আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০২ জুন, ২০২০

জর্জ ফ্লয়েড হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ সহিংসতা ৪০ শহরে কারফিউ

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সহিংসতার মুখে অন্তত ৪০টি শহরে কারফিউ জারি হয়েছে। তবে এ কারফি আমলে নেয়নি বিক্ষোভকারীরা। বিবিসি জানিয়েছে, নিউইয়র্ক, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলসে রোববার রাতে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের দমনের চেষ্টা করে। বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং দোকান লুটের ঘটনা ঘটে।

গত সোমবার মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিসে জালিয়াতির অভিযোগে ৪৬ বছর বয়সি কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে রাখার পর শ্বাসরোধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার মোবাইল ফুটেজ সামনে আসার পরই জড়িত চার পুলিশকে বরখাস্ত করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে জরুরি অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা রিজার্ভ সামরিক বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড রোববার জানিয়েছে, রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১৫টি রাজ্যে তাদের পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভাকারীরা আবারও হোয়াইট হাউসের্ সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়, রাস্তায় আগুন জ্বালায় ও নিরাপত্তা কর্মীদের দিকে পাথর ছোড়ে। এ দিন পুলিশের গাড়ি ভাংচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। দাঙ্গা পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে ও ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যায়। যে শহরে ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়েছে সেই মিনিয়াপোলিসের গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কে রাস্তায় বসানো ব্যারিকেড ভেঙে দ্রুতগামী একটি লরি একদল বিক্ষোভকারী ভিতর দিয়ে চালিয়ে নেওয়ার পর এর চালককে গ্রেফতার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগামী লরি আসতে দেখে বিক্ষোভকারীরা দুই পাশে ছিটকে যায়, এক পর্যায়ে লরিটি থেমে গেলে বহু লোক লরিটিকে ঘিরে ধরে চালককে তার আসন থেকে নামিয়ে এনে মারধর করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানিয়েছেন, লরি চালককে টেনে নামিয়ে মারধর করে বিক্ষোভাকারীরা, এরপর পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজতে নেয়। রয়টার্সের একটি ছবিতে লরি চালককে খালি গায়ে মুখ ঢেকে পুলিশের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ আঘাত পায়নি। সামান্য আহত লরি চালককে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই লরি চালকের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার নয় জানিয়ে মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ বলেন, ‘শোকাবহ কিছু ঘটেনি এবং অনেক লোকের মৃত্যু হয়নি, সত্যিই আশ্চর্যজনক।’ ফিলাডেলফিয়ার স্থানীয় টেলিভিশনে স্টেশনগুলোর সম্প্রচারিত ফুটেজে লোকজনকে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করতে ও অন্তত একটি দোকান লুট করতে দেখা গেছে। এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ফিলাডেলফিয়াতে আইনশৃঙ্খলা (ফিরিয়ে আন), এখনই! তারা দোকানপাট লুট করছে। আমাদের মহান ন্যাশনাল গার্ডদের ডাক। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মোনিকাতেও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

কলোরাডোর রাজধানী ডেনভারে কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে। তারা রাস্তায় ওপর হয়ে শুয়ে হাত পিছমোড়া করে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে সেøাগান দেয়। আটলান্টা, বস্টন, মিয়ামি ও ওকলাহোমা সিটিতেও বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করায় রোববার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এক সপ্তাহ আগে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ তাদের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেওয়া ৪৪ বছর বয়সি ডেরেক শভিনও আছেন। গত শুক্রবার গ্রেফতার করার পর শভিনের বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close