঃখীর মা এক বাড়ির পুষ্যি। সে কারণে দুঃখী ওর মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়া সত্তে¡ও মা কখনো ওকে বেশি সময় দিতে পারেননি। তার ওপরে চুরি করেও খুব বেশি খাবার এনে খাওয়াতে পারতেন না ওকে। দুঃখীর মনে পড়ে, ওর মা বাসা থেকে সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যখন ওকে মুখে নিয়ে এখানে-ওখানে ঘুরতেন, তখন ভীষণ আনন্দ লাগতো ওর। একবার ওকে নিয়ে ওর মা সেই বাসায় ঢুকতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তারপর হঠাৎই একদিন ওর মা হাওয়া। দুঃখী লুকিয়ে লুকিয়ে সেই বাড়িতে গিয়ে ওর মাকে খোঁজে। কিন্তু মায়ের কোনো খবরই নেই। একদিন শোনে, তারা নাকি ওর মাকে ছালায় (বস্তায়) ভরে দূরে কোথাও ফেলে রেখে এসেছেন। ওর মায়ের বদলে সেই বাড়িতে দুঃখীর মতোই, কিন্তু আরেকটি নাদুস-নুদুস বিড়ালছানার দেখা পেল ও।

সেদিনই দুঃখী প্রথম দেখলÑসেই বিড়ালছানাটি কী সুন্দরভাবেই না মাছের কাঁটা খাচ্ছে। আলমারি, খাটের নিচ থেকে কোনো ইঁদুর বের হওয়া মাত্রই সেটির দিকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তেড়ে যাচ্ছে। দুঃখী কখনো মাছের কাঁটা খায়নি। কীভাবে খায়Ñসেটাই তো জানে না ও। মা যে শিখাবেন, তিনিই বা কোথায় এখন? মায়ের কথা মনে পড়তেই দুঃখে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পাড়ার অন্য বিড়ালছানার কাছে শুনেছেÑবিড়াল হয়ে যদি ইঁদুর মারতে না পারে, তাহলে সে একটি কা-বিড়াল (কা-পুরুষের বিড়ালীয় সংস্করণ!)। ছোট্ট বিড়ালছানাটি না পারে মাছের কাঁটা খেতে, আর ইঁদুর দেখলে তো ভয়েই আত্মরাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় হয় ওর। দুঃখী কখনো কোনো বাসা থেকে মাছ চুরি করে খায়নি। দুধ খাওয়ার তো কথাই আসে না।

সেদিন পাড়ার ময়লার ভাগাড়ের কাছে শুয়ে ছিল দুঃখী। হঠাৎ দেখে সিটি করপোরেশনের লোকজন ময়লা ফেলছে। তারা চলে যাওয়ার পরে দুঃখী ধীরে ধীরে ভাগাড়টির দিকে এগিয়ে আসে। মনে মনে আশা করেÑযদি মাছের কাঁটা পাওয়া যেত! অনেক খোঁজাখুঁজির পরে যা খুঁজছিল, তা পেয়ে যায় দুঃখী। একটি পলিথিন ব্যাগ ভর্তি পচা মাছ আর বাসি পান্তা ভাত। মাছটির কী নামÑদুঃখী তা জানে না। কিন্তু খুব খুশি হয় ও। সাহস করে কাঁটাসহ মাছ খেতে শুরু করে দেয়। একটু পরেই অবাক হয়ে যায় ও। মাছটি খেতে তো অনেক সুস্বাধু! একই সঙ্গে মাছের কাঁটা তো ওর জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। গর্বে বুক ফুলে উঠে দুঃখীর।

একটু পরে ওদের পাড়ার আরো অনেক বিড়াল এসে ওর সঙ্গে ভোজনে যোগ দেয়। গপাগপ খেতে থাকে তারা। পর্যাপ্ত খাবার, তাই দুঃখীর আফসোস হয়নি। তাদের কথা শুনে দুঃখী বুঝতে পারেÑএই মাছটির নাম ইলিশ। পহেলা বৈশাখে এই ইলিশ-পান্তার আয়োজন করেছিল কেউ, যা খেতে না পারায় নষ্ট হয়ে গেলে ফেলে দিয়ে গেছে।

আরেকদিন। একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পাঁচিলের ওপরে বসে ছিল দুঃখী। কয়েকটা কাক ‘ক্যা কা’ শব্দ করে অনবরত জ্বালাচ্ছে ওকে। এগুলো ওদের পাড়ার কাক। ও যে ইঁদুর শিকার করতে পারে না, তা এরাও জেনে গেছে! মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় দুঃখীর। ‘না, ইঁদুর মারতেই হবে’, মনে মনে বলে ও। ঠিক ওই সময়ে পরিত্যক্ত বাড়িটির মেঝের গর্ত থেকে একটি ইঁদুর বেরিয়ে আসে। ইঁদুরটা প্রথমে ওকে দেখে ভয় পায়। কিন্তু একটা কাক তাকে চেঁচিয়ে জানায়, ‘এই বিড়ালটা হাবাগোবা। এ ইঁদুর ভয় পায়!’ এই কথায় দুঃখীর জেদ বেড়ে যায়। ত্বরিত পাঁচিলের ওপর থেকে লাফ দিয়ে পড়ে ইঁদুরটির দিকে তেড়ে যায় ও। ইঁদুরটিও দেয় ভোঁ দৌড়। ইঁদুরটির এই অবস্থা দেখে অবাক হয় দুঃখী। ও বুঝতে পারেÑইঁদুরের স্বভাবজাত কাজই হলো বিড়ালকে ভয় পাওয়া। আজ তাই দুঃখী ইঁদুরটিকে ছেড়ে কথা বলবে না। পিছু নিল ওর। ইঁদুরছানাটি দেয়াল, বিদ্যুতের তার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে দৌড়ে চলল। পাজি কাকগুলোও ওদের কাÐ দেখার জন্য পিছু নিল।

একজন বলল, ‘দুঃখী, হেরে যাবে।’ আরেকজন বলল, ‘পারবে না, অযথা দৌড়াচ্ছো’। এভাবে কাকগুলো অনবরত বকবক করতে লাগলো। দুঃখীও দ্বিগুণ জেদে দৌড়াতে লাগলো ইঁদুরটির পিছু পিছু। প্রথম প্রথম ও পিছিয়ে পড়লো। কিন্তু আস্তে আস্তে ইঁদুরটির কাছাকাছি চলে আসতে থাকে। ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। দুঃখী দৌড়াচ্ছে। সে এক মস্ত বড় আর মজার ‘ইদুর-বিড়াল’ খেলা!

একসময় ভয়ংকর এক লাফ দিয়ে ইঁদুরটিকে সামনের দুপায়ে আটকে ফেলে দুঃখী। ইঁদুরটিকে যখন মুখে পুরবে, ঠিক সেই সময়ে দুঃখী অদূরে ওর মায়ের মতো কাউকে দেখে। ওর অন্যমনষ্কতার সুযোগ নিয়ে ইঁদুরটি ফুড়–ত করে বেরিয়ে দৌড় লাগায়। দুঃখীও ছেড়ে কথা বলে না। মুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আবারও ইঁদুরটিতে পাকড়াও করে। ঠিক ও সময়ে আড়াল থেকে ওর মা বের হয়ে আসেন। তার চোখে-মুখে আনন্দ খেলা করছে। ইঁদুরটিকে মুখে পুরে দিয়ে দুঃখী ওর মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। আজ দুঃখীর দুঃখ ঘোচার দিন। সে এখন আর কোনো দুর্বল বিড়ালছানা নয়। সে এখন সব পারে। প্রকৃতি তাকে আপনা-আপনিই সব শিখিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে মাকেও ফিরে পেয়েছে সে। তার আনন্দ দেখে কে! আনন্দে কেঁদেই ফেলল একসময়ে ‘দুঃখী’ নামধারী বিড়ালছানাটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist