আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল
বিশ্বব্যাপী নিন্দা-সমালোচনার মধ্যেও পূর্ব জেরুজালেম উপকণ্ঠে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, ওই বাড়িঘরগুলো অধিকৃত পশ্চিম তীরের সীমানা বেড়ার খুব কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, যা অবৈধ। বাড়িঘরগুলো পূর্ব জেরুজালেমের শেষ প্রান্ত ‘সুর বাহার’ এ অবস্থিত। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, তারা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই বাড়িঘর নির্মাণ করেছিলেন। বরং ইসরায়েল পশ্চিম তীরের ভূমি দখলের পাঁয়তারা করছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে বলা হয়, নির্মাণ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে সুর বাহারে বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। সুর বাহারের সীমানা ঘেঁষা গ্রাম ওয়াদি হুমুসে গত সোমবার ৭০০ ইসরায়েলি পুলিশ ও ২০০ সেনা ওই অভিযানে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। তারা স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার দিকে কয়েকটি এস্কাভেটর নিয়ে অভিযান শুরু করে এবং সেখানে ১০টি বাড়ি ভেঙে ফেলে।
১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। পরে তারা ধীরে ধীরে পূর্ব জেরুজালেমও দখল করা শুরু করে। যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম উভয়ই অধিকৃত ভূমি বলে গণ্য করা হয়। গত সোমবার ঘর হারা ইসমাইল আবাদিয়েহ বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে পথে বসে গেছেন।
ফাদি আল-ওয়াহাশ নামে অন্য একজন সবে তার বাড়ি নির্মাণ শুরু করছিলেন। তার মধ্যেই সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, আমি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, আমি ঠিকঠাক নিয়ম মেনেই বাড়ি নির্মাণ করছি। ‘নিষ্ঠুর এই আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতাইয়েহ।
‘দীর্ঘদিন ধরেই জেরুজালেমের বাসিন্দাদের তাদের নিজ বাড়ি ও জমি থেকে জোর করে হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটিও তারই অংশ। এভাবে জোর করে ভূমি দখল যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।’ যদিও ইসরায়েলের ভাষ্য, ‘অবৈধ ওইসব বসতি তাদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা হুমকি।’ ওয়াদি হুমুস গ্রামের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বাড়িঘরগুলো পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) নিয়ন্ত্রিত ভূমিতে হলেও সেগুলো সীমানা বেড়ার ওপারে ইসরায়েলের দিকে।
২০০০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ নিয়ে ফিলিস্তিনিরা ইন্তিফাদা আন্দোলন শুরু করলে ইসরায়েল তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অংশের ভেতর এবং চারপাশে সীমানা বেড়া নির্মাণ করে। সীমানা বেড়া নির্মাণের পক্ষে ইসরায়েলের যুক্তি ছিল, পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনি হামলাকারীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তারা ওই বেড়া দিয়েছে। আর ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, এই বেড়া ইসরায়েলের অধিকৃত ভূমির দখলে নেওয়ার কৌশল মাত্র।
"