আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

তুর্কি অভিযান ঠেকাতে সিরীয় বাহিনীর সঙ্গে কুর্দি সমঝোতা

সিরীয় কুর্দিরা জানিয়েছে, তুরস্কের সামরিক অভিযান মোকাবিলায় সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা অনুসারে সিরিয়ার সরকার দেশটির উত্তরাঞ্চলে সেনা পাঠাবে তুরস্কের অভিযান ঠেকাতে। গতকাল সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

এর আগে সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে সরকারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অবশিষ্ট সেনাদের সিরিয়ার ওই অঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের পরপরই কুর্দিদের সঙ্গে সিরীয় সেনাবাহিনীর সমঝোতার কথা জানা গেল। গত সপ্তাহে শুরু হওয়া তুরস্কের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হলো সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে কুর্দি বাহিনীকে সরে যেতে বাধ্য করা।

সিরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পুরো সপ্তাহজুড়ে ব্যাপক বোমা বর্ষণ হয়েছে। সীমান্তের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তুরস্ক। যুদ্ধে উভয়পক্ষের শতাধিক যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

এদিকে, গত রোববার কুর্দি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তাদের বন্দি করা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিদেশি সদস্যদের অন্তত ৮০০ জন আত্মীয় আইন ইসা বন্দিশিবির থেকে পালিয়েছে।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযান ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমালোচনা করছে। সিরিয়ায় আইএসবিরোধী লড়াইয়ে পশ্চিমাদের প্রধান মিত্র ছিল এসডিএফ। কিন্তু তুরস্ক কুর্দিদের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের শাখা মনে করে এবং সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার গভীরে কুর্দিদের সরিয়ে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। একই সঙ্গে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের ওই সেফজোনে প্রত্যাবাসন করতে চায়। সমালোচকরা বলছেন, এই অভিযানের ফলে কুর্দি জনগণ জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হতে পারেন।

উত্তর সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবে সিরিয়ার সেনাবাহিনী পুরো সীমান্তে মোতায়েন করা হবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরীয় সেনাবাহিনী মোতায়েনের ফলে তুরস্কের সেনাবাহিনী ও তাদের ভাড়াটে যোদ্ধাদের আগ্রাসন ও দখলকৃত এলাকা উদ্ধারে এসডিএফকে সহযোগিতা করবে। কুর্দিরা আরো জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে তুর্কি সেনাবাহিনীর দখলকৃত আফরিনের মতো শহরও মুক্ত করার উপায় বের হবে।

২০১৮ সালে দুই মাসের অভিযানের পর তুরস্কের সেনাবাহিনী ও তাদের সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীরা আফরিন থেকে কুর্দিদের পিছু হটতে বাধ্য করে এবং শহরটির দখল নেয়।

এই সমঝোতা কুর্দিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওই এলাকায় দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সমর্থন ও সহায়তা প্রত্যাহারের পর তারা সিরিয়া সরকারের সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ হলো। তবে সিরিয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

তবে এসডিএফ প্রধান মাজলু আবদি স্বীকার করেছেন, আসাদ সরকার ও তার রুশ মিত্রদের সঙ্গে ‘সমঝোতা হবে বেদনাদায়ক’। ফরেন পলিসি সাময়িকীতে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, আমরা তাদের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। সত্যি কথা হলো, আমাদের পক্ষে কাউকেই বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু যদি আমাদের সমঝোতা ও জনগণের গণহত্যাকে বেঁচে নিতে হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা জনগণকে রক্ষার পথই বেছে নেব।

গত সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে দেশটির মোতায়েনকৃত সেনাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে তুরস্কের সামরিক অভিযানের পথ উন্মুক্ত হয়। আর এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় সিরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাল কুর্দিরা। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাটিকে এসডিএফ বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।

তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভেতরের দিকে প্রবেশের চেষ্টা করছে। গত রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান বলেছেন, তাদের সেনারা ১০৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এই এলাকার মধ্যে ২১টি গ্রাম রয়েছে।

সাংবাদিকদের এরদোয়ান জানিয়েছেন, সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাস আল-আইন তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদিও এসডিএফ দাবি করেছে, তুর্কি বাহিনীকে তারা শহরের উপকণ্ঠে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরো জানিয়েছেন, সীমান্তের ১২০ কিলোমিটার ভেতরে তাল আবিয়াদ শহর দখল করেছে তুরস্কের সেনারা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যালোচনাকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তুর্কিরা ওই এলাকার প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাস আল-আইন ও তাল আবিয়াদ শহর এসডিএফবিরোধী তুরস্কের অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

তুরস্ক আরো জানিয়েছে, তাদের মিত্ররা সিরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যা সীমান্তের ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত।

তুরস্কের সামরিক অভিযানে সীমান্তের উভয় পাশে বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অর্ধশতাধিক বেসামরিক নাগরিক ও শতাধিক কুর্দি যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close