আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনকে মোকাবিলায় ভারতকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে পৃথিবীর দুই প্রান্তে স্থিতিশীলতার দুটি খুঁটি বলে আখ্যায়িত করে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লিকে একজোট হয়ে কাজ করার প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এই আহ্বান জানান।
রেক্স টিলারসন জানান, চীনকে মোকাবিলায় ওবামা ও বুশ প্রশাসন যে সতর্ক এবং কৌশলী নীতি অবলম্বন করেছিল তা থেকে বেরিয়ে এসেছে ট্রাম্পের আমেরিকা এবং তারা চীনকে মোকাবিলায় ভারতকেও পাশে পেতে চান।
তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই চীনের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। কিন্তু চীন আধিপত্যবাদী আচরণ করলে আমরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। অর্থাৎ চীন যদি তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদেরকে অসুবিধায় বা প্রতিকূল অবস্থায় ঠেলে দিতে চায় তাহলে আমরা তা মেনে নেব না।’
ওয়াশিংটনের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সঙ্গে দেওয়া এক প্রকাশ্য বক্তব্যে রেক্স টিলারসন বলেন, ‘এই অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সময়ে বিশ্বমঞ্চে ভারতের দরকার একজন নির্ভরযোগ্য অংশীদার। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই-বিশ্বে স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় আমরা উভয়েই যেহেতু একই মূল্যবোধ ও স্বপ্ন লালন করি সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের সেই নির্ভরযোগ্য পার্টনার।’
নজিরবিহীনভাবে চীনের সমালোচনা করে রেক্স টিলারসন বলেন, চীন নিজের অব্যাহত অগ্রগতিতে প্রায়ই আন্তর্জাতিক, নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছে। অথচ ভারত সব সময়ই একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্কের ভেতরে থেকে কাজ করেছে এবং অন্য জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করছে।
‘দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উসকানিমূলক কর্মকান্ড সরাসরি আন্তর্জাতিক আইন এবং রীতিনীতিকে বুড়ো আঙুল প্রদর্শন করেছে। অথচ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যেসবের প্রতি অনুগত থাকছে। তিনি এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কর্তৃত্ব খর্ব করে চীন যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে তার মোকাবিলায় নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলেই মন্তব্য করেন।
রেক্স টিলারসনের এই বক্তব্যের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে হোয়াইট হাউসে হিন্দুদের দিওয়ালি উৎসবের আয়োজন করা হয় এবং ভারত, ভারতীয়-আমেরিকান, হিন্দু-আমেরিকান এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে স্পষ্টতই ভারতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য মার্কিন প্রশাসন যে এখন পুরোপুরি ভারতের সঙ্গেই গাঁটছড়া বেঁধেছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে এই অঞ্চলের নতুন নামকরণের মধ্যেও। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মার্কিন প্রশাসন এখন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বলেই ডাকছে।
টিলারসন বলেন, ‘বিশ্বের ভরকেন্দ্র এখন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা এবং একটি মুক্ত ও স্বাধীন স্থাপত্যের স্বপ্ন দেখে, সুতরাং তাদেরকে অবশ্যই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পূর্ব ও পশ্চিম বাতিঘর হিসেবে কাজ করতে হবে। যাতে ওই অঞ্চলে সবার শন্তি ও সমৃদ্ধি বজায় থাকে। ’
‘আমাদেরকে অবশ্যই ওই অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করেতে হবে যাতে সেখানে শান্তি, স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি বজায় থাকে এবং ওই অঞ্চল বিশৃঙ্খলা, সংঘাত ও আগ্রাসী অর্থনীতির কবলে না পড়ে। ’এ ছাড়া ক্রমাগত চীনের মক্কেল রাষ্ট্র হয়ে ওঠা পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও হুশিয়ারি দেন তিনি। যেসব রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদকে একটি নীতিগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা হবে। আর প্রতিটি সভ্য রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একসঙ্গেই ওই অঞ্চলে এই লড়াই করবে।’ টাইমস অব ইন্ডিয়া।
"