মোহাম্মদ অংকন

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

বন্ধু ভাবাপন্ন শেয়াল

এক বনে একটি শেয়াল বাস করত। সেই বনের পাশে একটি গ্রাম ছিল। বন থেকে গ্রামের সবাইকে দেখা যেত। কিন্তু গ্রামের কেউ এই বনে আসত না। আবার বন থেকে গ্রামে কেউ যেতে পারত না। বন এবং গ্রামের মধ্যে কেন কোনো যোগাযোগ নেই, তা নিয়ে শেয়াল ভাবতে লাগল। কিন্তু সে ভাবনার কোনো সুরাহা করতে পারল না।

একদিন শেয়াল ওই গ্রামে গেল। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, কবুতরসহ গ্রামের সব সদস্য শেয়ালের প্রতি ক্ষীপ্ত হলো। তাকে তাড়াতে উদগ্রীব হলো। কিন্তু শেয়ালটি একটু ধৈর্যশীল ছিল। তাই ওদের বুঝিয়ে বলল, ‘দেখুন, আমি আপনাদের একজন মেহমান। আমি আপনাদের হানা দিতে আসিনি। আমি এসেছি একটি তথ্য অনুসন্ধান করতে। আপনারা যদি বলতেন, কেন আপনারা আমাদের বনে যান না? কিংবা আমাদের বনের কেউ এখানে এলে আপনারা ক্ষীপ্ত হন কেন?’

শেয়ালের এমন কথাবার্তা শুনে সবাই হাসতে লাগল। মুরগি বলে উঠল, ‘তুমি কী মনে করেছ? আমরা কী তোমার উদ্দেশ্য বুঝি না! তুমি আমাদের জীবন নিতে এসেছ।’ শেয়াল প্রতি উত্তরে বলল, ‘দেখুন, আপনারা আমাকে ভুল বুঝতেছেন। আমি আসলে বনে একা থাকি। কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাই না। বন থেকে শুধু আপনাদের গ্রামের সদস্যদের দেখি। তাই ভাবলাম, যদি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, তাহলে হয়তো ভালোই হবে।’

শেয়ালের এমন সব কথা শুনে হাঁস বলে উঠল, ‘দেখ, আমরা একটা সময় ওই বনে খাবার সংগ্রহ করতে যেতাম। প্রয়োজনে রাতে থাকতাম। কিন্তু তোমাদের লোকজন আমাদের লোকজনকে নির্মমভাবে ধরে ধরে আহার করত। তারপর আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে আর ওই বনে যাব না। এবং ওদের কাউকে এই গ্রামে আসতে দেব না। বেশ হয়ে গেল যাতায়াত বন্ধ। আমরা আমাদের গ্রামে সুখেই আছি। আর ওই বনে যেতে চাই না। তুমি যে উদ্দেশ্য নিয়েই আসো না কেন, এখনই এখান থেকে চলে যাও। নইলে সবাই তোমাকে হত্যা করবে।’

হাঁসের কথাগুলো শোনার পর শেয়াল বলে উঠল, ‘আমি আপনাদের দুঃখটা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আপনারা হয়তো জানেন না যে ওই বনে আর কোনো প্রাণী বাস করে না। শুধু আমিই বাস করি। আমি যতদূর জানি, আমাকে আহত অবস্থায় আমার বাবা-মা এখানে ফেলে রেখে যায়। আমি এখন সুস্থ। কিন্তু বনে একাকিত্বতা আমাকে আবার অসুস্থ করে তুলছে। তাই আমি আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আসলাম। আপনারা যদি আবার আমাদের বনে যেতেন তাহলে হয়তো আমি আর একাকিত্ব অনুভব করতাম না।’

শেয়ালের কথাগুলো শুনে গ্রামের সবাই একটু বিস্মিত হলো। কেন বনে কেউ নেই তা নিয়ে সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। অবশেষে গরু বলল, ‘বনে কেউ নেই, এই কারণে যে বনে বাস্তুসংস্থান হচ্ছে না। হয়তো খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট হয়ে গেছে। যার জন্য সব প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে সব বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হতে থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে না। আমাদের জীবনযাপন করাও কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই শেয়ালের কথায় আমাদের রাজি হওয়া দরকার।’

সবাই গরুর কথাগুলো বুঝতে চেষ্টা করল। তারপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে এখন থেকে সবাই আগের মতো বনে খাদ্য আহরণে যাব। আমাদের কেউ মারা গেলে শেয়ালকে দিয়ে আসব। এতে আমাদের লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আর পরিবেশ নষ্ট হবে না। আমরা সবাই সুস্থ থাকব। অতঃপর সবাই শেয়ালকে তাদের মেহমান হিসেবে সাদরে গ্রহণ করল।

এভাবে কিছুদিনের মধ্যে বন ও গ্রামের মধ্যে ক্রমেই যাতায়াত বাড়তে থাকল। গ্রামের সবাই এখন ওই বনে খাবার সংগ্রহ করতে যায়। শেয়ালও আর কাউকে হামলা দেয় না। একাকিত্বতা অনুভব করে না। বরং আগের থেকে এখন সে ভালো বোধ করে। কারণ পশুপাখিদের গ্রামে কেউ মারা গেলে শেয়ালকে ভক্ষণ করতে দিয়ে যায়। সে খায় এবং আনন্দ পায়। এভাবে শেয়ালের সহনশীল আচরণের কারণে বনে ও গ্রামের মধ্যে এক প্রকার মেলবন্ধন হতে থাকে। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist