আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

‘৭ বছর ধরে রোজ মরছি আমরা’

২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির চলন্ত বাসে প্যারামেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের পর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল ভারত। ওই ঘটনার পর জনরোষের মুখে এ-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনে বাধ্য হয় দিল্লি। কিন্তু থামেনি বীভৎসতা। গত বুধবার হায়দরাবাদে ২৬ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। গত শুক্রবার ভোরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত চার খুনি-ধর্ষককে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে নির্ভয়ার বাবা বদ্রিনাথ সিংহ বলেন, ‘আমি এই এনকাউন্টারে খুশি। কেননা আমাদের মেয়ের ধর্ষকরা এখনো জীবিত। আমরা রোজ মরছি। তেলেঙ্গানার মেয়েটির বাবা-মাকে অন্তত এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না।’

গত ২৭ নভেম্বর তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদে পাওয়া যায় ২৭ বছরের নারী পশু চিকিৎসকের পুড়ে যাওয়া লাশ। তদন্ত শেষে পুলিশ জানায়, চার ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে ওই চিকিৎসককে। এরপর খুন করে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে লাশ। ২৯ নভেম্বর অভিযুক্তদের সবাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শুক্রবার পুলিশ জানায়, ‘তদন্তের স্বার্থে’ ওই নারীর লাশ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেখানে সকালে অভিযুক্তদের নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থল সাদনগর মহাসড়কে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হয় আসামিরা।

অন্যদিকে বহুল আলোচিত নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকা-ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি এখনো ভারতের কারাগারে বন্দি। ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতায় অসন্তুষ্ট নির্ভয়ার মা-বাবা তাই হায়দরাবাদের ধর্ষক-খুনিদের মেরে ফেলার ঘটনায় খুবই খুশি।

নির্ভয়ার মা আশা দেবী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সাত বছর ধরে আমি অপেক্ষা করছি। এক আদালত থেকে অন্য আদালতে যাচ্ছি। আর্জি জানিয়েছি ওদের ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য। কিন্তু আদালত জানিয়েছেন, ওদেরও

মানবাধিকার রয়েছে। এভাবে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেটাই আজকের দিনে দরকার। তেলেঙ্গানা পুলিশের আজকের পদক্ষেপে (ধর্ষকদের মেরে ফেলা) কিছু পরিবর্তন হবে। আমি খুব খুশি।’

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ওরা শাস্তি পাওয়ায় আমি খুব খুশি। পুলিশ একটা উদাহরণ তৈরি করেছে; খুব ভালো কাজ করেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়। অপরাধীদের উচিত পুলিশকে ভয় পাওয়া। আজকের দিনে অপরাধীদের আমরা এ ধরনের শাস্তি চাই।’

গত বুধবার নিহত ওই তরুণীর বাবা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘১০ দিন হলো আমার মেয়ে মারা গিয়েছে। আমি পুলিশ ও সরকারকে এজন্য (ধর্ষক-খুনিদের মেরে ফেলা) কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার মেয়ের আত্মা এবার নিশ্চয়ই শান্তি পাবে।’

শুধু নির্ভয়ার মা-বাবাই নয় ধর্ষক-খুনিদের মেরে ফেলার ঘটনায় মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল আর বাজি পুড়িয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েছে হায়দরাবাদের মানুষ। গত শুক্রবার অভিযুক্তরা পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পুলিশি পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সেøাগান দেয় অন্তত ২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ওই নারীর বাড়ির পাশেও সমবেত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন অনেকে। অনলাইনেও চলছে পুলিশের প্রশংসা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারতের বিচার ব্যবস্থায় রায় পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় হায়দরাবাদের ওই ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যদিও ব্যাপারটা একেবারেই অপেশাদার, তবুও আমি মনে করি এটাই প্রত্যাশিত ছিল। আমি জানতাম এমন কিছুই ঘটতে চলেছে।

উল্টো মতও অবশ্য শোনা গেছে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে বিরোধী দল কংগ্রেসের এমপি কার্তি চিদাম্বর বলেছেন, হত্যা আমাদের ব্যবস্থায় একটি কালো দাগ। ধর্ষণ ঘৃণ্য অপরাধ। আইনের অধীনে এর কড়া বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু ‘এনকাউন্টার’ করে কাউকে মেরে ফেলাটাও নিন্দনীয়। আমি বুঝতে পারছি দ্রুত বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথাটা। কিন্তু এটা কোনো পথ নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close