আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৮ জুলাই, ২০১৯

মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে পূর্বপরিকল্পিত রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার প্রায় দুই বছর পর মিয়ানমার সেনাবহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল রাখাইনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে তার দেশের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থাপনায় অগ্নি সংযোগের ব্যাপারে মাইক পম্পেও বলেন, বার্মার যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে; রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে তাদের ভূমিকা ছিল। এমন ভূমিকার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

যাদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তারা হচ্ছেনÑ মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ বা সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং, ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থানও, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং আং এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।

এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ব্যবস্থা নিল যুক্তরাষ্ট্র।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ লাখে।

২০১৯ সালের মে মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানায় দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘ মিশন। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার কোনো ভূমিকাই পালন করেনি। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসম্যান জানান, ‘পরিস্থিতি আগের মতোই আছে।’ জাতিসংঘ মিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে সামরিক বাহিনী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় চাপিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর।

এক বিবৃতিতে মিশনের সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতি বলেন, ‘অতীত থেকে এখনো চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। কে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে তাদের অর্থ প্রবাহ বিচ্ছিন্ন করতে চাই আমরা। যেন তাদের ওপর চাপ তৈরি হয় এবং সহিংসতা কমে যায়।

মিয়ানমারের দাবি, তারা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি। তাদের নিরাপত্তা বাহিনী বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেনি, বরং সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের হামলার জবাব দিয়েছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা মিয়ানমার বাহিনীর এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার নামে মানবাধিকার পরিষদের নতুন গ্রুপের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া স্থাপনে এই গ্রুপটি তৈরি করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close