আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৬ আগস্ট, ২০১৯

রোহিঙ্গা নিধনে দায়ীদের বিচারে চাপ অব্যাহত রয়েছে : যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের দুই বছর পর আবারও দোষীদের শাস্তির আহ্বান জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত শনিবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, তারা অন্যায়কারীদের বিচারের আওতায় এনে সহিংসতার শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই বছরের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার হরণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে গঠিত জাতিসংঘের এক অনুসন্ধানী দল জানায়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারীরা ধারাবাহিকভাবে সে দেশের সেনাবাহিনীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সেইসব ভয়াবহ যৌন নিপীড়নের ঘটনা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয় ওই তদন্ত দল।

রোহিঙ্গা নিধনের দুই বছরপূর্তিতে দেওয়া বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দফতর সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজনৈতিক সংলাপে বসে মানবিক সহায়তা সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়। দফতরের মুখপাত্র মর্গান অর্তেগাস বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর দায়বদ্ধতার অভাব এবং তাদের ওপর বেসামরিক নজরদারির এখতিয়ার না থাকায় এখনো রাখাইনে নিপীড়ন চলছে, একই ঘটনা কাচিন, শান কিংবা মিয়ানমারের অন্যান্য রাজ্যেও।’

৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, অন্যদেরও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো উচিত। ২০১৭ সালের সহিংসতা পর এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

অর্তেগাস বলেন, ‘মিয়ানমারকে শক্তি, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিচার ও দায়বদ্ধতা অপরিহার্য। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানাই।’

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার উদ্দেশ্যে অভিযান চালানো হয়েছিল। এখনো রাখাইনে তাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।

এরই মধ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি মেনে একে গণহত্যা বলেনি তারা। এই আখ্যা দিলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেত। তবে তারা এখনো একে জাতিগত নিধন আখ্যা দিচ্ছে যার প্রভাব গণহত্যার মতো নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা কফি আনান নেতৃত্বধীন কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এটাই রাখাইন রাজ্য এবং যারা পালিয়ে গেছে তাদের জন্য সেরা পথ।

বিবৃতিতে অর্তেগা বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাপ্রত্যাবাসন নিশ্চিতে রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে আমরা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে রাখাইনে আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অবকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি হয়েছে। তবে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন জানিয়েছে, তারা স্যাটেলাইট ছবি পর্যালোচনা করে এমন কোনো আলামত পায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close