আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ মে, ২০২০

করোনার মোকাবিলা

যে পদক্ষেপ নিয়ে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম

৯ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনাম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে চীনের দীর্ঘ স্থল সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০-এর কিছু বেশি। মৃতের সংখ্যা শূন্য। সেখানে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর প্রায় একমাস কেটে গেছে। এরই মধ্যে সবকিছু খুলতে শুরু করেছে। বিবিসি নিউজের অ্যানা জোন্স লিখেছেন কীভাবে ‘বাড়তি’ পদক্ষেপ নিয়ে ভাইরাস মোকাবিলায় সফল হয়েছে ভিয়েতনাম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য দেশে এখনো সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক মাত্রায় বাড়ছে। কিন্তু ভিয়েতনাম গোড়ার দিকে সংক্রমণের হার যখন কম ছিল, তখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। তবে এর জন্য অনেক শ্রম ব্যয় করতে হয়েছে। মূল্যও দিতে হয়েছে। যে ধরনের কঠোর পদক্ষেপ তারা নিয়েছিল, তার নেতিবাচক দিকও ছিল।

সবচেয়ে বড় কথা হলো বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ভিয়েতনামের এই সাফল্য থেকে অন্য দেশগুলোর শিক্ষা নেওয়ার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। অন্য দেশগুলো সেই সুযোগ মিস করে গেছে। এখন এসব দেশে সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে এবং তা চূড়ায় পৌঁছনোর পথে রয়েছে।

‘যখন এ ধরনের অজানা ও সম্ভাব্য বিপজ্জনক একটা জীবাণুর বিরুদ্ধে আপনি লড়াইয়ে নেমেছেন, তখন বাড়াবাড়ি প্রতিক্রিয়া অনেক ভালো।’ এমনটাই মনে করেন ভিয়েতনামে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য গবেষণাবিষয়ক অংশীদার সংস্থার ড. টড পোলাক। তিনি কাজ করেন হ্যানয়ে। এই ভাইরাস স্বল্প পরিসরে ছড়ালেও দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে; এটা আঁচ করতে পেরে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ গোড়াতেই ভাইরাস ঠেকাতে ব্যাপক পরিসরে উদ্যোগ নেয়।

জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনেরও ভাইরাসটি শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার ‘চরম পর্যায়ে পদক্ষেপ’ নেওয়া শুরু করে দেয়। রহস্যময় নতুন এই নিউমোনিয়া রোগে তখন উহানে মারা গেছে মাত্র দুজন। সেই পর্যায়ে তাদের প্রস্তুতির শুরু।

জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে সেখানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়, যখন উহান থেকে এক ব্যক্তি তার ছেলেকে দেখতে হো চি মিন সিটিতে যান। ভিয়েতনাম তখন থেকেই শুরু করে দেয় তার জরুরি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।

হো চি মিন সিটিতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক গাই থোয়েটস ভিয়েতনাম সরকারের সংক্রামক ব্যাধি কর্মসূচির সঙ্গেও যুক্ত। তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনাম এত দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যা তখন মনে হয়েছিল বেশি বাড়াবাড়ি। কিন্তু পরে দেখা গেছে সেটা সুবিবেচনার কাজই ছিল।

ভিয়েতনাম এমন সব পদক্ষেপ নিতে শুরু করে যা নিতে অন্যান্য দেশের সময় লেগে যাবে কয়েক মাস। তারা ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনে, চীনের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় পর্যবেক্ষণ কঠোর করে। কিছুদিনের মধ্যে সীমান্ত পথে চলাচল পুরো বন্ধ করে দেয়। সীমান্ত এবং অন্যান্য নাজুক জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাড়িয়ে দেয়।

জানুয়ারির শেষে চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে স্কুলগুলো বন্ধ ছিল। তখনই স্কুলের ছুটি মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ সংক্রমিত কারো সংস্পর্শে কারা কারা এসেছে তা খুঁজে বের করতে ব্যাপক জনশক্তি নিয়োগ করা হয়। প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যবহার করা হয়।

অধ্যাপক থোয়েটস বলেন, ‘ভিয়েতনামকে আগেও বহু রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করতে হয়েছে।’ যেমন ২০০৩ সালে সার্স থেকে শুরু করে ২০১০-এর এভিয়ান ফ্লু, এছাড়াও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া হাম ও ডেঙ্গু।

তিনি বলেন, ‘সরকার এবং দেশটির মানুষ সংক্রামক রোগ মোকাবিলায় অনেক অনেক বেশি অভ্যস্ত। ধনী দেশগুলোর চেয়ে এ ব্যাপারে তারা সম্ভবত অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তারা জানে কীভাবে এগুলো মোকাবিলা করতে হয়।’

মার্চ মাসের মাঝামাঝি এসে ভিয়েতনাম দেশটিতে ঢোকা প্রত্যেক মানুষকে এবং দেশের ভেতর পজিটিভ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়। এর খরচের বেশির ভাগটাই বহন করে সরকার। যদিও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা সেভাবে বিলাসবহুল ছিল না। ভিয়েতনামে বাড়ি এমন একজন নারী অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে যান সে সময়। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, ভিয়েতনামে থাকাই বেশি নিরাপদ হবে। বিবিসির ভিয়েতনাম বিভাগকে ওই নারী বলেছিলেন যে, প্রথম রাতে তাদের শোবার জন্য শুধু একটা মাদুর দেওয়া হয়েছিল। কোনো বালিশ বা কম্বল ছিল না। একটা বড় ঘর যেখানে খুবই গরম ছিল সেখানে দেওয়া হয়েছিল মাত্র একটা পাখা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close