আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ইরানের কর্মকান্ড নেতিবাচক তবে আলোচনা সম্ভব : ফ্রান্স

২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে ইরানের আরো সরে আসার ঘোষণার সমালোচনা করেছে প্যারিস। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-ইয়ভেস লে ড্রিয়ান বলেছেন, ‘তারা (ইরান) যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেগুলো নেতিবাচক তবে তা চূড়ান্ত নয়। তারা চুক্তিতে ফিরে আসতে পারে এবং এখনো আলোচনার পথ খোলা আছে।’ গত রোববার ফ্রান্সের রেডিও স্টেশন ইউরোপ-১ এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজ দেশের এমন মনোভাবের কথা জানান ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়কমন্ত্রী জিন-ইয়ভেস লে ড্রিয়ান। তিনি বলেন, পারমাণবিক বোমা অর্জন থেকে মাত্র কয়েক মাস দূরে আছে ইরান।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরানও তার প্রতিশ্রুতি থেকে আংশিকভাবে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশটির তেল নেটওয়ার্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। ওই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইউরোপ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা না নিলে চুক্তি থেকেই বেরিয়ে যাওয়ারও হুশিয়ারি দেয় তেহরান। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিকে পূর্ণ চুক্তিতে ফেরানোর বিষয়ে সরাসরি আলোচনায় বসাতে চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়কমন্ত্রী।

২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন (পি-ফাইভ) ও জার্মানি (ওয়ান) ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নভেম্বরে থেকে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে যাচ্ছে তেহরান। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো প্রতিশ্রুতি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এবারের ঘোষণায় দেশটির পারমাণবিক গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার ওপর আরোপিত সব ধরনের সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই ঘোষণার পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড সংশ্লিষ্ট তেল পরিবহন নেটওয়ার্কের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় ফ্রান্সসহ অনেক দেশ ইরানকে ওই পরমাণু চুক্তি সম্পূর্ণভাবে মেনে চলার আহ্বান জানায়।

৭ সেপ্টেম্বর ইরান নতুন এবং আরো শক্তিশালী ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধ পারমাণবিক চুল্লি বসানোর ঘোষণা দিয়েছে। যা আগামী মাসগুলোতে ফিশাইল (নিউক্লীয় বিভাজন) উপাদানের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল পরিবহন নেটওয়ার্কের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর তেহরান জানিয়েছিল, গত শুক্রবারের মধ্যে ইউরোপ এর কোনো সমাধান না দিতে পারলে ব্যবস্থা নেবে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় এই পদক্ষেপ নেয় ইরান। তারা এখন যদি ব্যাপক সংখ্যক নতুন পারমাণবিক চুল্লি নিয়ে অপারশনে যায় তবে তা ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বা যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনাÑ জেসিপিওএর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।

গত নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন। এতে মারাত্মক সংকটে পড়েছে ইরানের অর্থনীতি। এজন্য তাদের বাণিজ্যে সহায়তার জন্য ইউরোপকে চাপ দিচ্ছে দেশটি। তেহরানের দাবি, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ইউরোপ যদি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে জেসিপিও-এ চুক্তি থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাবে ইরান।

ইরানের সংবাদমাধ্যম রেডিও ফার্দারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ খুঁজে বের করতে ইরানকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের আমানতের প্রস্তাব দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে সংবাদমাধ্যমটির এ খবরের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close