এস এম নূরনবী সোহাগ
শিয়ালের বন্ধু বনমোরগ
শিয়াল তার বাচ্চা দুটো নিয়ে দুই দিন ধরে ক্ষুধার্ত আছে। শীতের প্রকোপে তারা একদম গুহা থেকে বের হয়নি। আজ প্রচ- ক্ষুধার কারণে গুহার ভেতরে আর চুপটি করে বসে থাকতে পারল না শিয়ালটি। ওদিকে বাচ্চা দুটোও খুব ছটফট করছে ক্ষুধার কারণে। শিয়াল তাই শীতকে উপেক্ষা করে এদিক-সেদিক খাবার সন্ধান করতে লাগল। কিন্তু গুহার আশপাশে কোনো খাবারের সন্ধান পাওয়া গেল না। শিয়ালের গুহা থেকে অনেক দূরে একটি গভীর বন রয়েছে যেখানে গেলে অন্তত কোনো খাবারের খোঁজ ঠিক পাওয়া যেত। কিন্তু সে বনে যাওয়া তো অনেক সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এ ছাড়া আর কিছু করারও নেই শিয়ালের। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই শিয়াল তার বাচ্চা দুটো নিয়ে বনের উদ্দেশে রওনা হল। শীতের বিকেল খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায় তাই শিয়ালটি একটু দ্রুত পায়ে হাঁটল বনের দিকে পিছু পিছু বাচ্চা দুটোও হাঁটতে লাগল। খাবার সন্ধান করে আবার সন্ধ্যার মধ্যে গুহায় ফিরতে হবে। শিয়ালটি যখন বনের কাছে এসে পৌঁছাল তখন শুনতে পেল বনের মধ্য অনেক পাখি কিচিরমিচির করছে। শিয়াল একসঙ্গে এত পাখির শোরগোল শুনতে যেন আশার আলো দেখতে পেল। শিয়াল অনেকটা সাবধানী পায়ে বনের মধ্য প্রবেশ করল। বাচ্চা দুটো শিয়ালকে অনুসরণ করল। বনের ভেতর পর্যাপ্ত আলো না থাকায় অনেকটা অন্ধকার হয়ে আছে। শিয়ালটি শিকারের জন্য এক জায়গায় ওত পেতে বসল তার বাচ্চাদুটো নিয়ে। ওদিকে সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে। দ্রুত একটা শিকার না পেলে বাচ্চাদুটো নিয়ে অন্ধকারে গুহায় ফেরা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। এমনটা ভাবতে ভাবতে শিয়াল হঠাৎ একটি বনমোরগ দেখতে পেল। ভীষণ রকম কৌশল আয়ত্ত করে শিয়াল ক্রমশে বনমোরগটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। পরিস্থিতি টের পেয়ে বনমোরগটি ছুটতে লাগল দ্রুত বেগে। পিছু পিছু শিয়ালও দৌড় শুরু করল। অনেক পথ অতিক্রম হলো কিন্তু বনমোরগ শিকার হলো না। শিয়ালটি এমন সময় খেয়াল করল তার সঙ্গে শুধু একটি বাচ্চা আছে। শিয়াল পেরেশানি হয়ে অন্য বাচ্চাটি খুঁজতে লাগল কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না। শিয়াল নিজেকে এই বলে সান্ত¦না দিল যে বাচ্চাটি হয়তো আমায় খুঁজে না পেয়ে গুহায় ফেরত গেছে। শিয়াল তাই দ্রুত বেগে গুহার দিকে ছুটে এলো। কিন্তু একি! এখানেও তো বাচ্চাটি নেই। শিয়াল খুব ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল। বাচ্চার দুঃখে দুঃখী হয়ে কাঁদতে লাগল। এমতাবস্থায় গুহার বাইরে একটি বনমোরগের কণ্ঠ শুনতে পেল। অনেকটা তড়িগড়ি করে শিয়াল গুহার বাইরে বেরিয়ে এলো। শিয়াল দেখল বনমোরগের সঙ্গে তার অন্য বাচ্চাটি দাঁড়িয়ে আছে। বনমোরগটি শিয়ালকে বললÑ‘তোমার বাচ্চাটি বনের ভেতর হারিয়ে গিয়েছিল। সে অন্ধকারে পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। আমার খুব মায়া হলো তার প্রতি। তাই সঙ্গে করে তোমার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি।’ বনমোরগের এই সহানুভূতি দেখে শিয়াল খুব আশ্চর্য হলো। শিয়াল বনমোরগকে কৃতজ্ঞতা জানাল। তীব্র ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও শিয়ালটি আর বনমোরগকে শিকার করতে চাইল না।
"