আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা

ইরানের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন উল্লেখযোগ্য নয় : ইইউ

চার বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির যতটা লঙ্ঘন করেছে ইরান, তা এখনো উল্লেখযোগ্য কিছু নয় এবং চাইলেই বদলানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগারিনি। ২৮ দেশের জোট ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সোমবার তিনি এ কথা বলেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। এদিকে চলমান উত্তেজনা নিয়ে ট্রাম্প, পুতিন ও রুহানির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

‘যেসব পদক্ষেপ তারা নিয়েছে তা উল্টে দিতে এবং চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলার জন্য ইরানের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি,’ বলেন ইইউর এ কর্মকর্তা। পারমাণবিক চুল্লীর জ্বালানি তৈরি করতে চলতি বছরের মে মাস থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়েছে ইরান। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশটি পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে হাঁটছে বলে আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের।

ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বেরিয়ে এসে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরান এ পদক্ষেপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই তেহরান পারমাণবিক চুক্তির কিছু অংশ লঙ্ঘনের এ সিদ্ধান্ত জানায়।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সরিয়ে নেয়। পাশাপাশি ইরানের অর্থনীতি ধসিয়ে দিতে তাদের তেল রফতানি বন্ধেও একের পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ইরান এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার পথ বের করতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর মে থেকে একটি একটি করে নিষেধাজ্ঞার শর্ত অমান্য করা শুরু করে দেশটি। ‘কার্যত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সবই পাল্টানো সম্ভব। আমরা দুঃখিত যে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে,’ বলেছেন ফেদেরিকা মোগারিনি।

এগিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছে ফ্রান্স। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে কথা বলবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সার্বিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট গত সোমবার রাতে বেলগ্রেডে স্বাগতিক দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ট্রাম্প, পুতিন ও রুহানির সঙ্গে তার আসন্ন সংলাপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা যেকোনো সময় যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার কথা জানান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্য-ইভ লু দ্রিয়। এ সময় তিনি তেহরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং একে কেন্দ্র করে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর সমালোচনা করেন।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দুই বাজে সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের উত্তেজনা যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ কারো কাছেই প্রত্যাশিত নয়। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তেজনার মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

২০১৫ সালের জুনে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। পূর্বসূরি ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিকে ‘ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল’ আখ্যা দিয়ে গত বছরের মে মাসে তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বছরের নভেম্বর থেকে তেহরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল শুরু করে ওয়াশিংটন।

এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের কথা মুখে বললেও কার্যত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান। ইউরোপীয় দেশগুলোর ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে এ বছরের মে মাসে চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয় তেহরান। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close