আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৩ আগস্ট, ২০২০

বৈরুতকে গুঁড়িয়ে দেওয়া রাসায়নিকের মালিক কে?

বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কেন এতদিন বন্দরের গুদামে পড়েছিল? কে সেগুলোর মালিক? কেন কোনও দাবিদার নেই? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। বিস্ফোরণের পর এক সপ্তাহের মাথায়ও কেউ ওই রাসায়নিকের মালিকানা দাবি করেনি বা কাগজপত্র ঘেঁটেও মালিকের কোনো সন্ধান মেলেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করা গেলে অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। তাই স্পষ্টভাবে মালিকের পরিচয় জানা জরুরি। ২০১৪ সালে মলদোভার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ ‘রোসুস’ ওই রাসায়নিক নিয়ে বৈরুত বন্দরে ভেড়ে। নৌপথে পণ্য পরিবহনের নিয়মানুযায়ী এভাবে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মত মারাত্মক দাহ্য রাসায়নিক পরিবহন অত্যন্ত বিপজ্জনক।

কে বা কারা এতটা ঝুঁকি নিয়ে বিপুল পরিমাণ ওই রাসায়নিক এক দেশে থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছিল তা খুঁজে বের করতে রয়টার্স অন্তত ১০টি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং নথিপত্র ঘেঁটে প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। লেবাননের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা হাসান হাসবানি বলেন, ‘পণ্যগুলো এক দেশ থেকে আরেক দেশে পরিবহন করা হচ্ছিল, তৃতীয় আরেকটি দেশে গিয়ে সেগুলো আটকে যায় এবং কেউ সেগুলোর মালিক নয়! কেন সেগুলোর যাত্রা এখানে শেষ হয়েছিল। এই চালানের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তারা সবাই কার্গোটির প্রকৃত মালিক কে তা তারা জানেন না বলে জানিয়েছেন এবং এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি পণ্যবাহী জাহাজটির ক্যাপ্টেন, জার্জিয়ার সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যারা কার্গোটি পাঠিয়েছিল এবং আফ্রিকার যে ফার্ম ওই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল তারা কেউই প্রকৃত মালিককে চেনেন না বলে দাবি করেছেন। আফ্রিকার ফার্মটির দাবি, তারা ক্রয়াদেশ দিলেও কখনওই ওই রাসায়নিকের মূল্য পরিশোধ করেনি। শিপিংয়ের’ নথি অনুযায়ী, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জর্জিয়া থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের চালানটি পণ্যবাহী জাহাজ ‘রোসুসে’ তোলা হয়। রাসায়নিকের চালানটি মোজাম্বিকের বিস্ফোরক উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজটি ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার আগেই তাদের কাছে একটি নির্দেশ আসে বলে জানান রোসুসের ক্যাপ্টেন এবং দুই ক্রু। রাশিয়ার ব্যবসায়ী ইগোর গ্রেচুশ্কিন তাদের ওই নির্দেশ দেন, যাকে তারা জাহাজটির মালিক বলে চিনতেন। ওই নির্দেশে বলা হয়, বাড়তি কার্গো নেওয়ার জন্য তাদেরকে বৈরুত বন্দরে থামতে হবে। যাত্রাসূচিতে যেটা বলা ছিল না। ২০১৩ সালের নভেম্বরে বৈরুত বন্দরে পৌঁছায় রোসুস। কিন্তু ‘পোর্ট ফি’ দিতে না পারায় সেটি আইনি জটিলতার মুখে পড়ে। জাহাজটির দশাও বেহাল ছিল, সেটিতে ফুটো ধরা পড়েছিল। তারপর রোসুস আর কখনওই বৈরুত বন্দর ছাড়তে পারেনি। বৈরুত বন্দরের নথিপত্র অনুযায়ী, জাহাজটির বিমা কোম্পানি পানামা ভিত্তিক একটি ফার্মকে জাহাজটির আইনি মালিক দেখিয়ে সেটিকে বন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখার জন্য মামলা করে।

সময়ে গড়াতে থাকে। এক সময় রাসায়নিক বোঝাই কার্গো জাহাজ থেকে নামিয়ে বন্দরে ঘাটের কাছেই একটি গুদামে রাখা হয়। আর বাজেয়াপ্ত খালি জাহাজটি ২০১৮ সাল থেকে যেখানে নোঙর করা ছিল সেখানেই সম্ভবত ডুবে গেছে। বৈরুতের যে আইনি ফার্ম বিমা কোম্পানির হয়ে মামলা করেছিল, রয়টার্স থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। গ্রেচুশ্কিনের সঙ্গেও যোগযোগ করা যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close